উ.পূর্ব ভারতে বুথফেরত নানা সমীক্ষায় নানা মত

টাইমস নাউ-এর দুটি সমীক্ষায় আসাম নিয়ে দুই রকম প্রতিবেদন। ওপরেরটি টাইমস নাউ-ভিএমআরের সমীক্ষায় পাওয়া আভাস। আর পরেরটি টাইমস নাউ-সিএনএক্স করা সমীক্ষায় পাওয়া ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত
টাইমস নাউ-এর দুটি সমীক্ষায় আসাম নিয়ে দুই রকম প্রতিবেদন। ওপরেরটি টাইমস নাউ-ভিএমআরের সমীক্ষায় পাওয়া আভাস। আর পরেরটি টাইমস নাউ-সিএনএক্স করা সমীক্ষায় পাওয়া ফলাফল। ছবি: সংগৃহীত

কংগ্রেস না বিজেপি? উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষ কাকে চাইছেন তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। এমনকি বুথফেরত সমীক্ষায়ও একমত হওয়া গেল না। তাই এনআরসি (নাগরিক পঞ্জি) বা ক্যাবের (নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল) কোনো প্রভাব এখানকার ভোটে পড়েছে কি না, সেটাও স্পষ্ট নয়।

উত্তর-পূর্ব ভারতের ৮টি রাজ্যে ২৫টি আসনে লোকসভার ভোট হয়। এর মধ্যে ১৪টি আসামে। আসামের সম্ভাব্য ফল নিয়েও সমীক্ষকদের মধ্যে মতবিরোধ স্পষ্ট।

২০১৪ সালে অসমের ১৪টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ৭টি আসন। কংগ্রেস ও এআইডিএমকে পায় ৩টি করে আসন। অন্য আসনটিতে জেতেন নির্দল প্রার্থী। এবার আসামের সম্ভাব্য ফল হতে পারে বিজেপির ৬টি, কংগ্রেসের ৭টি এবং অন্যরা পেতে পারে ১টি আসন। এই দাবি টাইমস নাউ ও সিএনএক্স সমীক্ষকদের। আর এটি সত্যি হলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, এনআরসি ও ক্যাবই কাল হলো বিজেপির জন্য। তাঁদের যুক্তিতে বাঙালি ও অসমিয়া উভয়েই ক্ষিপ্ত হওয়ায় এই ফল।

তবে এর বিপরীত ছবি উঠে এসেছে টাইমস নাউ-ভিএমআরের সমীক্ষায়। সেখানে বলা হয়েছে বিজেপির এনডিএ পেতে পারে ৮টি আসন। কংগ্রেসের থাকবে ৩টি কেন্দ্র। অন্যান্যরা জিততে পারেন ১টি কেন্দ্রে। আবার এনডিটিভি বলছে বিজেপি ও ইউপিএ উভয়েরই আসন বাড়ছে। বিজেপি পেতে চলেছে ৯টি এবং কংগ্রেস ৪টি। আসন কমবে এআইইউডিএফের। নির্দলের জেতার সম্ভাবনাও কম।

নিউজ এইটিন ইউরোপের একটি সমীক্ষক দলকে দিয়ে বুথফেরত সমীক্ষার যে ফল দেখাচ্ছে, তাতে বিজেপি পেতে পারে ৮ থেকে ১০টি আসন। ২ থেকে ৪টি পাবে কংগ্রেস। অন্যান্যদের জন্য থাকছে ১ থেকে ৩টি আসন। চাণক্য ও নিউজ টুয়েন্টি ফোরের সমীক্ষায় আসামে বিজেপিকে দেওয়া হয়েছে ১০টি আসন। কংগ্রেস ৩টি ও অন্যান্যরা জিততে পারে ১টি মাত্র আসনে।

সব কটি সমীক্ষায় একটি বিষয় স্পষ্ট—আঞ্চলিক দলগুলি তেমন প্রভাব ফেলতে পারছে না আসামে। এমনকি এআইইউডিএফ গতবার ৩টি আসন জিতলেও এবার তাঁদের জয় অনিশ্চিত। তবে আসামের সীমান্তবর্তী মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরাম ও সিকিমে আঞ্চলিক দলেরই রমরমার আভাস বুথফেরত সমীক্ষায়। ত্রিপুরা, মণিপুর ও অরুণাচল প্রদেশে বিজেপির ভালো ফলের সম্ভাবনা আছে।

তবে সমীক্ষকদের প্রতিবেদনে পার্থক্য রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোও তাই আমল দিতে নারাজ। বিজেপি এখনো দাবি করছে, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তাদের জোট ২৫-এর মধ্যে ২৩টি আসন পাবে। আসামের বিজেপি রাজ্য সভাপতি রঞ্জিত দাশ সাংবাদিকদের কাছে এদিন দাবি করেন, ‘দিল্লিতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ফের সরকার হচ্ছেই। উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষও থাকছেন বিজেপির পক্ষেই।’

অন্যদিকে আসামের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের দেবব্রত শইকিয়া মোবাইল ফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক্সিট পোলের ওপর ভিত্তি করে মন্তব্য না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। তবে আমার বিশ্বাস আসাম বা উত্তর পূর্বাঞ্চলে কংগ্রেস ভালো ফল করবেই।’

সমীক্ষকদের মতো রাজনৈতিক নেতারাও এখন দাবি-পাল্টা দাবিতে ব্যস্ত। সম্ভাব্য ফল নিয়ে চর্চা চলবেই ২৩ মে পর্যন্ত। সেদিন গণনা শেষ হলেই জানা যাবে গোটা দেশের সঙ্গে উত্তর পূর্বাঞ্চলের মানুষও কার প্রতি আস্থা রেখেছেন। আর সেই আস্থার ভিত্তিতেই বোঝা যাবে এবারের ভোটে এনআরসি বা ক্যাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত ইস্যু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভোটারদের মধ্যে আদৌ প্রভাব ফেলেছিল কিনা।