ইস্তাম্বুলে পুনর্নির্বাচনের ঘোষণায় নিন্দার ঝড়

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও একরেম ইমামগ্লু। ছবি: রয়টার্স
রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান ও একরেম ইমামগ্লু। ছবি: রয়টার্স

তুরস্কের ইস্তাম্বুলে পুনর্নির্বাচনের ঘোষণায় আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নির্বাচনে সরকারি দলকে হারিয়ে বিরোধী দলের প্রার্থী মেয়র পদে জয়ী হয়ে চমক সৃষ্টি করেন। ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) তুরস্কের নির্বাচন কমিশনকে পুনর্নির্বাচনের বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ‘দেরি না করে’ ব্যাখ্যা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

আগামী ২৩ জুন ইস্তাম্বুলে পুনরায় ভোট গ্রহণের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থীকে অল্প ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন ধর্মনিরপেক্ষ দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রার্থী একরেম ইমামগ্লু। ইস্তাম্বুলে ৮০ লাখের বেশি ভোট গৃহীত হয়। ১৪ হাজারের কম ভোটের ব্যবধানে ইমামগ্লু নির্বাচিত হন। ‘অনিয়ম ও দুর্নীতির’ অভিযোগ তুলে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একে পার্টি) ইস্তাম্বুলে পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলে।

দেশের প্রবল অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে তুরস্কজুড়ে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের নেতৃত্বের বিষয়ে গণভোট হিসেবে দেখা হয়েছিল। যদিও সরকারি দলের নেতৃত্বাধীন জোট ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশজুড়ে জয় পেয়েছে। বিরোধী দল সিএইচপি রাজধানী আঙ্কারা, ইজমের ও ইস্তাম্বুলে জয় পেয়েছে বলে দাবি করে। ফলাফল ঘোষণার পর থেকে সরকারি দল আঙ্কারা ও ইস্তাম্বুলের ফল চ্যালেঞ্জ করে আসছে। আর বিরোধী দল অভিযোগ করছে, সরকারি দল ভোট চুরির চেষ্টা করছে।

আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, ইইউ এবং এর নেতৃত্বস্থানীয় সদস্যরাষ্ট্রগুলো পুনর্নির্বাচনের ঘোষণার কঠোর সমালোচনা করেছে। জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস পুনর্নির্বাচনের ঘোষণাকে ‘অচিন্তনীয়’ বলে মন্তব্য করেছেন।

ফরাসি সরকার এ ঘটনার সমালোচনা করে তুরস্ক সরকারকে ‘গণতান্ত্রিক আদর্শ, বহুত্ববাদ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছতার প্রতি শ্রদ্ধা’ দেখাতে বলেছে।

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নেতৃস্থানীয় সদস্য বেলজিয়ামের গাই ভেরহোফস্ট্যাড বলেছেন, ‘তুরস্ক স্বৈরতন্ত্রের দিকে ধাবিত হচ্ছে’।

ইউরোপীয় মুখপাত্র তুরস্কের নির্বাচন কমিশনকে এই বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইইউয়ের কূটনৈতিক প্রধান ফেদেরিকা মোঘেরিনি এক বিবৃতিতে বলেন, যেকোনো গণতন্ত্রের জন্য অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচনপ্রক্রিয়া জরুরি।

এর আগে ইস্তাম্বুলে পুনর্নির্বাচনের ঘোষণায় সিএইচপির ডেপুটি চেয়ারপারসন ওনুরসাল আদিগুজেল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পুনর্নির্বাচনের মাধ্যমে বোঝানো হলো একে পার্টির বিরুদ্ধে জয়লাভ করাটাই ছিল অবৈধ। আদিগুজেল টুইটে বলেন, ‘এটা সোজাসাপটা স্বৈরতন্ত্র। এই পদ্ধতি জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে অগ্রাহ্য করে এবং আইনকে উপেক্ষা করে, যেটা না গণতান্ত্রিক, না বৈধ।’

নির্বাচনী বোর্ডে একে পার্টির প্রতিনিধি রিসেপ ওজেল বলেন, পুনর্নির্বাচন দেওয়ার কারণ হচ্ছে, নির্বাচনের দিন দায়িত্ব পালন করা কিছু কর্মকর্তা সরকারি চাকুরে ছিলেন না। আর বেশ কিছু ফলাফলের শিটে সই করা ছিল না।

বিজয়ী মেয়র ইমামগ্লু পুনরায় ভোট গ্রহণের ঘোষণার নিন্দা জানিয়ে বলেন, নির্বাচনী বোর্ড শাসক দলের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়েছে। সমবেত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের নীতি বিসর্জন দেব না। এই দেশ ৮ কোটি ২০ লাখ দেশপ্রেমিকে ভর্তি, যাঁরা লড়াই করবেন...গণতন্ত্রের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত।’

ইস্তাম্বুলে অল্প ব্যবধানে শাসক দল হারার পর পরাজয় স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। একসময় তিনি ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন।

একে পাটির পার্লামেন্টারি বৈঠকে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেন, ইস্তাম্বুলে পুনর্নির্বাচন দেশের জন্য ‘সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ’। তিনি বলেন, ‘ এই সিদ্ধান্তকে (পুনর্নির্বাচন) গণতন্ত্র ও আইনি কাঠামোর মধ্যে সমস্যা সমাধানে আমাদের আকাঙ্ক্ষাকে শক্তিশালী করতে সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ হিসেবে দেখছি।’ তিনি দাবি করেন, মার্চে অনুষ্ঠিত ভোট ‘অবৈধ’ ছিল এবং পুনর্নির্বাচন ‘দেশটির গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ’ হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করবে।

তবে পুনর্নির্বাচনের এই সিদ্ধান্ত একে পার্টিকে বিভক্ত করে ফেলতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। দলের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা দল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন।

এরদোয়ানের পূর্বসূরি এবং একে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আবদুল্লাহ গুল নতুন দল গঠন করতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।