ভারতের নির্বাচন: বুথ ফেরত সমীক্ষা হয়তো শেষ কথা নয়

নরেন্দ্র মোদি
নরেন্দ্র মোদি

বুথ ফেরত সমীক্ষা হতাশজনক হলেও বিজেপি-বিরোধীরা হাল ছাড়ছে না। বরং তারা নিজেদের সংঘবদ্ধ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

ভারতে এক্সিট পোলের রেকর্ড বরাবরই মিশ্র। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ এক্সিট পোল মোটামুটিভাবে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারকে এগিয়ে রাখলেও ২০০৪ সালে তারা ব্যর্থ হয়। ‘ইন্ডিয়া শাইনিং’ প্রচার সত্ত্বেও ক্ষমতা দখল করে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ। ২০০৯ সালের ভোটেও চূড়ান্ত ব্যর্থ হন বুথ ফেরত সমীক্ষকেরা। মনমোহন সিং সরকার দ্বিতীয়বার ক্ষমতাসীন হয়। এবার সমীক্ষকেরা যে নির্ভুল, ২৩ তারিখের আগে তা হলফ করে বলা যাবে না। এই পরিস্থিতিতে বিরোধীরা তৎপর। তেলেগু দেশম নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু বিরোধীদের কাছাকাছি আনার যে প্রচেষ্টা শুরু করেছেন, তা আজ রোববারেও অব্যাহত। লক্ষ্ণৌ থেকে তিনি দিল্লি ফিরে আজ আরও একবার কথা বলেন সোনিয়া গান্ধী ও রাহুলের সঙ্গে। সোমবার দিল্লি আসছেন মায়াবতী। সোনিয়া ও রাহুলের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।

এক্সিট পোল অনুযায়ী বিজেপি ও তার জোট সবচেয়ে বেশি ৩০৬ এবং সবচেয়ে কম ২৬৭ আসন পেতে যাচ্ছে। গতবার এই সংখ্যাটি ছিল ৩৩৬। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, আগেরবারের মতো ততটা ভালো বিজেপি ও তার জোটসঙ্গীরা করছে না। আবার ২০১৪ সালে কংগ্রেস ও জোটসঙ্গীরা পেয়েছিল ৫৯টি আসন। এবার এই জোটের সবচেয়ে কম প্রাপ্তি ১২৭, সবচেয়ে বেশি ১৪১। এর অর্থ, বিজেপি গতবারের মতো ভালো না করলেও সরকার গড়ার মতো গরিষ্ঠতা পেতে চলেছে। অন্য দিকে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা আগেরবারের চেয়ে অনেক ভালো করলেও সরকার গড়ার মতো ততটা ভালো করতে পারেনি। আপাতত সবার নজর তাই ২৩ তারিখে আসল ফলের দিকে।

এই জরিপের বিশ্লেষণ ঠিক হলে বলা যায়, হিন্দি বলয়ে যতটা ভালো করবে বলে বিরোধীরা মনে করেছিল, ততটা হয়নি। একমাত্র উত্তর প্রদেশে সমাজবাদী ও বহুজন সমাজ পার্টি জোটবদ্ধ হয়ে মোদির রথ রোখার চেষ্টা করেছে। কংগ্রেস শাসিত তিন রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে জরিপ অনুযায়ী ফল হলে এটা স্পষ্ট, রাজ্যে কংগ্রেসকে ভোট দিলেও কেন্দ্রে তারা মোদির ওপর ভরসা রাখতে চেয়েছে। গুজরাটেও তারা কংগ্রেসকে সেভাবে দাঁত ফোটাতে দেয়নি। হিন্দি বলয়ে মোদিকে আরও একবার সুযোগ দেওয়ার যে ইচ্ছা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার পর্বে দেখা গিয়েছে, ভোটে তার প্রতিফলন ঘটেছে বলে এক্সিট পোলের ফল দেখে মনে হচ্ছে। বিরোধীদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কারও না থাকাও একটা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তা ছাড়া, পুলওয়ামা-বালাকোট-পাকিস্তানকে কেন্দ্র করে মোদি প্রচার পর্বে দেশের নিরাপত্তাকে যেভাবে তুলে ধরেছেন, মানুষ তাতে প্রভাবিত হয়েছে।

হিন্দি বলয়ের লোকসান বিজেপি পোষাতে চেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। জরিপ অনুযায়ী পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ১২ থেকে ১৬টি আসন পাচ্ছে। পাশের রাজ্য ওডিশায় পাচ্ছে ৮ থেকে ১০টি। দুটি হিসাব সত্য হলে বিজেপির পক্ষে এ এক বিরাট ঘটনা। ওডিশায় বিধানসভার ভোটও হয়েছে এই সঙ্গে। এই ভোটের পর সেখানে রাজ্য দখলও বিজেপির পক্ষে অসম্ভব হবে না। দিল্লিতে বিজেপি ৭টি আসনেই জিতেছিল। এবারও কম করে ৬টি জেতার সম্ভাবনার ইঙ্গিত রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থার অভিমত অনুযায়ী তামিলনাড়ুতেও বিজেপি ১১টির মতো আসন পেতে পারে জোটসঙ্গীর সাহায্যে। কর্ণাটকে পাটিগণিতের হিসাব ছিল কংগ্রেস-জেডিএসের দিকে। কিন্তু সেখানে জোট যে কার্যকর হয়নি তা বোঝা যাচ্ছে এই সমীক্ষায়। আরও একটি বিষয় পরিষ্কার। বিজেপিকে রোখার জন্য বিরোধীদের যেভাবে সর্বত্র জোটবদ্ধ হওয়ার দরকার ছিল, তাতে তারা ব্যর্থ। সেই সুযোগ পুরোপুরি নিয়েছে বিজেপি।

এই প্রথম ভারতের লোকসভা ভোট হলো এমন একমুখী। মোদির পক্ষে-বিপক্ষে গণভোটের রূপ নিয়েছিল এবারে ভোট। বুথ ফেরত জরিপ সত্য হলে বলা যায়, সেই গণভোটের রায় মোদির পক্ষে গেছে। কারও একক ক্ষমতায় এই ভাবে পরপর দুবার সরকার গড়তে পারলে সেটা ইতিহাস হবে।

কিন্তু তবুও দেশবাসীকে শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে। সমীক্ষা যাই হোক, তা মূল ফল নয়। তা ছাড়া কথায় আছে, কাপ ও ঠোঁটের মধ্যবর্তী ফাঁক দিয়ে অনেক সময় চা ছলকে পড়ে। গতকালই সব আগাম জরিপের ফল ভুল প্রমাণ করে অস্ট্রেলিয়ায় আবার ক্ষমতায় এসেছে শাসক জোট।