আইনভঙ্গকারী থেকে আইনপ্রণেতা?

ভারতীয় নির্বাচনের প্রধান দুটি দল বিজেপি এবং কংগ্রেসের প্রতীক সমৃদ্ধ এলইডি বোর্ডের চাহিদা বেড়েছে। ছবি: রয়টার্স।
ভারতীয় নির্বাচনের প্রধান দুটি দল বিজেপি এবং কংগ্রেসের প্রতীক সমৃদ্ধ এলইডি বোর্ডের চাহিদা বেড়েছে। ছবি: রয়টার্স।

ভারতে চলমান নির্বাচনী দৌড়ে একটি ক্ষেত্রে সবার আগে রয়েছে ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। নির্বাচনে অংশ নেওয়া বড় বড় দলের যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, এর মধ্যে বিজেপি এক নম্বরে। এর ঠিক পরই রয়েছে অপর প্রধান দল কংগ্রেস। নির্বাচনে নজরদারি করা একটি প্রতিষ্ঠানের তথ্যের বরাতে আজ শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ কথা জানানো হয়।

নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত এই প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। মূলত, স্বচ্ছতা এবং ভারতীয় ফৌজদারি বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতার কথা মাথায় রেখে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ভারতের বিচারব্যবস্থা এতটাই ধীরগতিতে এগোয় যে একটি মামলার সমাধান হতে বছরের পর বছর পার হয়ে যায়।

খুন থেকে শুরু করে দাঙ্গার অভিযোগ থাকা প্রার্থীর সংখ্যা প্রতিটি নির্বাচনে ক্রমে বাড়ছে। বিশ্লেষকদের দাবি, রাজনৈতিক দলগুলো তাঁদের দিকে ছুটছে, কারণ নির্বাচনে অংশ নিতে যে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকার প্রয়োজন, তার পর্যাপ্ত জোগান রয়েছে এসব ব্যক্তির হাতে। কাজেই স্থানীয় বেশ কিছু শক্তিশালী প্রার্থী এবার জয়ী হতে চলেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া মোটামুটি প্রতি পাঁচজনে একজন প্রার্থীর নামে রয়েছে অনিষ্পন্ন ফৌজদারি মামলা। অলাভজনক প্রতিষ্ঠান গণতান্ত্রিক সংস্কার সংস্থা (এডিআর) প্রার্থীদের বিবৃতি বিশ্লেষণ করে জানায়, গতবারের নির্বাচনের তুলনায় অভিযুক্ত প্রার্থীর সংখ্যা ১৭ শতাংশ বেড়েছে এবং ২০০৯ সালের নির্বাচনের তুলনায় তা ১৫ শতাংশ বেড়েছে।

এ উপাত্ত থেকে জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির ৪০ শতাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন, হত্যাসহ ফৌজদারি মামলা রয়েছে। কংগ্রেসের ক্ষেত্রে এ হার ৩৯ শতাংশ। ছোট দলগুলোর মধ্যে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) এদিক থেকে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। তাদের শতকরা প্রায় ৫৮ ভাগ প্রার্থীর নামে ফৌজদারি মামলা রয়েছে।

গত মাসে শুরু হওয়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, বিজেপি এবং তাদের জোট অতিকায়, টালমাটাল এই নির্বাচনী দৌড়ে এগিয়ে আছে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে ভোট গণনা শুরু হবে।

এডিআরের প্রধান অনিল ভার্মা জানান, দলগুলো কেবল নিজেদের জয়ের কথা ভাবে। সে কারণেই অর্থ, ক্ষমতা আর পেশিশক্তিসম্পন্ন প্রার্থীদের বেছে নেওয়া হয়, যাতে জয়ের পথে কোনো বিঘ্ন না ঘটে।

২৪০টি মামলা নিয়ে বিজেপির কে সুরেন্দ্রান অনিষ্পন্ন অপরাধে অভিযুক্ত প্রার্থীদের তালিকায় শীর্ষ স্থানে রয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে দাঙ্গা, অনধিকার প্রবেশ, হত্যাচেষ্টাসহ বহু অভিযোগ রয়েছে। সুরেন্দ্রানের দাবি, মাতৃভূমি কেরালার মন্দিরে ঋতুমতী মেয়ে ও নারীদের প্রবেশাধিকারের বিরোধিতা করে বিজেপির হয়ে প্রচারণায় নেমেছিলেন বলে এত মামলার ধাক্কা সামলাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি, বাইরে থেকে দেখলে যে-কেউ আমাকে ভয়ংকর অপরাধী ঠাওরাতে পারে। কিন্তু বাস্তবে আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। এসবই রাজনীতির খেলা।’

কংগ্রেস প্রার্থী দিয়ান কুরিয়াকোসের বিরুদ্ধে ২০৪টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। এডিআরের তথ্য অনুযায়ী, অভিযুক্ত প্রার্থীদের তালিকায় তিনি দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছেন। কেরালার ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক অস্থিরতা সহিংসতায় রূপ নেওয়ায় তাঁর নামে এত মামলা হয়েছে। এ ব্যাপারে কুরিয়াকোসের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে দলের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, তিনি নির্দোষ। মুখপাত্র বলেন, কেরালা সরকারের উসকানিতে কুরিয়াকোসের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে পুলিশ।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা জানান, অনেক ক্ষেত্রে জনতা অভিযুক্ত প্রার্থীদেরই নির্বাচিত করে। কারণ, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করার বেলায় এই প্রার্থীরা এগিয়ে থাকেন। ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলে স্থানীয় শক্তিশালী প্রতিনিধিরা বিবাদে মধ্যস্থতা করে যথাযথ বিচার করে।

হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক কে সি সুরি বলেন, শক্তিশালী লোক যদি অপরাধীও হন, তাঁরা নিজস্ব পদ্ধতিতে সমস্যার প্রতিকার করার চেষ্টা করেন।

এডিআরের পৃথক এক জরিপে জানা যায়, গত বছর আড়াই লাখ ভোটারের মধ্যে ৯৮ শতাংশই মনে করে, যাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড আছে, সংসদে তাদের ঠাঁই হওয়া উচিত না। তবে বর্ণপ্রথা বন্ধ করতে ‘ভালো কাজ’ করে অপরাধী হয়েছেন—এমন প্রার্থীকে ভোট দিতে চান ৩৫ শতাংশ ব্যক্তি।