মোদিকে নিয়ে ইউটার্ন টাইমের

>
  • ভোটের আগে–পরে নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে টাইমের দুই প্রতিবেদন
  • আগে সমালোচনা করলেও এখন মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ টাইম
  • বিভাজনকারী মোদিই এখন ভারতকে এক করার কারিগর, বলছে টাইম
  • বিভাজনকারী মোদিই এক ভারতের কারিগর, বলছে টাইম

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনায় মুখর যুক্তরাষ্ট্রের টাইম ম্যাগাজিন এবার তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে। টাইমের ভাষায়, ‘বিভাজনের মূল হোতা’ মোদি হয়ে উঠেছেন ‘ভারতকে এক করার ক্ষেত্রে অবিসংবাদিত নেতা’। সত্যিই বেশ রমরমা যাচ্ছে মোদির। দ্বিতীয়বারের মতো কংগ্রেসকে ঘায়েল করে ইতিহাস গড়ে জয় তুলে নিয়েছেন। এরপরই জুটল এমন তকমা।

গুজরাটে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর সেখানে ভয়াবহ দাঙ্গা হয়েছিল। এ নিয়ে নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা পিছু ছাড়েনি। এরপরই দিল্লি মসনদে বসার পর থেকেই বিশ্বের নজরে নরেন্দ্র মোদি। তাঁকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলে সব সময়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে বদলে নিলেও তাঁর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সমালোচনা হলো, তিনি ভারতকে দুই ভাগে ভাগ করে সাম্প্রদায়িকতার বীজ ছড়িয়েছেন। এটা নিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমেও মাঝেমধ্যে সংবাদ, প্রতিবেদন ও কলাম ছাপা হয়েছে। এবারের নির্বাচনের আগেও হয়েছিল। ভোটের আগে মোদির সমালোচনা করেছিল টাইম।

কয়েক সপ্তাহ আগে ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত লেখক আতিশ তাসির মোদিকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করে একটি নিবন্ধ লেখেন। তাসিরের মূল বক্তব্য ছিল, মোদি জমানায় মুসলিম, খ্রিষ্টান সব ধরনের সংখ্যালঘু, নিম্নবর্ণে হিন্দু ও উদার—সব শ্রেণির মানুষ নিগৃহীত হয়েছে। ভারত তার বিপরীতে হাঁটা শুরু করেছে।

আতিশ তাসির আততায়ীর হাতে নিহত পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের সাবেক গভর্নর সালমান তাসির এবং ভারতীয় সাংবাদিক তাভলিন সিংয়ের ছেলে। তাসিরের ওই লেখার জবাব দেন মোদি। মোদি বলেন, ‘ওই পত্রিকা (টাইম) বিদেশি। আর লেখক নিজেই বলেছেন, তিনি পাকিস্তানি রাজনৈতিক পরিবারের। তাঁকে বোঝার জন্য এটুকুই যথেষ্ট।’

এরপর আসে ২৩ মে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের চেয়ে আসনে এবং শতাংশের নিরিখে অনেক বেশি ভোটে জয় হয় মোদির বিজেপি।

টাইমের লেখা নিয়ে বেশ বিতর্ক চলেছিল। সেসব সমালোচনা কাটিয়ে মোদি আবার দিল্লির মসনদে। আজই দ্বিতীয়বারের মতো আট হাজার বিদেশি অতিথির সামনে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার জন্য প্রায় সব প্রস্তুতি শেষ। এরই মধ্যে ইউটার্ন নিয়ে ভোল পাল্টে ফেলল টাইমও। নরেন্দ্র মোদিকে অন্যতম প্রধান বিভাজনকারী মন্তব্য করা ম্যাগাজিনটিই এখন তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করে লেখা ছাপাল। এবারের বলা হলো, মোদি পুরো ভারতকে যেভাবে এক করেছেন, আগে কোনো প্রধানমন্ত্রী তা পারেননি।

টাইমের সবশেষ প্রতিবেদনে (মঙ্গলবার প্রকাশিত) নরেন্দ্র মোদির প্রশংসা করা হয়েছে। এতে অবশ্য বিজেপি শিবির খুশি হওয়ার কথা। ভোটে কড়া ভাষায় মোদি সম্পর্কে লেখা হলেও এবার ঠিক উল্টো ভাষায় মোদির প্রশংসা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে প্রতিবেদক মনোজ লাড়ুয়া বলছেন, নরেন্দ্র মোদি যেভাবে পুরো দেশকে এক করতে পেরেছেন, তা গত কয়েক দশকে ভারতের কোনো প্রধানমন্ত্রী পারেননি। আর নির্বাচনী মাঠে মোদির সাফল্যের কারণ হিসেবেও একত্র করার এই ক্ষমতাকেই বোঝানো হয়েছে।

নরেন্দ্র মোদি
নরেন্দ্র মোদি

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে থেকে উঠে এসেছেন। তাই তিনি গরিবদের সঙ্গে নিজেকে একাত্ম করতে পারেন। তাঁর শাসনামলে ভারতের যাবতীয় জাতপাতের ভেদাভেদ ঘুচে গেছে। কেটে গেছে সংকীর্ণতা। শুধু তা–ই নয়, মোদির বিরুদ্ধে যে সমালোচনাগুলো করা হয়, তা অনুচিত বলেও মনে করেন এ প্রতিবেদনের লেখক।

প্রতিবেদক মনোজ লাড়ুয়া মোদির দ্বিতীয় মেয়াদে বিজয়ের কারণ বর্ণনা করে বলেছেন, ‘মেধা, সুযোগ সৃষ্টি এবং দেশের চরম দরিদ্রবান্ধব নীতির জন্যই এ বিজয়। সামাজিক নানা কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সংখ্যালঘু ও পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়নের যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছেন। তাঁর সময়ে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত দারিদ্র্য কমেছে।

উল্লেখ্য, মোদির নিন্দাসূচক প্রচ্ছদ প্রতিবেদনটি ছিল টাইম ম্যাগাজিনের নিজস্ব মতামত। কিন্তু এবারের প্রশংসাসূচক লেখাটি একজন লেখকের নিজস্ব মতামত। এবারের লেখাটি মতামত বিভাগেই ছাপিয়েছে টাইম। আর এবারের লেখক মনোজ লড়ুয়া মোদির একান্ত ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তিনি ২০১৪ নির্বাচনে মোদির প্রচার কর্মসূচির দায়িত্বে ছিলেন।