সাংবাদিকতার জন্য এখন কোনো সুখকর সময় নয়

বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের আচরণ গণমাধ্যমের জন্য আশাব্যঞ্জক নয়। আইনের অব্যাহত প্রয়োগ এবং যেভাবে গত বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হয়েছে, তা মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য শুভ লক্ষণ নয়। বিশ্বে সাংবাদিকতার জন্য এখন কোনো সুখকর সময় নয়।

গতকাল বুধবার ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতার নতুন হুমকি: প্রেক্ষিত দক্ষিণ এশিয়া’ (নিউ থ্রেট টু মিডিয়া ফ্রিডম: দ্য ভিউ ফ্রম সাউথ এশিয়া) শীর্ষক লন্ডনে অনুষ্ঠিত সেমিনারে এমন মন্তব্য করেন বক্তারা। ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিনস্টার ও শেভেনিং যৌথভাবে ওই সেমিনারের আয়োজন করে।

ওয়েস্টমিনস্টারের ইনস্টিটিউট অব গভর্নমেন্টে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী সেমিনারে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ বার্তা সম্পাদক ইয়ান হ্যাডো, দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিবিসির সাবেক প্রতিনিধি জাস্টিন রোল্যাট, পেন ইন্টারন্যাশনালের রাইটার্স ইন প্রিজন কমিটির চেয়ার সলিল ত্রিপাঠি, কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট ও ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনস্ট ইমপিউনিটির পরামর্শক এলিজাবেথ হুইসেলসহ ভিন্ন ভিন্ন সেশনে আরও অনেকেই বক্তব্য দেন। যুক্তরাজ্য সরকারের অর্থায়নে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাংবাদিকদের প্রশিক্ষণের জন্য পরিচালিত ‘শেভিনিং’ বৃত্তি প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে এই সেমিনারের আয়োজন হয়।

স্বাধীন সাংবাদিকতার পক্ষে বিশ্বব্যাপী কাজ করা প্রতিষ্ঠান পেন ইন্টারন্যাশনালের সলিল ত্রিপাঠি বলেন, সাংবাদিকতার জন্য এখন কোনো সুখকর সময় নয়। স্বাধীন মতপ্রকাশের বৈশ্বিক চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বাংলাদেশের কথা বলেন। উদাহরণ হিসেবে ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনামের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ ও মানহানির মামলার কথা বলেন। আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তারের ঘটনার কথা বর্ণনা করে তিনি বলেন, নোবেল বিজয়ী স্বনামধন্য বিশ্বব্যক্তিত্বরা শহিদুল আলমের পক্ষে দাঁড়ালেও সরকার তাতে পাত্তা দেয়নি।

সলিল ত্রিপাঠি বলেন, বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলোয় এখনো ঔপনিবেশিক আমলের আইনগুলোই কৌশলে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। যেখানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে মানুষের অধিকার হিসেবে স্বীকার করা হয় না। মনে করা হয়, এটি ‘বিশেষ সুযোগ’ (প্রিভিলেজ), যা ক্ষমতাসীনদের আনুকূল্যের ওপর নির্ভরশীল।

এলিজাবেথ হুইসেল বলেন, স্বাধীন সাংবাদিকতার শত্রু এখন অনেক বেড়ে গেছে। গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধী চক্র ও স্বার্থগোষ্ঠীর চিরায়ত হুমকি সব সময়ই আছে। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সরকারগুলোর কর্তৃত্ববাদী আচরণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের চাপ, সাইবার আক্রমণ এবং অনলাইনে গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের নিয়ে অপপ্রচার।

এলিজাবেথ হুইসেল বলেন, ঐতিহ্যগতভাবে গণমাধ্যমের প্রতি উদার দেশগুলোর শত্রুতে রূপান্তরিত হওয়ার ঘটনা বিশ্বব্যাপী স্বাধীন সাংবাদিকতাকে কঠিন করে তুলেছে। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প কর্তৃক সাংবাদিকদের ‘জনগণের শত্রু’ আখ্যায়িত করা এবং সংবাদ সম্মেলনে ভিন্নমতের সাংবাদিক প্রবেশে বাধাদানের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে আলোচকেরা ‘ফ্রেনিমি’ (ফ্রেন্ড ও এনিমির সন্ধি) হিসেবে আখ্যায়িত করেন। অর্থাৎ ক্ষতিকারক হওয়া সত্ত্বেও এগুলোকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার বিকল্প নেই। বক্তারা বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো গণমাধ্যমের কাজকে অনেক সহজ করেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের হুমকি মোকাবিলায় গণমাধ্যমগুলোর পক্ষপাতিত্বের ত্রুটি এবং সত্য প্রকাশের ব্যর্থতা কাটিয়ে ওঠার পরামর্শ দেন বক্তারা। তাঁরা বলেন, বলিষ্ঠ অবস্থান নিয়ে সত্য প্রকাশে অবিচল থেকেই গণমাধ্যমকে টিকে থাকতে হবে।