প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম সংবাদ সম্মেলন: সাংবাদিকের প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন মোদি

নরেন্দ্র মোদি, রাহুল গান্ধী। ফাইল ছবি
নরেন্দ্র মোদি, রাহুল গান্ধী। ফাইল ছবি

২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদি। গত পাঁচ বছরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে একবারের জন্যও আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি মোদি। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়েও সাংবাদিকদের এড়িয়েই গেলেন নরেন্দ্র মোদি। শুধু বলে গেলেন নিজের কথা। আর প্রশ্ন উঠতেই তা ঠেলে দিলেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর দিকে।

ভারতে চলমান লোকসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলছে। আগামী রোববার সপ্তম দফা ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে এই বিশাল নির্বাচনের ভোটগ্রহণের কাজ শেষ হবে। এর পর শুরু হবে ফলাফলের অপেক্ষা। সপ্তম দফায় ভোটগ্রহণের আগে আজ শুক্রবার ছিল প্রচারের শেষদিন। এ দিন সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। প্রধানমন্ত্রী পদে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) অবিসংবাদিত প্রার্থী তিনি।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবার সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমাদের দেশে এমন ঘটনা খুব কমই ঘটেছে যে, লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া সরকার আবার সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েই ক্ষমতায় এসেছে।’ তাঁর দাবি, এবারও সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েই টানা দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করবে বিজেপি।

এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নয়াদিল্লিতে বিজেপির প্রধান কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন মোদি। ২০১৪ সালের বিজয়ের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘১৬ মে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল। আর ১৭ মে খুব বড় ধরনের হাঙ্গামা হয়েছিল। যারা ক্ষমতালিপ্সু এবং যারা বাজি ধরেছিল, তারা সেদিন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী মোদির এর আগে কোনো সংবাদ সম্মেলন না করার বিষয়টি সমালোচনায় মুখর ছিলেন বিরোধীরা। বিশেষ করে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীসহ অন্যান্য প্রধান বিরোধী নেতারা এ নিয়ে সরব ছিলেন। তবে এত দিন সংবাদ সম্মেলনে হাজির না হলেও, নিয়মিতই বিভিন্ন সাক্ষাৎকার দিয়েছেন মোদি।

শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে নরেন্দ্র মোদি জানিয়েছেন, এবারের লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পরিকল্পনা অত্যন্ত বিস্তৃত ও নিখুঁতভাবে করেছেন তিনি। তবে এই সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দেননি ভারতের প্রধানমন্ত্রী। বরং তাঁকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন উঠতেই তা ঠেলে দিয়েছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর দিকে। মোদি বলেন, ‘আমি একজন সুশৃঙ্খল সেনা, পার্টির সভাপতি আমার জন্য সবকিছু।’

সম্মেলনে মোদিকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন তোলা সাংবাদিককে অমিত শাহ বলেন, ‘আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা দরকারি নয়।’

এদিকে একইদিন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীও সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন। তিনি বলেছেন, এবারের লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করতে চলেছে ধর্মনিরপেক্ষ জোট। দেশটির নির্বাচন কমিশনের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলে তিনি বলেছেন, এই কমিশন পক্ষপাতী আচরণ করছে। রাহুলের দাবি, বিজেপি ও মোদির অনেক অর্থ আছে, কিন্তু কংগ্রেসের কাছে আছে ‘সত্য’। আর সত্যের জয় অবধারিত।

দ্য কুইন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনে মোদি বিরোধী বক্তব্যেই নতুন করে শান দিয়েছেন রাহুল। তিনি বলেন, মোদি যতই তাঁর প্রতি ঘৃণা বাক্য ছুড়ুন না কেন, ভালোবাসা দিয়েই তার জবাব দেওয়া হবে। রাহুল বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি যতই ঘৃণা ছড়ান না কেন, আমি ভালোবাসা দিয়েই তার উত্তর দেব। যদি প্রধানমন্ত্রী মোদির বাবা-মা’ও কোনো দোষ করে থাকেন, আমি তাঁদের নিয়ে কোনো কটুবাক্য বলব না।’

রাহুল বলেন, ‘দেশের সত্যিকারের পরিস্থিতি দেখতে পারছেন না মোদি। তিনি ভুলে গেছেন যে, শুধু বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ভারতের জনগণ তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করেনি।’

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথমবারের মতো সংবাদ সম্মেলন করায় নরেন্দ্র মোদির প্রশংসাও করেছেন কংগ্রেস সভাপতি। তিনি বলেন, ‘এখন প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করছেন। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করতে চাই যে, কেন তিনি রাফাল ইস্যুতে আমার সঙ্গে বিতর্কে অংশ নেননি? আমি তাঁকে বিতর্কে অংশ নিতে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলাম। সংবাদমাধ্যমকে এখন বলে দিন, কেন বিতর্ক করলেন না?’

নির্বাচনের ফলাফল প্রসঙ্গে রাহুল বলে দিয়েছেন, ‘আমি স্পষ্ট করেই বলেছি যে, ২৩ মে জনগণ তা নির্ধারণ করবে এবং জনগণের রায় জানার পর আমরা একটি সিদ্ধান্ত নেব।’