দিদির গড় দখলে চতুর্মুখী লড়াই?

তৃণমূলের মালা রায়, বামফ্রন্টের নন্দিনী মুখার্জি, কংগ্রেসের মিতা চক্রবর্তী ও বিজেপির চন্দ্র কুমার বোস। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
তৃণমূলের মালা রায়, বামফ্রন্টের নন্দিনী মুখার্জি, কংগ্রেসের মিতা চক্রবর্তী ও বিজেপির চন্দ্র কুমার বোস। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন গোটা রাজ্যে ‘দিদি’ নামেই পরিচিত। রাজনৈতিক নেতা থেকে মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়কেরা জোর গলায় তাঁকে দিদি বলেই ডাকেন। দিদির বাসস্থান দক্ষিণ কলকাতায়। সেই কালীঘাট অঞ্চলে। দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর আসন থেকে তিনি বিধায়ক পদে জয়ী হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি এই আসনে জিতেছিলেন। পরাস্ত করেছিলেন কংগ্রেসের দীপা দাসমুন্সীকে। তৃতীয় হয়েছিলেন বিজেপি প্রার্থী নেতাজির ভ্রাতুষ্পুত্র চন্দ্র কুমার বোস। তবে সেদিন এই আসনে দীপা দাসমুন্সীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল মমতার।

এখনো কলকাতার মানুষ লোকসভার দক্ষিণ কলকাতা আসনকে বলেন দিদির গড়। সেই দিদির গড় দখলের জন্য এবার মাঠে নেমে পড়েছেন রাজ্যের চার শীর্ষ দলের চার নেতা–নেত্রী। এর মধ্যে রয়েছেন তিন নারী প্রার্থী আর একজন পুরুষ প্রার্থী। বহুজন সমাজপার্টি, এসইউসিআই ও শিবসেনার রয়েছে তিন প্রার্থী। এই আসনের তিন নারী প্রার্থী হলেন তৃণমূলের মালা রায়, বামফ্রন্টের নন্দিনী মুখার্জি এবং কংগ্রেসের মিতা চক্রবর্তী। আর পুরুষ প্রার্থী হলেন বিজেপির চন্দ্র কুমার বোস।

এবার লড়াই হবে মূলত তৃণমূল, বিজেপি, বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস প্রার্থীর মধ্যে। তৃণমূল এই আসনে প্রার্থী করেছে তাদের দলের পৌর কাউন্সিলর মালা রায়কে। এই আসনের সাংসদ রয়েছেন সুব্রত বক্সী। তিনি এবার নির্বাচন না করায় তাঁর স্থলে প্রার্থী করা হয়েছে মালা রায়কে। মালা রায় পরীক্ষিত রাজনীতিবিদ। কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কর্মী ছিলেন। ২০০৫ সাল থেকে তিনি ছিলেন কলকাতা পৌর করপোরেশনের কংগ্রেসের কাউন্সিলর। এরপর তিনি গত বছর তৃণমূলে যোগ দেন। আর এবার তিনি দক্ষিণ কলকাতা আসনে তৃণমূলের মনোনয়ন পান। মালা রায় জয় নিয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী। বলেছেন, দক্ষিণ কলকাতায় সব সময় মমতাদি মিশে আছেন। তাঁর উন্নয়নের ছোঁয়া আজ কলকাতা কেন, রাজ্যের সর্বত্র লেগে আছে। তাই এই আসনে মানুষ দিদিকে ভোট দেবে। দিদিই জিতবেন।

বিজেপি এবার প্রার্থী করেছে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোসের ভ্রাতুষ্পুত্র চন্দ্র কুমার বোসকে। চন্দ্র কুমার বোস ২০১৬ সালে রাজনীতিতে আসেন। ১৮ বছর তিনি টাটা গ্রুপের সঙ্গে কাজ করেছেন। বিদেশে পড়াশোনা করা চন্দ্র বোস টাটা গ্রুপের চাকরি ছেড়ে নিজেই ‘বোস ইনফরমেশন টেকনোলজি প্রাইভেট লিমিটেড’ নামের একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। সেই সংস্থার তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

চন্দ্র কুমার বোস ২০১৬ সালের ২৩ জানুয়ারি বিজেপিতে যোগ দেন। এরপরই তিনি ওই বছর পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর আসনে মমতার বিরুদ্ধে লড়ে হেরে যান। এই চন্দ্র কুমার বোসের বাবা অমিয়নাথ বোসও একসময় আরামবাগের সাংসদ ছিলেন।

চন্দ্র কুমার বোস এবার বিজেপির টিকিটে দক্ষিণ কলকাতার লোকসভা আসনে ফের মাঠে নেমেছেন। তিনি বলেছেন, এবার আর আগের পরিস্থিতি নেই। পরিবর্তন এসেছে এই রাজ্যের রাজনীতিতে। মানুষ বুঝেছে, এবার মোদি–হাওয়া দেশের সর্বত্র। তাই এবার তিনি এই আসনে জিতবেন।

বামফ্রন্টের শরিক দল সিপিএম এই আসনে নন্দিনী মুখার্জিকে প্রার্থী করেছে। তিনি একজন কম্পিউটারবিজ্ঞানী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক। দীর্ঘদিন ধরে বাম আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি সমাজসেবায় ব্রতী রয়েছেন। তিনি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক। এ ছাড়া বাম দলের সর্বভারতীয় গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য।

নন্দিনী মুখার্জি সর্বভারতীয় পিস ও সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। সিপিএম এবার দক্ষিণ কলকাতা আসনে তাঁকে প্রার্থী করেছেন। নন্দিনী মুখার্জি বলেছেন, এবার এই আসন আর বিনা যুদ্ধে তৃণমূল নিতে পারবে না। লড়াই করতে হবে। মানুষ বদলে যাচ্ছে। দিনে দিনে মোহ কাটছে। সুতরাং, তিনি যে এবার লড়াইয়ে থাকছেন, তা তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন।

কংগ্রেস এই আসনে মিতা চক্রবর্তী নামের এক নারীকে প্রার্থী করেছে। তিনি সফল ব্যবসায়ী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। তিনি এমএসআর নামের টেক কনসালটেন্সি ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক। কলকাতা ও লন্ডনে এই প্রতিষ্ঠানের শাখা রয়েছে। কংগ্রেস এই আসনেই তাঁকে প্রার্থী করেছে।

মিতা চক্রবর্তী এবারের জয় নিয়ে দারুণ আশাবাদী। বলেছেন, দক্ষিণ কলকাতার আর সেই দিন নেই। এখানকার মানুষ নতুনভাবে ভাবছে। চিন্তায়ও তাদের পরিবর্তন এসেছে। তাই এই মুহূর্তে এটা বলা যাবে না যে কংগ্রেস এবার লড়াইতে থাকছে না। কংগ্রেস লড়াইতে থাকছে। জয়ের জন্য লড়াই করবে।

দক্ষিণ কলকাতা আসনের এবার লড়াই হবে হাড্ডাহাড্ডি। তিন নারী আর এক পুরুষ প্রার্থীর মধ্যে এই লড়াই চলবে। ২৩ মে জানা যাবে কে জিতবেন। ১৯ মে এই আসনের নির্বাচন হবে। ওই দিনই দক্ষিণ কলকাতার এই আসনে মমতার গড়ে ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম বা শেষ দফা নির্বাচনের ভোট নেওয়া হবে।