নতুন করে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ মিয়ানমারে

এএফপি ফাইল ছবি।
এএফপি ফাইল ছবি।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের পর এবার বৌদ্ধ বিদ্রোহীদের বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা এবং নির্যাতন চালিয়ে নতুন করে ‘যুদ্ধাপরাধ’ করছে দেশটির সামরিক বাহিনী। গতকাল বুধবার এই অভিযোগ এনেছে যুক্তরাজ্যের লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

রাখাইনে জাতিগত বৌদ্ধ বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) মোকাবিলায় কয়েক মাসে মিয়ানমারের সশস্ত্র বাহিনী সেখানে কয়েক হাজার সেনা ও ভারী অস্ত্র মোতায়েন করেছে। বৌদ্ধ বিদ্রোহীরা রাখাইনে জাতিগত বৌদ্ধদের জন্য ওই এলাকার স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে আসছে।

এর আগে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তাচৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার জেরে সেখানে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান শুরু করে মিয়ানমারের সেনাসদস্যরা। এরপর প্রাণ বাঁচাতে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসে। তারা সবাই অভিযোগ করেছে, মিয়ানমারের সেনারা রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন নির্যাতন চালিয়েছে। জাতিসংঘ এ ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তবে মিয়ানমারের সরকার ও সেনাবাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

অ্যামনেস্টি গতকাল বলেছে, তাদের কাছে ‘নতুন নথি আছে’। এতে দেখা যাচ্ছে, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বর্তমানে সেখানে ‘নতুন করে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে’। সেখানকার জাতিগত মানুষদের ওপর নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গ্রেপ্তার এবং গুমের মতো ঘটনা ঘটাচ্ছে সামরিক বাহিনী।

সহিংসতাপ্রবণ রাখাইনের এই এলাকায় প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। তবে সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে সামনে এসেছে। আর সেনাবাহিনী স্বীকার করেছে, গত মাসে রাখাইনের কিয়াক তানে গ্রামে তারা ছয় বন্দীকে গুলি করে হত্যা করেছে।

বিভিন্ন জাতিগত সাধারণ মানুষদের সাক্ষাৎকার, ছবি, ভিডিও এবং ভূ-উপগ্রহের পাঠানো ছবি বিশ্লেষণ করে এই প্রতিবেদন দিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এতে বলা হয়েছে, বেআইনিভাবে সাতটি হামলা চালানো হয়েছে। এতে ১৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। জাতিগত রাখাইনদের বিরুদ্ধে ভয়ংকর এই সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকায় যে অবশিষ্ট মুসলমানরা রয়েছে, তাদেরও হত্যা করা হচ্ছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আঞ্চলিক পরিচালক নিকোলাস বেকুয়েলিন বলেন, রাখাইনে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর নতুন এই অভিযানের মধ্য দিয়ে সামরিক বাহিনীর ক্ষমাহীনতা, অসংশোধন এবং জবাবদিহিহীনতার বিষয়টি প্রকাশ পাচ্ছে।

তবে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জ মিন তুন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘বেসামরিক মানুষদের ক্ষতি না করে আইন মেনে সেখানে অভিযান পরিচালনা করছে সেনাবাহিনী। এই অভিযান সন্ত্রাসী নির্মূলের জন্য। যেকোনো ধরনের যুদ্ধাপরাধ যাতে না ঘটে, সে জন্য আমরা সচেতন রয়েছি।’

এর আগে গত জানুয়ারিতে রাখাইনে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছিল আরাকান আর্মি। ওই হামলার পর মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সরকার সেখানে বিদ্রোহী দমনে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেয়।