চীন-আমেরিকা বাণিজ্য যুদ্ধ সহজে থামছে না

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন, তা থামছে না সহসা। ছবি: রয়টার্স
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন, তা থামছে না সহসা। ছবি: রয়টার্স

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছেন, তা সহজে থামছে না। দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য সমঝোতা-বিষয়ক আলোচনার মধ্যেই তিনি ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের চীনা পণ্যে শুল্কের পরিমাণ ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছেন।

আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে ওয়াশিংটনে আলোচনা চলছিল। কিন্তু এর মধ্যেই দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ ভিন্ন মাত্রা পায়। ১০ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায় ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের চীনা পণ্যের ওপর শুল্কের পরিমাণ বাড়ানোর ঘোষণা দেন। বর্তমানে এই চীনা পণ্যগুলোকে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক দিতে হলেও নতুন ঘোষণার কারণে এই পণ্যগুলোকে এখন থেকে আমেরিকায় প্রবেশে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।

এই ঘোষণার দু দিন পর ১৩ মে হোয়াইট হাউসে এক প্রশ্নোত্তরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ‘চীন গত কয়েক দশক ধরে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে আমেরিকা থেকে অন্যায় অর্থনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে। এতে আমেরিকা প্রচুর পরিমাণে ডলার হারাচ্ছে। প্রতি বছরে চীন আমেরিকা থেকে ৪০ থেকে ৬০ হাজার কোটি ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। আর নয়। যা হয়েছে যথেষ্ট। এখন আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা অনেক ভালো। এখনই উপযুক্ত সময়। আমি ক্ষমতায় আসার পরপরই চীন থেকে শুল্কারোপের মাধ্যমে কয়েক শ কোটি ডলার পাচ্ছে আমেরিকা। এই প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আগে আমেরিকার কোনো প্রশাসনই চীনের বিরুদ্ধে এমন উদ্যোগ নেয়নি। আমাদের সব বাণিজ্য চুক্তিতে চীন একচেটিয়া সুবিধা নিয়েছে। চীন থেকে শুল্কারোপ করে আনা ডলারের কিছু অংশ আমেরিকার কৃষির উন্নয়নে ব্যবহার করা হবে। পুরোনো দিন চলে গেছে। এখন আমাদের সময়। চীন যদি আমাদের নতুন শুল্ক পছন্দ না করে এবং না দেয়, তাহলে তাতে তাদেরই ক্ষতি হবে। প্রয়োজনে আমরা নিজেরাই সে পণ্যের উৎপাদন আমাদের দেশে করব বা যে দেশের সঙ্গে আমাদের ভালো বাণিজ্য চুক্তি হবে, তাদের সঙ্গে লেনদেন করব।’

এদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরোপিত নতুন শুল্কের প্রতিশোধ নিতে চীনও ১৩ মে আমেরিকার পণ্যের ওপর নতুন শুল্কারোপ করে। বেইজিং বলেছে, তারা আমেরিকার জুতা, কম্পিউটার, হাতব্যাগ, পোশাকসহ সর্বমোট ৬ হাজার কোটি ডলারের পণ্যের ওপর শুল্কারোপ করছে। এটি কার্যকর হবে ১ জুন থেকে। চীনের এ ঘোষণায় ওই দিনই আমেরিকার শেয়ারবাজারে ধস নামে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক এক দিনেই নেমে গেছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু এতেও টলছেন না ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমেরিকার অর্থনীতি অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। এ অবস্থায় আমেরিকা সহজেই চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে জয়লাভ করবে।’

কিন্তু প্রেসিডেন্টের এই আশার বাণী ঠিক আমলে নিচ্ছেন না বিশ্লেষকেরা। মার্কিন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মুখে বাজছে ভিন্ন সুর। রিটেইল ইন্ডাস্ট্রি লিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি হান কোয়াক নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘এই বাণিজ্য যুদ্ধের মাশুল আমেরিকার সাধারণ মানুষকেই গুনতে হবে। আমেরিকানদের বাজার খরচ আগের চেয়ে অনেক বাড়বে।’

একই মত ব্যক্ত করলেন আমেরিকান অ্যাপারেলস অ্যান্ড ফুটওয়ারের সভাপতি রিক হেলফেনবেন। তাঁর মতে, ‘এই বাণিজ্য যুদ্ধ নিজের ওপরে আঘাত করার মতো। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকান জনগণের ওপরে নতুন করারোপে দ্বিধা করবেন না। এটি চলতে থাকলে আমেরিকার জনগণকেই কষ্ট করতে হবে।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু নতুন এ শুল্কারোপের ঘোষণা দিয়েই থেমে থাকেননি। তিনি একই সঙ্গে আরও ৩২ হাজার ৫০০ কোটি ডলার মূল্যমানের চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন। এ সম্পর্কিত এক টুইটে ট্রাম্প লিখেছেন, শুল্ক থেকে প্রাপ্ত ১০ হাজার কোটি ডলার অর্থ কৃষিপণ্য কেনায় ব্যয় করা হবে, যা মানবিক সহায়তা হিসেবে দেওয়া হবে।

এই অবস্থা কারও জন্যই ভালো নয় বলে মত দিচ্ছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা। এ বিষয়ে সিনহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক জু নিং নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, ‘দুই দেশের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। পারস্পরিক বিশ্বাস ও সম্মান বাণিজ্য চুক্তির ক্ষেত্রে আবশ্যক।’

প্রসঙ্গত, গত বছর ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের চীনা পণ্যে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করেছিল আমেরিকা। চলতি বছর এ শুল্কের পরিমাণ বাড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু এরই মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা শুরু হওয়ায় বর্ধিত হারে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তটি নিতে দেরি করে মার্কিন প্রশাসন। আর এখন আলোচনার মাঝামাঝি পর্যায়ে এসে শুল্ক আরোপের ঘোষণাটি এল। নতুন এ শুল্ক আরোপের কারণে আমেরিকা ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ যে শিগগির শেষ হচ্ছে না, তা একরকম নিশ্চিত হয়ে গেছে।