এবার আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে উত্তপ্ত যুক্তরাষ্ট্র-চীন

চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংগি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন। ছবি: রয়টার্স
চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংগি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন। ছবি: রয়টার্স

এবার আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ক। বাণিজ্য নিয়ে এমনিতে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে দুই দেশের। এখন নিরাপত্তা নিয়ে একে অপরকে দোষারোপ করেই যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম প্রধান দুই মোড়ল। আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা তৈরির মাধ্যমে গোটা বিশ্বকেই হুমকির মুখে ফেলছে বলে পরস্পরকে দুষছে তারা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গতকাল রোববার সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত বার্ষিক নিরাপত্তাবিষয়ক সম্মেলন ‘সাংগ্রি-লা ডায়ালগ’ ফোরামে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়েই ফেংগি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি হুঁশিয়ারি বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগরের নিরাপত্তা বিতর্ক নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন মাথা না ঘামায়।

এর আগে গত শনিবার ভারপ্রাপ্ত মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব প্যাট্রিক শ্যানাহান আলোচনায় জানান, এশিয়ায় চীনের আচরণকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র আর ‘পায়ের আঙুলে ভর দিয়ে চলবে’ না। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ মেয়াদে এই অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য প্রধান হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বার্থপর অভিনেতারা। আন্তর্জাতিক আদেশ না মেনে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে।’

এর জবাবে গতকাল ‘সাংগ্রি-লা ডায়ালগ’ ফোরামে সামরিক সাজে সজ্জিত ওয়েই বলেন, এই অঞ্চলের বাইরে থেকে আসা কিছু দেশ জাহাজ চলাচলের স্বাধীনতার কথা বলে দক্ষিণ চীন সাগরে এসে শক্তি প্রদর্শন করে। তাইওয়ানের সঙ্গে চীনের সম্পর্কে কেউ হস্তক্ষেপ করলে বিরুদ্ধ শক্তিকে প্রতিহত করতে ‘শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে’ চীন। তাইওয়ানকে নিজেদেরই অংশ বলে মনে করে বেইজিং। তাদের দাবি, প্রয়োজনে জোর খাটিয়ে ওই অংশটুকু দখল করে নেওয়ার অধিকারও তাদের আছে।

এমনিতেই পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করে বাণিজ্যযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। তার ওপর নতুন করে এই তিক্ত বাক্যবিনিময় সম্পর্কের আরও অবনতি করবে, তা সহজেই অনুমেয়। সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু পদক্ষেপে নড়েচড়ে বসেছে চীন। স্বনিয়ন্ত্রিত ও গণতান্ত্রিক তাইওয়ানের প্রতি সমর্থন বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর জের ধরে চীন থেকে দ্বীপটিকে পৃথক করার জন্য তাইওয়ান প্রণালিতে নৌবাহিনীও পাঠিয়েছে তারা।

ওয়েই বলেন, ‘তাইওয়ানকে যদি কেউ চীন থেকে আলাদা করতে চায়, তবে চীনের সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবিভাজ্য, চীনও ঠিক তা–ই। চীনকে যেকোনো মূল্যে আবারও এক হতে হবে।’ তিনি জানান, দুই দেশের মধ্যকার যুদ্ধে দেশ দুটি ছাড়াও সমগ্র পৃথিবী যে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা দুটি দেশই বুঝতে পারছে।

অন্য অনেক দেশের মতোই তাইওয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কোনো সম্পর্ক নেই যুক্তরাষ্ট্রের। তবে মার্কিনদের শক্তিশালী সমর্থক এবং অস্ত্রের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে তাইওয়ান। চীনের প্রতি সমালোচনাপূর্ণ মন্তব্য করলেও শ্যানাহানের কণ্ঠে ছিল বন্ধুত্বের আভাস। অন্যদিকে, ওয়েই অনেকটা লড়াকু মনোভাব নিয়ে মন্তব্য করেছেন।

ওয়েইয়ের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তাইওয়ান সরকার বলেছেন, তাইওয়ান কখনোই চীন প্রজাতন্ত্রের অংশ ছিল না। কাজেই তাইওয়ান বেইজিংয়ের কোনো হুমকি আমলে নেবে না। আর চীন যে ‘শান্তিপূর্ণ উন্নতির’ কথা বলছে, তা শতাব্দীর সেরা মিথ্যা ছাড়া আর কিছু নয়।