ক্যামেরনের পরিণতি হচ্ছে মেরও

ডেভিড ক্যামেরন ও থেরেসা মে। ছবি: রয়টার্স
ডেভিড ক্যামেরন ও থেরেসা মে। ছবি: রয়টার্স

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ ‘ব্রেক্সিট’ নিয়ে গৃহবিবাদের জের ধরে অবশেষে পদত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। মন্ত্রিসভা ও দলীয় আইনপ্রণেতাদের প্রবল চাপের মুখে আগামী জুনে পদত্যাগ করবেন বলে শুক্রবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে থেরেসা মে জানিয়েছেন।

২০১৬ সালের জুন মাসে ব্রেক্সিট গণভোটের পরাজয় মেনে নিয়ে পদত্যাগ করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতায় বসেছিলেন থেরেসা মে। কিন্তু ব্রেক্সিট কার্যকর করতে পারেননি। বরং এ নিয়ে তিনি তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মুখে পড়েন। শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় আসার তিন বছরের মাথায় ব্রেক্সিট গণভোটের রায় বাস্তবায়ন করতে না পারার ব্যর্থতা নিয়ে সরে দাঁড়াচ্ছেন মে। ফলে ব্রেক্সিট ইস্যুতে ডেভিড ক্যামেরনের মতো পরিণতি হচ্ছে থেরেসা মেরও।

শুক্রবার জাতির উদ্দেশে ভাষণে থেরেসা মে বলেন, আগামী ৭ জুন তিনি কনজারভেটিভ দলের প্রধানের পদ ছাড়বেন। তবে নতুন নেতা নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকবেন তিনি।

এ দিকে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি জানিয়েছে, জুলাইয়ের মধ্যেই থেরেসা মের উত্তরসূরি নির্বাচনের কাজ সম্পন্ন করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থেরেসা মে গত তিন বছরের পুরোটাই যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে এক বিচিত্র অধ্যায় হিসেবে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এ সময় তাঁর মন্ত্রিসভা থেকে ৩৬ জন পদত্যাগ করেন, যাঁদের ২১ জন শুধু ব্রেক্সিট বিরোধের জের ধরে পদত্যাগ করেছেন। দেশটিতে এত অল্প সময়ে এত বেশিসংখ্যক মন্ত্রীর পদত্যাগের ঘটনা আর ঘটেনি। কেবল বিরোধী লেবার দলকে কোণঠাসা করতে ২০১৭ সালে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিয়েছিলেন মে।

ওই নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে মে নিজেই কোণঠাসা হয়ে পড়েন। মাত্র ১০ আসন জেতা উত্তর আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির সঙ্গে সমঝোতা করে তিনি সরকারে বহাল থাকেন। ওই নির্বাচনই তাঁর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। গত জানুয়ারি মাসে তাঁর উত্থাপিত ব্রেক্সিট চুক্তি ২৩০ ভোটের ব্যবধানে প্রত্যাখ্যাত হয়। এটিও ব্রিটিশ পার্লামেন্টে সরকারের সবচেয়ে শোচনীয় পরাজয়ের রেকর্ড। এ ছাড়া স্বল্পতম সময়ে বিদায় নেওয়া প্রধানমন্ত্রীদের তালিকার পঞ্চম স্থানে যুক্ত হতে যাচ্ছেন মে।

আবেগঘন বক্তব্যে থেরেসা মে বলেন, ২০১৬ সালের গণভোটে যুক্তরাজ্যের মানুষ যে রায় দিয়েছিলেন, তা কার্যকরে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। এই ‘গভীর বেদনাদায়ক’ ব্যর্থতা তাঁকে বাকি জীবন পীড়া দেবে।

ইইউর সঙ্গে সম্পাদিত বিচ্ছেদ বিলে সমর্থন আদায়ে বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতার সব চেষ্টা করেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বলেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যিনিই দায়িত্ব নেন না কেন, পার্লামেন্টে সমঝোতার ভিত্তিতেই ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন করতে হবে।

বক্তৃতার শেষ পর্যায়ে থেরেসা মের গলা ধরে আসে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘যে দায়িত্ব নেওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে সম্মানজনক ছিল, শিগগিরই আমি সেটি ছেড়ে যাব। দেশের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, তবে সর্বশেষ নারী হিসেবে নয়।’

এদিকে বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণাকে ‘সঠিক কাজ’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ‘থেরেসা মে সরকার পরিচালনা দূরে থাক, তাঁর নিজ দল চালাতেও ব্যর্থ। দেশবাসী বহু আগ থেকেই এই বাস্তবতা জানে। কিন্তু মে এখন সেটি মেনে নিলেন।’ করিবন বলেন, ‘নতুন প্রধানমন্ত্রীকে অবশ্যই সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে, যাতে দেশের ভবিষ্যৎ বিষয়ে জনগণ সিদ্ধান্ত দিতে পারে।’

ব্রেক্সিট কার্যকরে থেরেসা মে দীর্ঘ আড়াই বছরের চেষ্টায় ইইউর সঙ্গে একটি বিচ্ছেদ চুক্তি করেছিলেন। কিন্তু বারবার চেষ্টা করেও তিনি এই চুক্তিতে নিজ দলের কট্টর ব্রেক্সিটপন্থী ও পার্লামেন্টের বিরোধী দলগুলোর সমর্থন নিতে পারেননি। থেরেসা মের পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের কাজটি আরও জটিল হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন দেশটির রাজনীতি-বিশ্লেষকেরা।