নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা: অপর্ণা সেন

অভিনেত্রী অপর্ণা সেন
অভিনেত্রী অপর্ণা সেন

বিজেপির দেওয়া ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন, এর সমালোচনা করেছেন বিশিষ্ট অভিনেত্রী অপর্ণা সেন। তিনি বলেছেন, এতে করে মমতা নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছেন।

গোটা পশ্চিমবঙ্গ ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে তোলপাড় হচ্ছে। এ বছরের লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে শুরু করে বিজেপি। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কদের দেখলেই বিজেপি ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিতে শুরু করে। আর এতে প্রচণ্ডভাবে ক্ষিপ্ত হন মমতা। এই ধ্বনির পাল্টা ধ্বনি দেওয়ার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশও দেন মমতা। সেটি হলো ‘জয় হিন্দ’ ধ্বনি। ফলে, ধ্বনিকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে রাজনীতি এখন সরগরম।

কিন্তু ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি নিয়ে মমতার অবস্থানকে মেনে নিতে পারেনি এখানকার বহু মানুষও। তাঁদের কথা, এই ধ্বনি নিয়ে মমতার এতটা উত্তেজিত হওয়ার কারণ ছিল না।

ঠিক তেমনটাই মনে করেন অপর্ণা সেনও। তিনি একটি সর্বভারতীয় চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে, গণতন্ত্রে ‘জয় শ্রীরাম’ বা ‘আল্লাহু আকবর’ বা ‘জয় মা কালি’ ধ্বনি দেওয়ার অধিকার ভারতবাসীর রয়েছে। তবুও মমতা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির বিরুদ্ধে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে সমস্যা তৈরি করছেন।

গতকাল কলকাতার সংবাদমাধ্যমে অপর্ণা সেনের এই নিয়ে প্রকাশিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। তাতে অপর্ণা সেন বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর এ হেন আচরণ আমার একদম ভালো লাগেনি। মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে গাড়ি থেকে নেমে ধ্বনি থামানোর চেষ্টা করেছেন, তা মেনে নেওয়া যায় না। এটা ওনাকে মানায়াও না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবেগপ্রবণ মানুষ। উনি ভাবনাচিন্তা করে কোনো কাজ করেন না। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদে থাকতে হলে মমতাকে তাঁর আবেগের ওপরে লাগাম টানতে হবে।’

অপর্ণা সেন আরও বলেছেন, ‘বাংলার মুখ্যমন্ত্রী থাকতে হলে নিজের ব্যবহার ও মুখের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার অভ্যাস করতে হবে। ভাবনাচিন্তা করে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা উচিত। প্রবীণ মন্ত্রী অমিত মিত্র বা সৌগত রায়ের মতো ব্যক্তিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন তিনি। মাথায় যা–ই আসছে, তা–ই বলে দিলাম, এটা করা উচিত নয়।’ অপর্ণা সেন এমনটাও মনে করছেন, ‘ভোটারদের তাঁর বিরুদ্ধে ঠেলে দিচ্ছেন মমতা নিজেই। তিনি নিজের কবর নিজেই খুঁড়ছেন।’ তবে অপর্ণা সেন ধর্মের সঙ্গে রাজনীতি মেলানোর বিরুদ্ধে রয়েছেন। বলেছেন, এটা তিনি পছন্দ করেন না। রাজনীতি এবং ধর্মকে একেবারে আলাদা রাখতে হবে।

২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হবে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার পরবর্তী নির্বাচন। ওই বছর কি বিজেপি ক্ষমতায় আসতে পারবে—এই প্রশ্নের জবাবে অপর্ণা সেন বলেছেন, ‘ওই নির্বাচনে মমতাকে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়তে হবে। শহরে এখন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিজেপির দিকে সমর্থন বাড়ছে।’ অপর্ণা সেন এ কথাও বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত, দেশকে সঠিক দিশায় নিয়ে যেতে চেষ্টার ত্রুটি করবেন না মোদি। কিন্তু হিন্দুত্ব ও জাতীয়তাবাদকে মিলিয়ে ফেলাই ওদের আদর্শ। এটাই আমাকে পীড়া দেয়। আমি চাই গান্ধীজির বহুত্ববাদকে।’