ভিডিও ফাঁস, অস্ট্রিয়ায় সরকার পতনের মুখে

অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার বল হাউস স্কয়ারের সামনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার বল হাউস স্কয়ারের সামনে নতুন নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রিয়ায় ক্ষমতাসীন জোট সরকারের অন্যতম শরিক কট্টরবাদী ফ্রিডম পার্টির প্রধান দেশটির সহকারী চ্যান্সেলর হাইঞ্জ ক্রিস্টিয়ান স্ট্রাখের গোপন ভিডিও প্রকাশের পর রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থা চলছে দেশটিতে। ভিডিও প্রকাশের জেরে দেশটির সরকার পতনের মুখে পড়েছে।

গোপন ভিডিও প্রকাশের পর গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় হাইঞ্জ ক্রিস্টিয়ান স্ট্রাখে পদত্যাগ করেন। এরপরই অস্ট্রিয়ার ক্রিস্ট্রিয়ান গণতান্ত্রিক দলের নেতা চ্যান্সেলর সিবাস্থিয়ান কুর্জ দেশটির প্রেসিডেন্ট আলেক্সজান্ডার ফন ডের বেলিনের সঙ্গে দেখা করেন। প্রেসিডেন্ট অবিলম্বে জোট সরকার বিলুপ্ত করে নতুন নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করতে বলেছেন। গতকাল সন্ধ্যায় অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সিবাস্থিয়ান কুর্জ জানান, কট্টরবাদীদের সঙ্গে জোট বেঁধে ‘যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়’।

গোপন ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার ঘটনায় গতকাল রাজধানী ভিয়েনার বল হাউস স্কয়ারের সামনে পাঁচ হাজার মানুষ নতুন নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন। সম্ভবত আগামী সেপ্টেম্বর মাসে অস্ট্রিয়াতে নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

২৩ থেকে ২৬ মে অনুষ্ঠিতব্য ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে বর্ণবাদী, অভিবাসী ও ইসলামবিদ্বেষী অস্ট্রিয়ার কট্টরবাদী ফ্রিডম পার্টির এই গোপন আর্থিক লেনদেনের বিষয় অন্য দেশগুলোর কট্টরবাদী দলগুলোর ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ইতিমধ্যে জার্মান পার্লামেন্টের প্রধান বিরোধী দল অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড দলটির আর্থিক অনিয়ম নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।

অস্ট্রিয়ায় ২০১৭ সালে নির্বাচনের আগে অবৈধ রাশিয়ান পুঁজি ব্যবহার করতে দেওয়ার কথোপকথনের একটি ভিডিও প্রকাশিত হওয়ার পর ক্ষমতাসীন অস্ট্রিয়ার জোট সরকারের ওপর চাপ বেড়ে যায়। জার্মানির দুটি স্বনামধন্য পত্রিকা ডের স্পিগেল ও সুদ ডয়েচে জাইটুং গোপনে ধারণ করা ভিডিওটি গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তাদের অনলাইন সংস্করণে খবরসহ প্রকাশ করে। অবৈধ রাশিয়ান পুঁজি অস্ট্রিয়াতে ব্যবহার করতে দেওয়ার এই ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর অস্ট্রিয়ার কট্টরবাদী ফ্রিডম পার্টির প্রধান ও দেশটির সহকারী চ্যান্সেলর হাইঞ্জ ক্রিস্টিয়ান স্ট্রাখে পদত্যাগ করেছেন।

ভিডিওটি ভূমধ্যসাগরীয় পর্যটন দ্বীপ ইবিজায় ২০১৭ সালের জুলাইয়ে একটি শৌখিন ভিলায় গোপনে ধারণ করা হয়েছিল। ভিডিওতে দেখা গেছে, কট্টরবাদী ফ্রিডম পার্টির প্রধান ও বর্তমানে দেশটির সহকারী চ্যান্সেলর হাইঞ্জ ক্রিস্টিয়ান স্ট্রাখে এবং তাঁর দলের সহযোগী, ভিয়েনার সাবেক মেয়র ও বর্তমানে অস্ট্রিয়ার পার্লামেন্টে কট্টরবাদী ফ্রিডম পার্টির দলনেতা জোহান গুডেনস দুজন তরুণীর সঙ্গে কথা বলছেন। আরও দেখা যায়, সোফায় গা এলিয়ে আরাম করা ভঙ্গিতে বসে শ্যাম্পেন পান করতে করতে অবৈধ রাশিয়ান পুঁজি কীভাবে অস্ট্রিয়ায় বৈধভাবে ব্যবহৃত হবে, তা নিয়ে পরিকল্পনা করছেন।

অস্ট্রিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচনের তিন মাস আগে এই অবৈধ পুঁজির ব্যবহার নিয়ে আলোচনায় কট্টরবাদী ফ্রিডম পার্টিকে বিরাট অঙ্কের চাঁদা দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়। অস্ট্রিয়ার পার্লামেন্ট নির্বাচনে অযাচিতভাবে শরণার্থী ও মুসলিম বিদ্বেষকে কাজে লাগিয়ে ফ্রিডম পার্টি নির্বাচনে ভালো ফল করে। গত বছর ডিসেম্বরে অস্ট্রিয়ার ক্রিশ্চিয়ান গণতান্ত্রিক দলটির সঙ্গে জোট বেঁধে কট্টরবাদী ফ্রিডম পার্টি জোট সরকার গঠন করে। পরে কট্টরবাদী ফ্রিডম পার্টির প্রধান হাইঞ্জ ক্রিস্টিয়ান স্ট্রাখে দেশটির সহকারী চ্যান্সেলর নিযুক্ত হন।

শুক্রবার জার্মানির দুটি পত্রিকার অনলাইনে অস্ট্রিয়ার দুই ক্ষমতাসীন কট্টরবাদী রাজনীতিকদের এই কেলেঙ্কারিপূর্ণ ভিডিওটি প্রকাশিত হওয়ার ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই এই দুই রাজনীতিক পদত্যাগ করেছেন। অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনাতে শনিবার ছুটির দিন বহু লোক অস্ট্রিয়ার জোট সরকারকে পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচনের দাবি করেছেন।