সৌদির চার জাহাজে অন্তর্ঘাতমূলক হামলা

ক্ষতিগ্রস্ত একটি জাহাজ। ছবি: রয়টার্স
ক্ষতিগ্রস্ত একটি জাহাজ। ছবি: রয়টার্স

যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে টান টান উত্তেজনা চলছে। এর মধ্যেই পারস্য উপসাগরে সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলের কাছে সৌদি আরবের দুটি তেলবাহী ট্যাংকারসহ চারটি বাণিজ্যিক জাহাজ ‘অন্তর্ঘাতমূলক কার্যকলাপ’ বা হামলার শিকার হয়েছে। হরমুজ প্রণালির নিকটস্থ ফুজাইরাহ বন্দরের কাছে গত রোববার এসব হামলার ঘটনা ঘটেছে।

জাহাজে হামলার ঘটনাকে ‘অপ্রীতিকর ও ভয়ংকর’ বলে আখ্যা দিয়ে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি তদন্ত করতে বলেছে। এদিকে কোনো রাষ্ট্র বা কোনো পক্ষের দিকে আঙুল না তুলে ঘটনাটির তদন্ত শুরু করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। আরবদের আঞ্চলিক জোট জিসিসি এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

গতকাল সোমবার সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ বলেছে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের উপকূলের কাছে ‘অন্তর্ঘাতমূলক হামলা’র লক্ষ্যবস্তু হওয়া জাহাজগুলোর মধ্যে দুটি তেলের ট্যাংকার (জাহাজ) তাদের। এটিকে রিয়াদ বৈশ্বিক অপরিশোধিত তেলের নিরাপদ সরবরাহব্যবস্থা বিঘ্নিত করার চেষ্টা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। হামলার ঘটনায় গতকাল সোমবার তেলের দাম বেড়েছে। গ্রিনিচ মান সময় ৬টা ১৮–তে এক ব্যারেল ব্রেন্ট অপরিশোধিত তেল প্রায় ৭১ ডলারে (৭০ দশমিক ৯৮) বিক্রি হয়েছে।

সৌদি আরবের জ্বালানিমন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ এক বিবৃতিতে বলেছেন, হামলার শিকার হওয়া দুটি ট্যাংকারের একটি রাস তানপুরা বন্দর থেকে সৌদির অপরিশোধিত তেল বোঝাইয়ের উদ্দেশে রওনা করেছিল। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সৌদি আরামকোর ট্যাংকারটির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খদ্দেরদের জন্য তেল নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, হামলার ঘটনায় কোনো প্রাণহানি হয়নি কিংবা তেলও পড়ে যায়নি। তবে ট্যাংকারগুলোর কাঠামোয় উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে।

হামলার ছবি দেখেছে বলে উল্লেখ করে স্বাধীন ট্যাংকার মালিকদের সংগঠন ইন্টারটাংকো বলেছে, অস্ত্রের প্রভাবে দুটি ট্যাংকারে ফুটো হয়েছে।

আগের দিন রোববার সংযুক্ত আরব আমিরাত বলেছিল, ফুজাইরাহ বন্দরে চারটি বাণিজ্যিক জাহাজ অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ডের শিকার হয়েছে। জাহাজগুলোয় বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা ছিল।

পরে সংযুক্ত আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ এ–ও জানায়, জাহাজে হামলার ঘটনায় কোনো প্রাণহানি হয়নি। ফুজাইরাহ বন্দরের কার্যক্রমও স্বাভাবিক আছে। আন্তর্জাতিক কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে আমিরাত কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত শুরু করেছে।

পৃথক এক বিবৃতিতে সৌদি আরবের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের আঞ্চলিক মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রতি সহযোগিতার কথা জানিয়েছে।

জিসিসির মহাসচিব আবদুল লতিফ আল জায়ানি এক বিবৃতিতে বলেন, জাহাজে অন্তর্ঘাতমূলক অভিযানের কারণে মধ্যপ্রাচ্য উত্তেজনা ও সংঘাত বাড়া এবং সেখানকার মানুষের স্বার্থ ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ইরান মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়াতে অপ্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। তেহরানের হুমকির জবাব দিতেই মধ্যপ্রাচ্যে রণতরি ও বেশ কয়েকটি বি-৫২ বোমারু বিমান পাঠিয়েছে মার্কিন সেনাবাহিনী।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মৌসাভি বলেন, জাহাজে হামলা ‘ভয়ংকর ও দুঃখজনক’। এদিকে ইরানিয়ান রেভল্যুশনারি গার্ডের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার মেজর জেনারেল হোসেন সালামি রোববার দেশটির পার্লামেন্টে বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে (মধ্যপ্রাচ্য) মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ শুরু করেছে।’