বিজেপিকে রুখতে মমতার দুই বাহিনী

উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটিতে তৃণমূল আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটিতে তৃণমূল আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবার বিজেপিকে রুখতে দুটি বাহিনী গড়ার কথা বলেছেন। একটি ‘জয় হিন্দ বাহিনী’ আর অন্যটি ‘বঙ্গজননী বাহিনী’। জয় হিন্দ বাহিনীর পুরুষ সদস্যরা পরবেন সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি আর বঙ্গজননী বাহিনীর নারীরা পরবেন গঙ্গা-যমুনা পাড়ের শাড়ি। রাজ্যজুড়ে বিজেপির দেওয়া জয় শ্রীরাম ধ্বনির পাল্টা ‘জয় হিন্দ’ ধ্বনি দেওয়া হবে।

মমতা বলেন, জয় হিন্দ বাংলা ও হিন্দি ভাষায় চলে। এটি ছিল নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের কথা। দেখা হলে বা কথা হলে এবার থেকে কুশল বিনিময়ে বলতে হবে জয় হিন্দ। মমতা প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘কেন আমরা বিজেপির স্লোগান মানব?’

লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জিতেছে বিজেপি। পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপির আসন বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার ৪২টি আসনের মধ্যে বিজেপি জিতেছে ১৮টি আসন।

এবার মমতার লক্ষ্য ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন। পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে বিধানসভার ২৯৪টি আসন। এর মধ্যে মমতার দলের রয়েছে ২১১ আসন। আর বিজেপির মাত্র ৩ আসন। লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে রাজ্যের ৮টি বিধানসভার উপনির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে বিজেপি বাগিয়ে নেয় ৪টি আসন। তৃণমূল ৩টি আসন। একটি কংগ্রেস।

মমতা গতকাল বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটিতে তৃণমূল আয়োজিত একটি অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে ঘোষণা দিয়েছেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, আগামী রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এই রাজ্যে একটি আসনও পাবে না, পাবে শূন্য।’ মমতা একই ঘোষণা দিয়েছিলেন সদ্যসমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনেও। বলেছিলেন, এই রাজ্যের ৪২টি আসনই পাবে তৃণমূল। অন্যরা পাবে শূন্য।

গতকাল বিকেলে এবারের লোকসভা নির্বাচনকে ঘিরে যাঁরা বিজেপির অত্যাচারে বারাকপুর আসনের বিভিন্ন অঞ্চলে ঘরছাড়া হয়েছেন, তাঁদের ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান মমতা। তৃণমূলের ডাকা ঘরছাড়াদের এক অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে মমতা বলেন, এই রাজ্যে বিজেপির স্থান হবে না। বিজেপিকে হটিয়ে দেবে রাজ্যবাসী।

মমতা আরও বলেছেন, ‘২০১১ সালে আমরা ক্ষমতা গ্রহণের পর ঘোষণা দিয়েছিলাম, বদলা নয়, বদল চাই। এবার বলছি, সন্ত্রাসের বদলা নেব রাজ্যে শান্তি ফিরিয়ে এনে। বন্ধ করব বিজেপির অত্যাচার, নির্যাতন।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘বিজেপির টাকা নিয়ে এ দিন নৈহাটি-ভাটপাড়ায় কিছু মানুষ আমার গাড়ির সামনে হামলা করতে এসেছিল। কিন্তু আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিইনি।’

মমতা বলেন, বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে বহু তৃণমূল পরিবার ঘরছাড়া হয়েছে। তাঁদের ফিরিয়ে নিতে গতকাল নৈহাটির পৌরসভার সামনে আয়োজিত তৃণমূলের অবস্থান কর্মসূচিতে আসেন তিনি। সেখানেই মমতা বলেন, ‘আমরা বিভাজনের রাজনীতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা বিভেদের রাজনীতি বুঝি না । এই রাজ্যে ধর্মীয় বিভাজন করার রাজনীতি চলবে না। আমি বিজেপির মতো পার্টিকে ঘৃণা করি। মনে রাখবেন, আমি খুব ভয়ংকর মানুষ। আমি ভয় পাই না। এটা গুজরাট নয়?’

মমতা এ–ও বলেন, আমরা বিজেপির দয়ায় নেই। আমাদের সরকারও নির্বাচিত সরকার। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘কোথায় পালাবেন, সিঙ্গাপুর না ব্যাংককে? কোথায় ভোটার হবেন দিল্লিতে? এখন আর আপনাদের ছেড়ে কথা বলবে না তৃণমূল। যারা গুন্ডামি করছে, তারা কেউ রেহাই পাবে না। কত ধানে কত চাল আমি তা বুঝিয়ে দেব।’