৬০ দিনের সময় বেঁধে 'হুমকি' দিল ইরান

গত কয়েক বছর ধরে ইরানের ওপর চাপ বাড়িয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি
গত কয়েক বছর ধরে ইরানের ওপর চাপ বাড়িয়ে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: এএফপি

ছয় শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে ২০১৫ সালে করা আন্তর্জাতিক পারমাণবিক চুক্তির কিছু শর্ত থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে ইরান। ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বের হয়ে যাওয়ার এক বছরের মাথায় এমন ঘোষণা দিল তেহরান।

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, বিদেশে বিক্রয় করার পরিবর্তে দেশেই তিনি ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধি বাড়াবেন। তিনি আরও হুমকি দিয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অবরোধ থেকে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী বাকি দেশগুলো যদি ইরানকে রক্ষা না করে, তাহলে ৬০ দিনের মধ্যে আরও উন্নত ইউরেনিয়ামের উৎপাদন ফের শুরু করবেন তাঁরা।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক শক্তি সঞ্চয়ের আকাঙ্ক্ষা নিয়ন্ত্রণ ও তেহরানের ওপর থাকা অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে ওই পারমাণবিক চুক্তিটি করা হয়। ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিটি করেছিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য। এই দেশগুলো হলো যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন ও রাশিয়া। এর সঙ্গে জার্মানিও ছিল।

পারমাণবিক ওই চুক্তির আওতায় ইরান তার উদ্বৃত্ত ইউরেনিয়াম দেশে সঞ্চয় না করে, বাইরে বিক্রি করতে বাধ্য ছিল। বিক্রির এই শর্তটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইরান যে শক্তি উৎপাদন ছাড়া অস্ত্র তৈরিতে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করছে না, এই শর্তের আওতায় সেই নিশ্চয়তা পেত চুক্তি স্বাক্ষরকারী দেশগুলো। তবে চুক্তির আগে ও পরে ইরান বরাবরই দাবি করে এসেছে যে, তাদের এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ছিল।

অন্যদিকে, গত বছর ওই চুক্তি থেকে বের হয়ে যায় ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে ইরানের ওপর নতুন করে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয়। এতে ইরানের অর্থনীতি নতুন করে ধাক্কা খায় এবং ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকে।

প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি চুক্তি থেকে সরে আসার বিষয়ে বলেন, চুক্তির দুটি অংশ বাতিল করেছেন তিনি। এগুলো ‘দ্য জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ)’ নামে পরিচিত।

স্বাক্ষরকারী অন্য দেশগুলোকে চুক্তিতে থাকা অর্থনৈতিক ও তেলের বিষয়ে দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য ৬০ দিনের সময় বেঁধে দিয়েছেন রুহানি। তিনি হুঁশিয়ারি দেন এই বলে যে, যদি তারা প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হয়, তবে ইরান পুনরায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ শুরু করবে।

ইরানের এমন ঘোষণায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ চুক্তিতে থাকা বাকি দেশগুলোকে প্রতিশ্রুতি পূরণের আহ্বান জানিয়েছেন। এই চুক্তি ব্যর্থতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে চীন ও রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রকে দুষছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের এক মুখপাত্র এই চুক্তিকে ‘অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ’ উল্লেখ করে বলেছেন, ইরান যদি চুক্তিতে করা তার অঙ্গীকার পূরণে সচেষ্ট থাকে, তবে যুক্তরাজ্য তার ভূমিকা বজায় রাখবে। আর ফ্রান্সের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফ্লোরেন্স পার্লি স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেছেন, চুক্তিটি টিকিয়ে রাখতে ইউরোপীয় শক্তিগুলো তাদের সামর্থ্যের সবটুকুই করবে।