'বিজেপির গুন্ডামি এই রাজ্যে বরদাশত করা হবে না'

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক পরাজয়ের পর পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি হয়েছে। সর্বশেষ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালীতে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষের পর রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসব মানতে নারাজ। তিনি বলছেন, বাংলা শান্তির রাজ্য। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির রাজ্য। বিজেপি এখানে অশান্তি করতে চায়। দাঙ্গা বাধাতে চায়। এই রাজ্যের শান্তি কেড়ে নিতে চায়। কিন্তু এই বাংলার মানুষ বিজেপির সেই আশা পূর্ণ করতে দেবে না। বিজেপির গুন্ডাদের শায়েস্তা করবে রাজ্য সরকার।

গত শনিবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালীতে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে তিন বিজেপি কর্মী ও এক তৃণমূল কর্মী নিহত হন। ওই ঘটনার পর বিজেপি বারবার দাবি তুলেছে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। বিজেপি পশ্চিমবঙ্গ সকারকে ভেঙে নিয়ে নতুনভাবে রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় আসার পথ প্রশস্ত করবে কি না—এমন প্রশ্নও উঠছে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক অঙ্গনে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠি দিল্লিতে গিয়ে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে। এতে রাজ্য সরকার ভেঙে দেওয়ার বিষয়টি জোরালো হয়ে উঠেছে।

গতকাল সোমবার পশ্চিমবঙ্গ সচিবালয় নবান্নে রাজ্য প্রশাসনিক এক বৈঠকের পর মমতাও একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিজেপি রাজ্য সরকারকে ভেঙে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। সরকারকে ভাঙার চেষ্টা করে বিজেপি যদি মনে করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে স্তব্ধ করবেন, তাহলে মনে রাখবেন, মৃত বাঘের চেয়ে আহত বাঘ বেশি ভয়ংকর।’

এ সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশকে কড়া পদক্ষেপ নিতে বলেন মমতা। তিনি বলেন, ‘বিজেপির গুন্ডামি এই রাজ্যে বরদাশত করা হবে না।’ মমতা অভিযোগ করেন, দায়িত্বশীল আচরণ করছে না পুলিশ। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছু ওসি এবং সাব-ইন্সপেক্টর ঠিকমতো কাজ করছেন না। তাঁদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। কঠোর হাতেই এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে।’

রাজ্যের বাসিন্দাদের উদ্দেশে মমতা বলেন, ‘আপনারা শান্তি বজায় রাখুন। এই বাংলা শান্তির বাংলা। এই বাংলাকে অশান্ত করতে দেবেন না দাঙ্গাবাজ বিজেপিকে।’

মমতার এই বক্তব্যের পর পাল্টা বক্তব্য দিয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মুকুল রায়। তিনি বলেন, ‘মমতার সেই আহত বাঘ রাজ্যের বিজেপি।’ তিনি মমতার উদ্দেশে বলেন, ‘পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে রাজ্যে একের পর এক বিজেপি কর্মী খুন হয়েছেন। এখনো প্রতিদিন আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে। তাঁরা খুন হচ্ছেন। বাংলায় আমরাই আহত বাঘ। আর সেই বাঘ কী করতে পারে, লোকসভা নির্বাচনে তা প্রমাণ হয়ে গেছে। লোকসভা নির্বাচনে এবার বিজেপি যে ভোট পেয়েছে, তা থেকেই পরিষ্কার, বাংলার মানুষ তৃণমূলের ওপর থেকে আস্থা হারিয়েছেন।’

মুকুল রায় বলেন, ‘এই মুহূর্তে বাংলায় সরকার ভেঙে দেওয়ার আবেদন করবে না বিজেপি। তবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির রিপোর্ট তারা নিয়মিত কেন্দ্রীয় সরকার এবং দলের প্রধান কার্যালয়ে পাঠাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি শাসন চেয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শহীদ হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না। আমার সরকারকে ওরা ফেলে দিয়েছে—এই কথা বলে তাঁকে কেঁদে বেড়াতে দেওয়া হবে না। তবে তাঁকে বলছি, উনি ওনার ঘর সামলান। ওনার ঘরের ১৪৭ জন এসে যদি বলেন বিজেপিতে যোগ দেবেন, তখন উনি কী করবেন?’