বাংলাদেশ না ইংল্যান্ড, প্রবাসীরা কোন দল?

বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ওভালের গ্যালারি ছিল লাল-সবুজের দখলে। আজকের সোফিয়া গার্ডেনও তা–ই থাকবে। ছবি: প্রথম আলো
বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ওভালের গ্যালারি ছিল লাল-সবুজের দখলে। আজকের সোফিয়া গার্ডেনও তা–ই থাকবে। ছবি: প্রথম আলো

‘ভাই, আজকের খেলা নিয়ে বিপদে আছি। ইংল্যান্ড নাকি বাংলাদেশ—কাকে সমর্থন দেব?’ অপরজন হেসেই বললেন, ‘বাংলাদেশের পক্ষেই থাকব, তবে বেশি লাফালাফি করা ঠিক হবে না।’

গতকাল শুক্রবার পূর্ব লন্ডনের একটি দোকানে দুই বাংলাদেশির এমন আলাপ হঠাৎ মনোযোগ কেড়ে নিল।

ভাবনার নতুন খোরাক জোগায় তাঁদের কথোপকথন। আগের দুই ম্যাচে গ্যালারিভর্তি যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বাংলাদেশের পক্ষে গলা ফাটিয়েছেন। কিন্তু আজ তো বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। তাহলে ইংল্যান্ড তথা যুক্তরাজ্যে বসবাস করা বাংলাদেশিরা কোন দলকে সমর্থন দেবেন?

কৌতূহল নিবারণে ওই দুই বাংলাদেশির আলাপের মধ্যে প্রশ্ন ছুড়লাম, আজকের ম্যাচে সমস্যা কী?
এম এ সালাম নামের একজন বললেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি। বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা অতুলনীয়। কিন্তু যুক্তরাজ্য আমাদের আশ্রয় দিয়েছে, নাগরিকত্ব দিয়েছে। তাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়াটা বিব্রতকর।’

অপরজন হোসনে মোবারক টিটু বলেন, তিনি মনেপ্রাণে চাইবেন বাংলাদেশ জিতুক। তবে আগের ম্যাচের মতো আজ বাংলাদেশের পক্ষে লাফালাফি করতে নারাজ তিনি। যদিও এটি নিছক খেলা। তবুও ইংল্যান্ডের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন দায়িত্ব মনে করছেন তিনি।

যুক্তরাজ্যের অন্য বাংলাদেশিরাও কি এঁদের মতো করেই ভাবছেন? সেই খোঁজ নিতে কথা হলো আরও বেশ কয়েকজনের সঙ্গে।

বাংলাদেশ দলের নিবেদিত ভক্ত আবু মুসা হাসান। গতকাল রাতে টেলিফোনে তাঁর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, শনিবার কোনো দলকে সমর্থন দিচ্ছেন। তিনি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বললেন, ‘আপনার মনে হয় এত টাকা খরচ করে আমি ইংল্যান্ডকে সমর্থন দিতে কার্ডিফ এসেছি?’ তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, ‘যুক্তরাজ্য নামে তো কোনো টিম নেই। খেলছে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ড আর স্কটল্যান্ড যখন ফুটবল খেলে, তখন স্কটিশরা স্কটল্যান্ডকে সমর্থন দেয়। কিন্তু তাঁরা উভয় পক্ষই ব্রিটিশ। আমি ব্রিটিশ নাগরিক, একই সঙ্গে বাঙালি, ইংলিশ নই। তাই বাংলাদেশকে সমর্থন দিতে বিব্রতবোধ করার কোনো কারণ নেই। তিনি বরাবরের মতো আজও বাংলাদেশের পক্ষে সমর্থন জুগিয়ে যাবেন বলে জানান।

আবু মুসা হাসান বলেন, ইতিমধ্যে দুই ম্যাচ করে খেলা ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশের পয়েন্ট সমান সমান। তাই এগিয়ে থাকতে হলে আজ বাংলাদেশের জয় খুব প্রয়োজন।

আরেক ক্রিকেটপ্রেমী মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা। বাংলাদেশের সঙ্গে আমার নাড়ির সম্পর্ক। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কিছু আপন ভাবতে পারি না।’

তবে বছরখানেক আগে যুক্তরাজ্যে আসা সাদিয়া আফরিন বাংলাদেশকে সমর্থনের পেছনে কোনো যুক্তি খুঁজতে নারাজ। তাঁর সোজাসাফটা জবাব, প্রতিপক্ষ যে–ই হোক তিনি টাইগারদের পক্ষে। তিনি বলেন, ‘আমরা যেখানেই থাকি না কেন, আমাদের পরিচয় বাঙালি-বাংলাদেশি।’ সাদিয়া বলেন, ক্রিকেট বিশ্বকাপ নিয়ে যুক্তরাজ্যে খুব একটা মাতামাতি নেই। আজ যদি বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিতে পারে, তবে একটা হইচই পড়ে যাবে। আর সেটি হবে দেখার মতো ব্যাপার।

এসব টাইগারভক্তর সকলেই আবার এক জায়গায় একমত। সেটি হচ্ছে তাঁদের প্রত্যেকের দ্বিতীয় পছন্দ ইংল্যান্ড। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য যেকোনো দলের সঙ্গে খেলা হলে তাঁরা ইংল্যান্ডের পক্ষেই থাকেন। তাঁরা বলছেন, হারজিত খেলারই অংশ। বাংলাদেশের বিজয়ের প্রত্যাশার পাশাপাশি ম্যাচটি যেন প্রতিযোগিতামূলক ও উপভোগ্য হয় সেই কামনা করছেন তাঁরা।

সমর্থন নিয়ে যুক্তিতর্ক যা–ই থাকুক, কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনেও টাইগারভক্তদের উপস্থিতি হবে দেখার মতো। লন্ডনসহ যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে অনেকে আগের রাতেই পৌঁছে গেছেন সেখানে। আর কার্ডিফের বাংলাদেশিরা তো আছেনই।

আর কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে মাশরাফিরা আগে কখনো কোনো ম্যাচে হারেননি।