সু চির ব্যর্থতা আবারও সামনে

অং সান সু চি
অং সান সু চি

মিয়ানমারে রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন এবং কিয়াও সোয়ে ও গতকাল মঙ্গলবার মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাটি মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অং সান সু চির ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। কারণ, একজন গণতন্ত্রকামী নেত্রী হিসেবে তিনি সাংবাদিকদের রক্ষা করতে পরেননি। রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনায়ও তিনি ছিলেন নীরব। অথচ এই সু চিই একসময় গণমাধ্যমের পাশে ছিলেন।

মিয়ানমারে সামরিক জান্তার শাসনামলে সু চি যখন গৃহবন্দী ছিলেন, তখন বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা তাঁর শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বার্তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিয়েছেন। দালাই লামা, নেলসন ম্যান্ডেলা ও মার্টিন লুথার কিংয়ের সঙ্গে তুলনা করে তাঁর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা হয়েছে। কিন্তু ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় অর্জন করে তাঁর দল সরকার গঠন করার পর তিনি যেন বদলে গেলেন। গণতন্ত্রের লড়াইয়ে তাঁর সমর্থকেরা প্রথম দিকে বলেছেন, সামরিক বাহিনীর ওপর সু চির নিয়ন্ত্রণ খুব কমই। কিন্তু দেশটির রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সেনাবাহিনী নির্যাতনের ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনী সমালোচনা না করায় সু চির সেই বন্ধু এবং সমর্থকেরা বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে পড়েন। কারণ, জাতিসংঘ রাখাইনের ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করলেও সু চি বরাবরই নীরব থেকেছেন। একপর্যায়ে মুখ খুললেও তাঁর বক্তব্য ছিল সেনাবাহিনীর পক্ষেই।

৫১১ দিন কারাগারে থাকার পর মুক্তি পেয়েছেন এই দুই সাংবাদিক। তাঁদের মুক্তির মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের সাংবাদিকদের মধ্যে আনন্দ এবং স্বস্তি ফিরেছে। তবে এই ঘটনা সু চির ব্যর্থতাকে আবারও সামনে এনেছে।

রয়টার্সের এই দুই সাংবাদিক যে অন্যায়ের শিকার হয়েছেন, তা বন্ধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সু চির সমালোচনা করেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়ার উপপরিচালক ফিল রবার্টসন বলেছেন, এই দুরবস্থার মধ্যে সু চি প্রতিনিয়ত অসহযোগিতা করেছেন। মিয়ানমারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা একটি বড় ইস্যু। এর মধ্যেই গণমাধ্যমের প্রতি সু চির শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করেছে।

সু চির দল ক্ষমতায় আসার পর মিয়ানমারে গণমাধ্যমের অবস্থা যেন আবারও সেই সামরিক জান্তার সময়ে ফিরে গেছে। সাংবাদিকদের ওপর হুমকি ও তাঁদের নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে। ২০১৭ সালেই বিতর্কিত আইনে ২০ সাংবাদিকের বিচার হয়েছে। এ ছাড়া একই সময় রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে ভুল তথ্যকে সমর্থন দেওয়ায় সু চি সমালোচিত হয়েছেন।

তবে সু চির কট্টর সমর্থকেরা এখনো বলছেন, পার্লামেন্টের ২৫ শতাংশ আসনে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ। কাজেই এই বাহিনীর কাছে সু চির হাত-পা বাঁধা।