উত্তর প্রদেশে ভোট: যে লড়াই ব্যবধান বাড়ানোর

নরেন্দ্র মোদি ও রাহুল গান্ধী
নরেন্দ্র মোদি ও রাহুল গান্ধী

কাশীতে বাবা বিশ্বনাথের মন্দিরে মাথা ঠেকিয়ে আরও একবার দেশ সেবার সুযোগ পাওয়ার প্রার্থনা নিশ্চয় করেছেন তিনি। কিন্তু সেই সঙ্গে আর কিছু চাওয়ার ছিল কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির? উত্তর অজানা থাকলেও দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির সদর দপ্তরের দৃঢ় নির্দেশ, বারাণসী লোকসভা কেন্দ্রের একটা বুথেও যেন মোদি পিছিয়ে না থাকেন। সব বুথে এক নম্বরে থাকাই শুধু নয়, এমন ভোট এবার করতে হবে যাতে মোদির মার্জিন ৭ লাখ ছাড়িয়ে যায়।

সাত লাখ মার্জিনে বারাণসী থেকে কেন, গোটা উত্তর প্রদেশেই কেউ কখনো জেতেনি! ব্যবধান বাড়ানোর এই লড়াই এবার উত্তর প্রদেশের ভোটের নতুন আকর্ষণ।

নরেন্দ্র মোদির এই ইচ্ছা না হয় অনুচ্চারিত। কিন্তু সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ সিং যাদব ঢাক ঢাক গুড় গুড় না করেই জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর বাবা মুলায়ম সিং যাদবের জয়ের ব্যবধান এবার যেন সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয়। পুত্তরকে পাশে নিয়ে মৈনপুরী থেকে প্রবীণ মুলায়ম যে দিন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিলেন, যেদিন তিনি জানিয়ে দিতে ভোলেননি এটাই তাঁর শেষ নির্বাচন, অখিলেশ সেদিনই সবার কাছে তাঁর মনের ইচ্ছেটুকু প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এত ভোটে বাবাকে জেতাতে হবে যা দেশের কোথাও কোনো দিন হয়নি।

সে দিক দিয়ে দেখতে গেলে উত্তর প্রদেশে মোদি বনাম মহাজোটের যে লড়াই অব্যাহত, সেই থ্রিলারেরই একটা ‘সাব প্লট’ দুই নেতার মধ্যে ভোটের ব্যবধান বাড়ানোর এই প্রচ্ছন্ন প্রতিযোগিতা।

সোনিয়া গান্ধী
সোনিয়া গান্ধী

দুই নেতাই কিন্তু সমান এগিয়ে। মুলায়মের বিরুদ্ধে মৈনপুরীতে বিরোধীরা যেমন সেই অর্থে কোনো লড়াই-ই করছে না, মোদির বিরুদ্ধেও বিরোধী উপস্থিতি নাম কে ওয়াস্তে। দুই কেন্দ্রেই ভোটের চরিত্র এমনই কুসুমকোমল যে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার কোনো প্রশ্নই কারও কাছে নেই। বয়সের ভারে ন্যুব্জ মুলায়ম স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী, কর্তব্য ও দায়িত্বের খাতিরে মোদি সারা দেশে চরকি ঘোরা ঘুরছেন। নিজ কেন্দ্রে প্রচারে যাওয়ার প্রয়োজন কেউই অনুভব করছেন না।

মুলায়ম
মুলায়ম

বরাণসী লোকসভা কেন্দ্রে মোট বুথের সংখ্যা ১ হাজার ৮০০। গেলবার এই কেন্দ্রে মোদির জয়ের মার্জিন ছিল ৩ লাখ ৭১ হাজার। আম আদমি পার্টির অরবিন্দ কেজরিওয়াল পেয়েছিলেন ২ লাখ ভোট। এবার মাঠ প্রায় ফাঁকা হলেও ব্যবধান ৭ লাখ করার অর্থ গতবারের চেয়ে ভোট পেতে হবে প্রায় দ্বিগুণ। জোট প্রতিপক্ষ নেই বললেই চলে। অখিলেশ বা মায়াবতী কেউই তাই বারবার বরাণসী যাওয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। জোটের হয়ে একটাই সভা তাঁরা করলেন গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে। করতে হয় তাই করা। লড়াইটা বলতে গেলে কংগ্রেসের সঙ্গেই। প্রিয়াঙ্কা এখান থেকেই প্রচার শুরু করেছিলেন। এই শেষ বেলায় গত বুধবার তিনি আরও একবার রোড শো করলেন মন্দির নগরীতে। মোদির মার্জিন তাঁরা কমাতে পারবেন কি? প্রশ্ন ওটাই।

অখিলেশ
অখিলেশ

উত্তর প্রদেশের মোট ৮০টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার দিল্লির উপকণ্ঠে গাজিয়াবাদে। প্রায় ২৭ লাখ। রাজ্যের সব আসনের মধ্যে ওই কেন্দ্রেই গতবার বিজেপির জয়ের ব্যবধান ছিল সবচেয়ে বেশি। প্রার্থী ছিলেন ভারতের সাবেক সেনা প্রধান ভি কে মালিক। ৫ লাখ ৬৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে তিনি জিতেছিলেন। ব্যবধানের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন বুলন্দশহরের বিজেপি প্রার্থী ভোলা সিং। ৪ লাখ ২১ হাজার। তৃতীয় স্থানটিও ছিল বিজেপির দখলে। দাঙ্গাপীড়িত মুজফফরনগরের সঞ্জীব বালিয়ান জিতেছিলেন ৪ লাখ ভোটে। সেই অর্থে গতবার মোদির চেয়ে সামান্য কিছু কম ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন সোনিয়া গান্ধী। রায়বেরিলিতে। সাড়ে ৩ লাখ।

বড় নেতাদের লড়াই এবার সেই অর্থে একপেশে। আজমগড়ে অখিলেশের প্রতিপক্ষ বিজেপির ভোজপুরি অভিনেতা দীনেশ লাল যাদব নিতান্তই এলেবেলে। উত্তর প্রদেশের হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে জেতা-হারার প্রশ্নে সবচেয়ে আকর্ষক কেন্দ্রটি নিঃসন্দেহে আমেথি। রাহুল গান্ধীকে হারাতে বিজেপির স্মৃতি ইরানী মরিয়া। গতবার তিনি হেরেছিলেন মাত্র ১ লাখ ৭ হাজার। স্মৃতি মনে করছেন, এবার ৫৫ হাজার বেশি ভোট পেলেই কেল্লা ফতে।

মোদি, মুলায়ম, অখিলেশ, সোনিয়া ও রাহুল, ভোটের শেষ প্রহরে সবার নজর ওই ব্যবধানে।