ইশকুলের বাইরে অন্য রকম শিক্ষা

অস্ট্রেলিয়ায় শিশুদের জীবনমুখী শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত
অস্ট্রেলিয়ায় শিশুদের জীবনমুখী শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ছে। ছবি: সংগৃহীত

এডওয়ার্ড ও এলিজা দুই ভাইবোন। তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গত বছর ৩৬৫ দিনের মধ্যে ১০০ দিনেরও বেশি তারা স্কুলে অনুপস্থিত ছিল। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষের নজরে এলে তাদের বাবা-মাকে ডাকা হয়। কারণ জানতে চাইলে মা স্টেফানি ওয়েবস্টার বলেন, ‘আমার সন্তানেরা জীবন থেকে জীবন্ত শিক্ষা নিচ্ছিল। আমি তাদের অস্ট্রেলিয়া ঘুরে দেখিয়েছি। পাহাড়ি ঝরনার ধার দিয়ে হেঁটে তারা প্রকৃতিকে যতটা বুঝতে পেরেছে, চার দেয়ালের শ্রেণিকক্ষের বইয়ে তারা সেটা কখনোই শিখতে পারত না।’

শ্রেণিকক্ষের বাইরে নিয়ে গিয়ে সন্তানকে জীবন থেকে শিক্ষা দেওয়ার ধারণাটি অস্ট্রেলিয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। দেশটির বাবা-মায়েরা সন্তানের সুশিক্ষার পাশাপাশি বাস্তব শিক্ষার দিকটিও বিবেচনায় নিতে শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় জীবনমুখী শিক্ষার গুরুত্ব বাড়ছে। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার প্রভাবশালী সংবাদপত্র দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড এক নিবন্ধ প্রকাশ করেছে। নিবন্ধে জীবনমুখী শিক্ষার গুরুত্ব বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে।

দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকার জীবনমুখী শিক্ষার গুরুত্ব আমলে নিয়ে বিদ্যালয়ের ছুটি আরও সহজ কীভাবে করা যায়, তা ভাবছে। পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে যেকোনো সময় ছুটি দেওয়ার জন্য নতুন আইন জারি করছে দেশটির ভিক্টোরিয়া রাজ্য। জীবনমুখী শিক্ষার জন্য সরকারি ছুটি ছাড়াও অন্য ছুটির পরিকল্পনা করে দিচ্ছে বিদ্যালয়গুলো। সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাওয়া উচিত, কী করতে হবে, তার পরিকল্পনাও করে দিতে শুরু করেছে বিদ্যালয়গুলো।

স্টেফানিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘আপনার সন্তানেরা বিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে কি না?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘যদি মনে করেন, শিশুরা শুধু শ্রেণিকক্ষে শিখতে পারে, তাহলে সেটা খুবই সংকীর্ণ মনের ভাবনা। একটা শিশু বিদ্যালয়ের শিক্ষা থেকে যতটুকু বঞ্চিত হবে, তার চেয়ে বেশি কিছু শিখবে জীবন থেকে। আমি যখন তাদের (দুই সন্তান) নিয়ে ভ্রমণে গিয়ে ছিলাম, তখন তারা আনন্দের জন্য তাদের আইপ্যাড বা মোবাইল ব্যবহার করতে চাইত না। প্রযুক্তির মাধ্যমে শেখা আর জীবন থেকে শেখার পার্থক্য শিশুরা নিজেরাই বুঝতে শিখেছিল।’

জীবনমুখী শিক্ষা শিশুকে দক্ষ ও বাস্তববাদী করে তুলবে বলেও মনে করেন অনেকে। ভিক্টোরিয়ান প্রিন্সিপালস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এনামেরি ক্লিম্যান বলেন, ‘আমি আমার সন্তানদের তিন সপ্তাহের ভ্রমণে নিয়ে গিয়েছিলাম। এতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই। কারণ, এই ভ্রমণ থেকে তারা পরিবারের গুরুত্বের পাশাপাশি বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল পৃথিবীর রীতিনীতি বই পড়ে বা ইন্টারনেট থেকে শেখা সম্ভব নয়। বাস্তব অভিজ্ঞতা শিশুদের অল্প বয়সেই নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার চাহিদা বুঝতে শেখায়। বাবা-মায়ের দায়িত্বের মধ্যে এটা অনেক বড় একটা অংশ।’

অস্ট্রেলিয়ায় পরিবারের সঙ্গে শিশুদের ছুটি কাটাতে যাওয়ার হার দিন দিন বাড়ছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, সাধারণত একজন শিশু গড়ে তিন দিন পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটায়। তবে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে বেশ কয়েকটি কারণে। এ প্রসঙ্গে ভিক্টোরিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ক্যাথলিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মাইকেল গ্রে বলেন, অভিভাবকেরা সন্তানকে জীবন থেকে অভিজ্ঞতা নেওয়ার দিকে বেশি ঝুঁকছেন। সেই সঙ্গে অভিবাসনখ্যাত এই দেশের অনেকেই নিজের দেশে যান সন্তানকে নিয়ে, যান আত্মীয়ের বাড়িতে।

দিন দিন জীবনের ব্যস্ততা বেড়ে যাচ্ছে। এ কারণে সন্তানকে জীবন উপভোগ করতে শেখানোর বিষয়টিতেও গুরুত্ব দিচ্ছে অনেকে।

রাশেল মিলার তাঁর সন্তানকে নিয়ে ১১ সপ্তাহের ভ্রমণে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার সন্তান যখন নিজের দায়িত্ব নিজেই নেবে, মনে হয় না তার হাতে খুব বেশি সময় থাকবে। আমার মা ৬০ বছর বয়সে মারা যান। তাই আমার জন্য এটা জরুরি যে আমি আমার সন্তানকে একটা সুন্দর জীবনবোধ উপহার দেব।’