রাজনীতিতে এলেন মমতার দুই ভাই

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

ভারতের তৃণমূল নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে একসময় দারুণ সরব ছিলেন। বিশেষ করে কংগ্রেসের পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে মমতা সমালোচনা করতে ছাড়েননি। সেই মমতার ভাইয়ের ছেলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১২ সালের জুলাই মাসে প্রথম আসেন রাজনীতিতে। এবার মমতার হাত ধরে রাজনীতিতে আসছেন তাঁর দুই ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায় ও গণেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।

অভিষেককে মমতা নিয়ে আসেন দলের যুব সংগঠনের নেতৃত্বে। তাঁকে করা হয় সর্বভারতীয় তৃণমূল যুবার সভাপতি। পরবর্তীতে তিনি সর্বভারতীয় তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি হন। ডায়মন্ড হারবার আসন থেকে হন সাংসদ। এখনো এই দুটি পদে বহাল আছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (৩১)।

রাজনৈতিক মহলের খবর, অভিষেককেই মমতা তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে তৈরি করছেন। ফলে এখন অভিষেকের নামও উঠে আসছে মমতার পর দলের দ্বিতীয় নেতা হিসেবে। ফলে যে মমতা পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন, সেই মমতাই এবার এগিয়ে এলেন পরিবারতন্ত্রের দিকে। এতেই থামেননি মমতা। এবার লোকসভা নির্বাচনে মমতা ব্যাপকভাবে পরাজিত হন বিজেপির কাছে। বিজেপিও উঠে আসে এই রাজ্যের অন্যতম শক্তি হিসেবে। বাগিয়ে নেয় রাজ্যের লোকসভার ৪২টি আসনের মধ্যে ১৮টি আসন। এর ফলে মমতা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন।

তবে বিজেপির এই উত্থানকে মেনে নিতে পারেননি মমতা। বিশেষ করে এবারের ভোটে বিজেপি অসামান্য ফল করায় বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে জেদ বেড়ে যাওয়ায় এখন প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষ হচ্ছে। বহু এলাকায় তৃণমূলের কর্মী- সমর্থকেরা আক্রান্ত হচ্ছে বিজেপির হাতে। উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর মহকুমায় বিজেপির সঙ্গে তৃণমূলের নির্বাচন-পরবর্তী ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ফলে এই সংঘর্ষের জেরে ৪ শতাধিক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বাড়িছাড়া হয়। এই বাড়িহারাদের ঘরে ফেরানোর দাবিতে তৃণমূল কংগ্রেস গত বৃহস্পতিবার ব্যারাকপুর লোকসভা আসনের নৈহাটি পৌরসভার সামনে এক অবস্থান সমাবেশের ডাক দেয়। সেখানে মমতা বিজেপিকে রোখার আহ্বান জানান।

একই সঙ্গে মমতা বিজেপিকে রুখতে দুটি বাহিনী গঠন করার ঘোষণা দেন। একটি পুরুষদের ‘জয় হিন্দ বাহিনী’, অন্যটি নারীদের ‘বঙ্গ জননী বাহিনী’। এই দুটি বাহিনী গড়া হবে রাজ্যজুড়ে। তাদের কাজ হবে তৃণমূলের পক্ষে প্রচার চালানো এবং সেই সঙ্গে বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির বিরুদ্ধে ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানকে প্রচার করা। মমতা বলেছেন, এই দুই বাহিনীর পোশাকও হবে আলাদা। পুরুষের পোশাক হবে পাঞ্জাবি-পায়জামা আর নারীদের হবে গঙ্গা-যমুনা পাড়ের শাড়ি।

এই ‘জয় হিন্দ বাহিনী’ ও ‘বঙ্গ জননী বাহিনী’র নেতৃত্বে কারা থাকবেন, সে কথা জানিয়ে দিয়েছেন মমতা। গতকাল শুক্রবার তাঁর কালীঘাটের বাড়িতে আয়োজিত দলের কোর কমিটির বৈঠকে তিনি বলেছেন, জয় হিন্দ বাহিনীর সভাপতি হিসেবে থাকবেন মমতার ভাই কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এই বাহিনীর আহ্বায়ক করা হয়েছে মমতার আরেক ভাই গণেশ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে মন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে আর ভাইস চেয়ারম্যান করা হয়েছে আরেক মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনকে। ফলে এই জয় হিন্দ বাহিনীর শীর্ষপদে চলে এলেন মমতার দুই ভাই গণেশ ও কার্তিক। অন্যদিকে বঙ্গ জননী বাহিনীর চেয়ারম্যান করা হয়েছে বারাসাতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে।

দেখা গেছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতার তিন ভাই গণেশ, কার্তিক ও বাবুন নিয়মিত মিটিং-মিছিলে থাকলেও তাঁদের তৃণমূলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে আনা হয়নি। কার্তিক বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন। পাশাপাশি তিনি তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করেন। গণেশ আর কয়েকজন তৃণমূল সমর্থকদের মতো বিভিন্ন সভা-সমিতিতে যোগ দিয়ে নিজেকে তৃণমূলের কর্মী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে এই প্রথম মমতা তাঁর দুই ভাইকে একটি সংগঠনের শীর্ষ পদে বসালেন। পাশাপাশি পরিবারতন্ত্রকে উজ্জীবিত করলেন।