মোদির পরই অমিত শাহর গুরুত্ব

নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ। ছবি: রয়টার্স
নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ। ছবি: রয়টার্স

এ নিয়ে আর কোনো ভ্রম বা ভ্রান্তি থাকার প্রশ্নই ওঠে না। খাতা-কলমে না হলেও প্রকৃত অর্থে নরেন্দ্র মোদির পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিটির নাম অমিত শাহ। মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে যিনি ছিলেন তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এবার মোদির দ্বিতীয় ইনিংসে সেই অমিত শাহ শুধু কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই নন, কার্যত তিনিই দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। নইলে সদ্য গঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আট আটটি কমিটির প্রতিটিতে তাঁর স্থান হতো না।

তিন দিন আগে বৃহস্পতিবার কমিটিগুলো পুনর্গঠন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আগের দিন বুধবার নতুন দুটি কমিটি গঠনের পরদিন সরকারিভাবে আরও ছয় কমিটির সদস্যদের নাম জানানো হয়। দেখা যায়, এই আট কমিটির মধ্যে সাতটিতে রয়েছেন নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ জায়গা পেয়েছেন আটটিতেই। বয়স, অভিজ্ঞতা এবং শপথ গ্রহণের ক্রম অনুযায়ী যিনি দ্বিতীয়, সেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের স্থান হয়েছে মাত্র দুটি কমিটিতে। টানা ১০ ঘণ্টা রাজনৈতিক আলোচনার পর সন্ধ্যায় কমিটিগুলো আরও একবার নতুন করে গঠিত হয়। রাজনাথের জায়গা হয় আরও চারটিতে। এতে সরকারের ‘ভুল’ বা ‘ভ্রান্তি’র অবসান হয়তো হলো, কিন্তু বিতর্ক থামছে না। কেন রাজনাথকে বাদ দেওয়া হয়েছিল, কেনই–বা তাঁকে ফিরিয়ে আনা হলো, তা নিয়ে আলোচনা অব্যাহত। অমিত শাহ প্রথমবার কেন্দ্রে মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও কেন তিনি সব কমিটির সদস্য, কেন অন্যরা নন, এটা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা।

সবকিছু ছাপিয়ে দেশের নিরাপত্তা এবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় ইস্যু হয়ে উঠলেও মোদি সরকারকে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হতে হয়েছে বেকারত্ব ও অর্থনৈতিক স্লথগতির কারণে। দুটি ক্ষেত্রেই সরকার নিদারুণ ব্যর্থ। ভোটের পর সরকারি পরিসংখ্যানেও ওই ব্যর্থতা প্রকট। সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাই গত বুধবার দুটি কমিটি গঠনের কথা ঘোষণা করেন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্য একটি, অন্যটি কর্মসংস্থান বাড়াতে ‘স্কিল’ বা দক্ষতার ওপর নজর দিতে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথকে প্রথমে সদস্য করা হয়েছিল নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক বিষয়ক দুই কমিটির। সন্ধ্যায় নেওয়া হয় আরও চারটি কমিটিতে। সংসদবিষয়ক, রাজনৈতিক বিষয়ক, লগ্নি ও প্রবৃদ্ধিবিষয়ক এবং কর্মসংস্থান ও ‘স্কিল’ বৃদ্ধিবিষয়ক। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ নিয়োগ-সংক্রান্ত কমিটি বাদ দিয়ে অন্য কমিটিগুলোর সদস্য হয়েছেন। বাণিজ্য ও রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল নিয়োগ, সংসদীয় ও নিরাপত্তা ছাড়া বাকি কমিটিগুলোর সদস্য হয়েছেন। নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর সদস্য হয়েছেন নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক বিষয়ক কমিটির।

কমিটি পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে দুটি বিষয় বেশ স্পষ্ট। প্রথমটি মোদি যে শাহর ওপরই বেশি ভরসা করছেন, এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট। প্রথমবার লোকসভায় জিতে মন্ত্রী হওয়া আর কোনো রাজনীতিক এভাবে এতখানি গুরুত্ব পাননি। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, সব বিষয়ে মোদি কার ওপর নির্ভরশীল। দ্বিতীয় বিষয়টি রাজনাথ সিংয়ের ডানা ছাঁটা। বয়স ও অভিজ্ঞতা, অন্যদের তুলনায় দুটিই তাঁর বেশি। দলের সভাপতি যেমন হয়েছেন, তেমনই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রিত্বও (উত্তর প্রদেশ) পালন করেছেন। দল ও সংঘে তাঁর গ্রহণযোগ্যতাও প্রশ্নাতীত। রাজধানীর এই মুহূর্তের গুঞ্জন, রাজনাথকে এভাবে খাটো করা সংঘের পছন্দ হয়নি। সম্ভবত তা আঁচ করেই এই রদবদলের মাত্র দুই দিন আগে সংঘপ্রধান মোহন ভাগবত প্রকাশ্যে বলেছিলেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জয়ী হয়ে আসার অর্থ এই নয় যে ক্ষমতার অপব্যবহার করতে হবে। সরকারের ত্রুটি দেখা দিলে সংঘ ইতিবাচক পরামর্শ দেবে। প্রশ্ন উঠছে, সেই পরামর্শের দরুনই কি তাহলে ১০ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্তে বদল হলো?

রাজনাথকে বাদ দেওয়ার মধ্য দিয়ে যে প্রশ্নগুলো উঠে এসেছে, সম্ভবত তা হালকা করার জন্যই সংসদবিষয়ক কমিটির বৈঠক ডাকা হয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বাড়িতে। অমিত শাহ সেই বৈঠকে যোগ দিতে তাঁর বাড়ি যান। এর মধ্য দিয়ে এটা বোঝানোর চেষ্টা হলো যে রাজনাথই মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় ব্যক্তি। কিন্তু তাতেও বিতর্ক ছাড়ছে না। প্রথম কারণ, আটটি কমিটিতেই অমিত শাহর উপস্থিতি। দ্বিতীয় কারণ, দলের ‘এক নেতা এক পদ’নীতি সত্ত্বেও অমিত শাহ এখনো দলীয় সভাপতির পদ ছাড়েননি। কবে ছাড়বেন অথবা আদৌ ছাড়বেন কি না, সে বিষয়ে কোনো উচ্চবাচ্য নেই। তৃতীয় কারণ, অটল বিহারি বাজপেয়ির সরকারি বাড়ি অমিত শাহকে ছেড়ে দেওয়া।

প্রশ্ন আরও উঠছে। যেমন নরেন্দ্র মোদি তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে এখন থেকেই কি অমিত শাহকে গড়ে তুলতে চাইছেন? উত্তর এখনো অজানা। সরকারের একটি সূত্রের মতে, অমিত শাহকে কোনো দিন উপপ্রধানমন্ত্রী করা হলে এই প্রশ্নের উত্তর নির্দিষ্টভাবে পাওয়া যাবে।