নিউইয়র্কের মসজিদগুলোয় প্রহরীর দায়িত্বে কারা?

ছবি: বিবিসি।
ছবি: বিবিসি।

নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলার পর বাড়তি সতর্কতা হিসেবে নিউইয়র্ক শহরের মসজিদগুলোয় বেসরকারি উদ্যোগে চালু হয়েছে বিশেষ প্রহরীসেবা। কিন্তু বাড়তি এ নিরাপত্তাসেবা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বিবিসি অনলাইনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

আগের শুক্রবার ব্রুকলিন মসজিদে জুমার নামাজের আগে মসজিদের বাইরে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের স্কোয়াড কারের আদলে গাড়ি নিয়ে একদল তরুণ এসে হাজির হন। নামাজের সময় মসজিদের সামনে দাঁড় করানো থাকে লাল-সাদা জরুরি লাইট লাগানো গাড়িটি। গাড়ি নিয়ে ঘুরে ঘুরে টহল দেওয়া স্বেচ্ছাসেবী দলটি নিজেদের ‘মুসলিম কমিউনিটি পেট্রোল’ নামে পরিচয় দেয়। নিজেদের তহবিলে পরিচালিত দলটি আশপাশের মসজিদ ও ইসলামি স্কুলগুলোয় বেশি লোকসমাগম দেখলে বাড়তি নিরাপত্তা দিতে পৌঁছে যায়।

স্বেচ্ছাসেবী দলটির অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা নুর রাবাহ একে ‘প্রয়োজনের তাগিদে নিরাপত্তা’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা নিউইয়র্ক পুলিশের অঙ্গসংগঠন নই। আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের চোখ-কানের ভূমিকা পালন করছি।’ গত মার্চ মাসে ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে হামলায় ৫১ জন নিহত হওয়ার পর জরুরি ভিত্তিতে এই নিরাপত্তাসেবা চালু করেন তিনি। প্রার্থনাকারীদের নিরাপত্তা বহু আগে থেকেই একটি উদ্বেগের বিষয় হলেও ক্রাইস্টচার্চ হামলার পর তা অত্যাবশ্যকীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মাসব্যাপী চলা রমজান উপলক্ষে মুসলিমদের সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিয়েছে আমেরিকান-ইসলামিক সম্পর্কবিষয়ক কাউন্সিল। অনেক মসজিদে বন্দুকধারীর হামলা প্রতিহত করার মহড়া চালানো হয়েছে। মুসলিম কমিউনিটি পেট্রোল এ ধরনের মহড়া চালাতে গিয়ে সাধারণ মানুষের তোপের মুখে পড়েছে। বিশেষত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ওপর শরিয়া আইন চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাবাহ। তিনি বলেন, মুসলিম কমিউনিটি পেট্রোল পুলিশ নয়। তাদের কাছে অস্ত্র নেই। তারা কোনো কর্তৃপক্ষের দায়িত্বও পালন করে না। কেউ কেউ উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও অনেকেই এর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।

নিউইয়র্কের আরব আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশনের কর্মী সোমিয়া এলরোমিম বলেন, ‘আমরা চাই তাঁরা আমাদের এলাকা থেকে দূরে থাকুন। তাঁদের কারণে কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে দেশের গোটা মুসলিম সম্প্রদায়কে ভুগতে হবে। নিউইয়র্কের নাম করা মসজিদগুলো পাহারা দিতে পুলিশ দলবল নিয়েই তৈরি থাকে। এমনকি শহরটির পুলিশ বিভাগ মুসলিম কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সংঘ গড়ে তুলেছে। কাজেই মুসলিমদের বাড়তি কোনো সংগঠনের সহায়তার প্রয়োজন হবে না।’

নাইন–ইলেভেনের হামলার পর থেকে নিউইয়র্ক পুলিশ এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মুসলিম সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিয়ে বহুবার বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। মুসলিমদের মধ্যে এখনো ভয় আর সন্দেহ কাজ করছে। মসজিদগুলোয় পুলিশের উপস্থিতি নিয়েও তারা শঙ্কিত।

কমিউনিটি মুসলিম পেট্রোলের উদ্যোগ সফল হবে কি না, তা নিয়ে এখনই নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে দলটি স্বেচ্ছাসেবীদের সংখ্যা বাড়িয়ে তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। আগামী বছরের মধ্যে তারা দেশজুড়ে স্বেচ্ছাসেবীর সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।