বিজেপির লাশের রাজনীতিতে পুলিশের বাধা

নিহত দুই বিজেপি কর্মীর লাশ বসিরহাট হাসপাতাল থেকে বের করার সময় পুলিশ পুরো হাসপাতাল চত্বর ঘিরে রাখে। ছবি: সংগৃহীত
নিহত দুই বিজেপি কর্মীর লাশ বসিরহাট হাসপাতাল থেকে বের করার সময় পুলিশ পুরো হাসপাতাল চত্বর ঘিরে রাখে। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘর্ষে নিহত দুই বিজেপি কর্মীর লাশ কলকাতায় রাজ্য দপ্তরে এনে সম্মান জানাতে চেয়েছিল দলটি। বিজেপির সেই উদ্যোগকে সফল হতে দেয়নি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। গতকাল রোববার জেলার সন্দেশখালীর ন্যাজাটের হাটগাছি থেকে দুজনের লাশ কলকাতায় আনার পথে তিনবার আটকে দেয় পুলিশ।

লাশ নিয়ে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হতে পারে, সেই আশঙ্কায় পুলিশ এই লাশ আসতে বাধা দেয়। শেষ পর্যন্ত এই লাশ ফিরিয়ে নেওয়া হয় মৃত ব্যক্তিদের গ্রামের বাড়িতে। সেখানেই দাহ করা হয়।

পশ্চিমবঙ্গে এই লাশের রাজনীতি বিজেপি শিখেছে তৃণমূলের কাছ থেকেই। বামফ্রন্ট শাসনের শেষের দিকে তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যজুড়ে বামফ্রন্টবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ওই আন্দোলনের সময় তৃণমূলের কোনো নেতা-কর্মী-সমর্থক মারা গেলে তাঁদের লাশ কলকাতায় এনে প্রতিবাদ মিছিল করত তৃণমূল। কলকাতার বাইরে কোনো তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হলেও সেই কর্মীর লাশ কলকাতায় এনে মিছিল করেছেন মমতা। বামফ্রন্টবিরোধী এই আন্দোলনে সফলও হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা।

ওই পথ ধরে গতকাল বিকেলে বিজেপির দুই কর্মীর লাশ নিয়ে পথে নামে দলটি। লক্ষ্য ছিল কলকাতায় রাজ্য দপ্তরে এনে তাঁদের সম্মান জানানোর। এরপর একটি শোক মিছিল বের করে কলকাতার নিমতলা মহাশ্মশানে দাহ করার। কিন্তু সেই উদ্যোগকে আর সফল হতে দেয়নি পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ। কলকাতায় আনার পথে বারবার আটকে দেওয়া হয়। উত্তর ২৪ পরগনার মালঞ্চ বাজার এবং মিনাখায় পুলিশ আটকে দেয়। পুলিশের আশঙ্কা, এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। পরে ওই কর্মীদের লাশ সন্দেশখালীতে তাঁদের গ্রামের বাড়িতেই দাহ করা হয়।

গত শনিবার দলীয় পতাকা সরানোকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালীর ন্যাজাটের হাটগাছিতে বিজেপি-তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে বিজেপির তিন কর্মী ও তৃণমূলের একজন কর্মী নিহত হন। বিজেপির নিহত তিন কর্মী হলেন সুকান্ত মণ্ডল, প্রদীপ মণ্ডল ও তপন মণ্ডল। নিহত তৃণমূল কর্মী হলেন কাইয়ুম মোল্লা।

সুকান্ত মণ্ডল ও প্রদীপ মণ্ডলের লাশ গতকাল বিকেলে কলকাতায় আনার উদ্যোগ নেয় বিজেপি। তাদের লক্ষ্য ছিল ওই দুই কর্মীর লাশ কলকাতার রাজ্য দপ্তরে এনে সম্মান প্রদর্শন করার। তবে দুবার পুলিশের বাধায় বিজেপি কর্মীরা মিনাখায় সড়কের ওপর প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। তাঁরা রাস্তাতেই মরদেহ সৎকারের উদ্যোগ নেন। এ সময় পুলিশ বাধা দেয়। পরে বিজেপি কর্মীরা পিছু হটেন। তাঁরা বিবাদে না গিয়ে লাশ নিয়ে সন্দেশখালীতে ফিরে যান।

এ সময় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রাহুল সিনহা এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ সোমবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমায় ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ্‌ পালনের ঘোষণা দেন। এ ছাড়া আগামীকাল মঙ্গলবার রাজ্যজুড়ে ‘কালা দিবস’ পালনের ঘোষণা দেন তিনি। এ ছাড়া ১২ জুন কলকাতায় এই ঘটনার প্রতিবাদে বিজেপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হবে ‘মহাধিক্কার’ মিছিল। ওই মিছিল কলকাতার লালবাজারে পুলিশ হেডকোয়ার্টার পর্যন্ত যাবে।

বসিরহাটে তৃণমূলের হামলার প্রতিবাদে গতকাল রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় পথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, শ্রীরামপুর, ডানকুনি, করিমপুর, তেহট্ট, কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ, কল্যাণী, হরিণঘাটাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ করেন বিজেপির কর্মীরা। কলকাতার বিভিন্ন এলাকায়তেও প্রতিবাদ মিছিল করে বিজেপি। উত্তর কলকাতার সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ এবং দক্ষিণ কলকাতার হাজরাতে বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুত্তলিকা দাহ করেন। এ সময় বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ এই দুই এলাকা থেকে ৭৯ বিজেপি কর্মী-সমর্থককে গ্রেপ্তার করে।

বসিরহাটে গত শনিবারের ঘটনার পর ঘটনাস্থল ও হাসপাতালে আহত বিজেপি কর্মীদের দেখতে যায় বিজেপির একটি প্রতিনিধিদল। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ দিলীপ ঘোষ। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়, অর্জুন সিং, জগন্নাথ সরকার, শান্তনু ঠাকুর, কেন্দ্রীয় নেতা রাহুল সিনহা, বিধায়ক দুলাল বর এবং বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক সায়ন্তন বসু প্রমুখ। তবে এখন পর্যন্ত তৃণমূল সাংসদ নুসরাত জাহান ওই এলাকা পরিদর্শন করেননি। তিনি কেবল একটি বিবৃতি দিয়ে প্রার্থনা করেছেন, এলাকার মানুষ যেন শান্তিতে থাকেন।