মথুরাপুরে মুখোমুখি মোদি-মমতা

কলকাতার দমদমে নির্বাচনী জনসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
কলকাতার দমদমে নির্বাচনী জনসভায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

নির্বাচনী প্রচারের শুরু থেকে দুজন বাগযুদ্ধে জড়িয়ে ছিলেন। ভোট প্রচারের শেষ দিনেও সেই যুদ্ধ থামল না। শেষ যুদ্ধক্ষেত্র ঘটনাক্রমে একই, নাম মথুরাপুর। আজ একই দিনে ভিন্ন সময়ে সেই যুদ্ধে একে অপরকে বিঁধলেন কথার তির দিয়ে। যোদ্ধা দুজনের একজন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, অন্যজন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ভারতের লোকসভা নির্বাচনের সপ্তম দফা ভোট গ্রহণের আগে রাজনৈতিক দলের প্রচারের শেষ দিন ছিল আজ বৃহস্পতিবার। আজ রাত ১০টায় পশ্চিমবঙ্গে বন্ধ হয়ে যাবে বিভিন্ন দলের প্রচার। তবে দেশের অন্যান্য রাজ্যে এই প্রচার বন্ধ হবে আগামীকাল রাত থেকে। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের কলকাতায় রোড শো নিয়ে সৃষ্ট গন্ডগোলের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রচারের সময় কমিয়ে আজ রাত ১০টা পর্যন্ত নির্ধারণ করে দেয়।

তাই আজ শেষ দিনের প্রচারে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনীতির ময়দান। আজ দুপুরে সুন্দরবন অঞ্চলের মথুরাপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ নির্বাচনী প্রচারে যোগ দিয়ে একহাত নেন প্রধানমন্ত্রী মোদিকে। পাশাপাশি এই মথুরাপুরে বিকেলে বিজেপি আয়োজিত আরেক জনসভা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদি। পৃথক এই দুই সভা থেকে দুই নেতা-নেত্রী একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। মোদি অবশ্য মথুরাপুর জনসভা সেরে সন্ধ্যার পর যোগ দেন কলকাতার দমদমের জনসভায়।

মোদি মথুরাপুরে বলেছেন, দিদির পাততাড়ি গোটানোর সময় এসে গেছে। ৩০০-এর বেশি আসন পেয়ে এবার ফের ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। আর এই ৩০০ পেরোতে এবার সহায্য করবে এই বাংলা।

মোদির কথা, কেন্দ্রে সরকার গড়ার লক্ষ্যে পৌঁছে দেবে এই বাংলা। সুতরায় ২৩ মের পর ভারতে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। মোদি সরকার।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতায় বিজেপির সভাপতি অমিত শাহর রোড শোর সময় বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষের সময় কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের বিদ্যাসাগর কলেজে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে ফেলে একদল লোক। ওই ঘটনার জন্য বিজেপি ও তৃণমূল একে অপরকে অভিযুক্ত করেছে। আজ মোদির বক্তব্যেও উঠে আসে মূর্তি ভাঙার প্রসঙ্গ।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, কলকাতার বিদ্যাসাগর কলেজে সমাজসংস্কারক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে তৃণমূলের গুন্ডারা। মূর্তি ভেঙে এবার তারা প্রমাণ লোপাট করছে। যেমনটা করেছে, সারদা, রোজভ্যালি এবং নারদ কেলেঙ্কারি মামলায়।

মোদি বলেন, ‘সিসিটিভির ফুটেজ দিক তৃণমূল। তারপরই প্রমাণ হয়ে যাবে মূর্তি ভেঙেছে তৃণমূলের গুন্ডারাই। মমতা এবার আমাকে জেলে ঢোকানোর হুমকি দিচ্ছে। ২৩ মের পর দিদি বুঝবেন কী ঘটে গেল এই বাংলায়।’
মোদি এ কথাও বলেছেন, ‘বিদ্যাসাগর আমাদের শ্রদ্ধেয় মনীষী। সমাজসংস্কারক। তাঁর মূর্তি যারা ভেঙেছে, তাদের শাস্তি পেতেই হবে।’ তিনি বলেছেন, তিনি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি পঞ্চধাতু দিয়ে তৈরি করে দেবেন।
এরপর মোদি যোগ দেন দমদমের সমাবেশে। সন্ধ্যার পর আয়োজিত এই সমাবেশে যোগ দিয়ে মোদি বলেছেন, ‘অহংকারই দিদিকে ডোবাবে। দিদি তো নিজেকে সুপ্রিম মনে করেন। মনে রাখবেন, দিদি নন, বাংলার মানুষই সুপ্রিম।’ তিনি বলেন, ‘বাংলা দিদির ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। সম্পত্তি নয় দিদি আর তাঁর ভাইপোর।’

মোদি বলেন, ‘আজ দিদি কেন্দ্রীয় বাহিনী আর নির্বাচন কমিশন নিয়ে বিষোদগার করছেন। অথচ তিনি ভুলে গেছেন, এই নির্বাচনে কমিশন এবং কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরপেক্ষতার জন্য ক্ষমতায় আসতে পেরেছিলেন দিদি। হতে পেরেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।’

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ওই মথুরাপুরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘বিজেপির নেতা অমিত শাহর নেতৃত্বে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে বিজেপি। এখন মূর্তি ভেঙে তা বানিয়ে দেওয়ার কথা বলছেন মোদি। ওদের কাছ থেকে কেন মূর্তি নেব। মূর্তি আমরাই বানিয়ে দেব। বাংলা ওদের কাছে ভিক্ষে চায় না।’

বিজেপির উদ্দেশে মমতা বলেন, ওরা ত্রিপুরাতেও মূর্তি ভেঙেছে। ওরা আজ ভুয়ো ভিডিও ছড়িয়ে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। ওদের সম্পর্কে সাবধান হতে হবে। মমতা বলেন, মূর্তি ভাঙা নিয়ে মোদির মিথ্যে কথার জন্য মোদিকে কান ধরে ওঠবস করানো উচিত। বলেন, নির্বাচন কমিশন আজ বিজেপির কাছে বিক্রি হয়ে গেছে।
মমতা জোর দিয়ে বলেছেন, ‘এবার বিদায় হয়ে যাচ্ছেন মোদি। আর ফিরবেন না ক্ষমতায়। সরকার গড়বে সাধারণ মানুষের জোট।’ তিনি বলেছেন, নির্বাচন কমিশন বিজেপির আরেক ভাই। এই বিজেপিই এখন সমাজে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছে।

মমতা বলেন, ‘এই উসকানির জবাব দেবে এবার বাংলার মানুষ। দেশের মানুষ। আর ক্ষমতায় ফিরতে পারবেন না মোদি। বিজেপি পরাজিত হবে সব রাজ্যে। পশ্চিমবঙ্গে পাবে না একটি আসনও।’