সিঙ্গাপুরে থমকে যেতে পারে উদ্ভাবন

ছবি: রয়টার্স।
ছবি: রয়টার্স।

সিঙ্গাপুরের সংসদে ভুয়া সংবাদবিরোধী আইন পাসের কারণে উদ্ভাবন থমকে যেতে পারে বলে অভিযোগ তুলেছে গুগল। প্রযুক্তিশিল্পের প্রসারে যে বৈশিষ্ট্যটি নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুর সুপরিকল্পিতভাবে প্রতিপালন করছে, সেই উদ্ভাবনের ওপর এমন হুমকি নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছে টেক জায়ান্টরা।

গতকাল বুধবার সিঙ্গাপুরের সংসদে ‘অনলাইনে মিথ্যাচার ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কার্যক্রম প্রতিরোধ প্রস্তাব’ পাস হয়। অধিকার সংরক্ষণ সংগঠন, সাংবাদিক ও প্রযুক্তি সংস্থাগুলো এই আইনের সমালোচনা করেছে। তাদের দাবি, এই আইনের অপব্যবহার করে সাধারণ মানুষের বাকস্বাধীনতা হরণ করা হতে পারে।

অর্থনৈতিক ও পরিবহন কেন্দ্র সিঙ্গাপুর ডিজিটাল উদ্ভাবনে নিজেদের আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এমন সময় এই আইন কার্যকর হলে তার ফাঁকফোকর সবার সামনে আসে। গুগলের মতে, অনলাইনকেন্দ্রিক আইনের কারণে বাধা পাবে সিঙ্গাপুরের বিকাশ।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রশ্নের জবাবে গুগলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘এই আইনের ফলে উদ্ভাবন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ডিজিটাল তথ্যের অনুকূল পরিবেশে ব্যাঘাত ঘটবে বলে আমরা উদ্বিগ্ন। আইন কীভাবে বাস্তবায়িত হবে, তা দেখার বিষয়। এই প্রক্রিয়ায় আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে কাজ করতে আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ।’

এই আইনের মাধ্যমে অনলাইন গণমাধ্যমগুলোতে প্রকাশিত কনটেন্ট যদি সরকারের কাছে মিথ্যা হিসেবে বিবেচিত হয়, তবে তা সংশোধন করতে হবে বা মুছে ফেলতে হবে। ভুয়া সংবাদ প্রচারের দায়ে অপরাধ সংঘটনকারীর সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড বা ১ মিলিয়ন সিঙ্গাপুরি ডলার জরিমানা হতে পারে।

দেশটির আইনমন্ত্রী বলেছেন, এই প্রস্তাবের কারণে বাকস্বাধীনতায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না। মিশ্র সংস্কৃতি এবং ধর্মের মানুষের সমাগমের পাশাপাশি ইন্টারনেটে ব্যাপক মানুষের প্রবেশ ক্ষমতা থাকায় ভুয়া সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে নিজেদের অবস্থান হারাতে পারে সিঙ্গাপুর। কাজেই তাঁরা এই আইনটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।

ফেসবুকের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জননীতিবিষয়ক সহসভাপতি সাইমন মিলনার বলেন, ‘নতুন আইনের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কারণ এর মাধ্যমে সিঙ্গাপুরের নির্বাহী শাখার কাছে মিথ্যা বলে মনে হওয়া কনটেন্ট সরিয়ে নিতে আমরা বাধ্য থাকব। ব্যবহারকারীরা সরকারের পক্ষ থেকে এক ধরনের প্রজ্ঞাপন পাবে।’

মিলনার বলেন, সরকার তাঁদের ভরসাজনক বিবৃতি অনুযায়ী ‘ভারসাম্যপূর্ণ এবং পরিমিত হারে আইন প্রয়োগ’ করবে বলে আশা করছে ফেসবুক।

গত বছরের শেষার্ধে সরকারের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে ফেসবুক। তারা নগররাষ্ট্রটির ব্যাংক এবং মালয়েশিয়ার কলঙ্কিত আইএমডিবি ফান্ড নিয়ে প্রকাশিত একটি অনলাইন প্রতিবেদন সরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। সরকারের ভাষায় এই প্রতিবেদনটি ছিল ‘মিথ্যা ও হিংসাত্মক’।

সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেন লুং এবং তাঁর ভাই ও বোনেরা ২০১৭ সালে ফেসবুকে জনসমক্ষে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। মৃত পিতা সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউয়ের দলিল নিয়ে তাঁদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এই আইনের ফলে অনলাইন পোস্টের সত্যতা যাচাইয়ের দায়িত্ব সরকারের হাতে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সক্রিয় কর্মীরা।