সাইফুল্লাহ ওজাকিকে নিয়ে নীরব জাপান

সাইফুল্লাহ ওজাকি
সাইফুল্লাহ ওজাকি

বিদেশে নিজেদের নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে জাপানের উদ্বেগ প্রশংসনীয়। অনেক ক্ষেত্রেই দেশের নাগরিকদের জীবন যেন ঝুঁকিপূর্ণ না হয়, সে জন্য আগ বাড়িয়ে ভ্রমণ–সতর্কতা জারি করা হচ্ছে জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রচলিত একটি নিয়ম। তিন বছরের বেশি সময় ধরে জাপানের এই ভ্রমণ–সতর্কতার আওতাধীন একটি দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে রংপুরে এক জাপানি নাগরিক নিহত হওয়ার পর থেকে জারি থাকা ভ্রমণ–সতর্কতা জাপান সরকার ২০১৬ সালের হোলি আর্টিজান ঘটনার পর ফের নিশ্চিত করে। দুঃখজনক সেই ঘটনার পর ভ্রমণ–সতর্কতা জাপানিদের দৃষ্টিতে আরও অনেক বেশি যুক্তিসংগত প্রমাণিত হওয়ায় এখন পর্যন্ত বলবৎ থেকে গেছে সেই সতর্কতা এবং খুব শিগগির যে তা তুলে নেওয়া হবে, সেই লক্ষণও দৃশ্যমান নয়। 

আগাম ভ্রমণ–সতর্কতার পাশাপাশি বিদেশে নিজেদের নাগরিকদের যেকোনো রকম বিপজ্জনক অবস্থার মুখে পড়লে জাপান সরকার এঁদের রক্ষায় তৎপর হয়ে ওঠে এবং নাগরিকেরা যেন বিপদমুক্ত হতে পারেন, নানা রকম পথে সেই প্রচেষ্টা সরকার চালায়। পাশাপাশি দেশের সংবাদমাধ্যমও নিয়মিতভাবে ঘটনার ওপর আলোকপাত করে দেশবাসীকে সর্বশেষ পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করে দেয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে যে ব্যতিক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে, সেটি হচ্ছে ইসলামিক স্টেটের চিহ্নিত সন্ত্রাসী, জাপানি নাগরিক সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ ওজাকি ও তাঁর পরিবারকে কেন্দ্র করে।

ওজাকির ইরাকি কুর্দিস্তানে আটক হওয়ার ঘটনা বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে বেশ কয়েক দিন আগে প্রচার করলেও জাপান সরকার কিংবা জাপানের সংবাদমাধ্যম এরপরও প্রায় সপ্তাহখানেক নীরব থেকেছে। সেই নীরবতা ভাঙে চলতি মাসের ২২ তারিখে প্রভাবশালী দৈনিক আসাহি শিম্বুনে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবর এবং সেই একই দিনে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ফুজি টেলিভিশনের প্রচারিত খবর ও ভিডিও ফুটেজের মধ্যে দিয়ে। আসাহির খবরে ওজাকির কুর্দিস্তানে আটক থাকার কথা বলা হলেও ওজাকির জাপানি স্ত্রী ও সন্তানদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তার কোনো উল্লেখ নেই।

অন্যদিকে, ফুজি টেলিভিশনের খবরেও বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয় যে ওজাকির স্ত্রী সিরিয়ায় বিমান হামলায় প্রাণ হারান এবং ওজাকি এখন ইরাকে কুর্দিদের হাতে বন্দী অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। সন্তানদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তার উল্লেখ না করা হলেও ফুজি টেলিভিশন জানায়, চলতি মাসের ১৮ তারিখে ওজাকির তিন সন্তানকে নারিতা বিমান বন্দর দিয়ে জাপানে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। টেলিভিশন সংবাদের সঙ্গে প্রচারিত সংক্ষিপ্ত এক ভিডিও ফুটেজে বিমানবন্দর থেকে কয়েক ব্যক্তিকে মালামালসহ বের হয়ে একটি গাড়িতে উঠতে দেখা যায়। টেলিভিশন সংবাদে এ রকম মন্তব্য করা হয় যে বিদেশে জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে সরকার হয়তো ওজাকির জীবিত তিন সন্তানকে দেশে ফিরিয়ে এনে থাকবে।

২২ মে সেই সংবাদ প্রচারিত হওয়ার পর থেকে জাপান সরকার এবং দেশের সংবাদমাধ্যম মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে এবং এ বিষয়ে আর কোনো কিছুই প্রচার করেনি। সংশ্লিষ্ট কিছু কিছু সূত্র মনে করছে, জাপানি পাসপোর্টধারীদের বিদেশে এ রকম অপকর্মে জড়িত হওয়ার ঘটনা বিড়ম্বনামূলক বিবেচনা করেই হয়তো তাদের এই নীরবতা পালন।

বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া সাইফুল্লাহ ওজাকি বেশ কয়েক বছর আগে জাপানি নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। জাপানে দ্বৈত নাগরিকত্ব স্বীকৃত না হওয়ায় বিদেশিরা জাপানি নাগরিকত্ব গ্রহণ করলে নিজ দেশের নাগরিকত্ব তাদের অস্বীকার করতে হয়। সেদিক থেকে ওজাকি সম্পূর্ণভাবেই জাপানি নাগরিক। ফলে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এই সন্ত্রাসীর বেলায় বাংলাদেশের কোনো রকম দায়দায়িত্ব একেবারেই নেই।