কলকাতায় বিজেপি-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ

বিজেপির লালবাজার অভিযানের সময় পুলিশের জলকামানের সামনে বিক্ষোভকারীরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
বিজেপির লালবাজার অভিযানের সময় পুলিশের জলকামানের সামনে বিক্ষোভকারীরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির প্রতিবাদে আজ বুধবার দুপুরে কলকাতা পুলিশের প্রধান কার্যালয় লালবাজারে অভিযান করে বিজেপি। সেখানে দেওয়া ব্যারিকেড ভাঙতে গেলে বিজেপির কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ বেধে যায়। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সন্দেশখালীতে বিজেপির তিন কর্মীর মৃত্যুর প্রতিবাদে এবং তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে’ বিজেপি আজ কলকাতায় এই মহাধিক্কার মিছিলের ডাক দেয়। এই মিছিল কলকাতার সুবোধ মল্লিক স্কয়ার থেকে শুরু হয়ে নির্মলচন্দ্র স্ট্রিট ধরে লালবাজারের পুলিশ হেড কোয়ার্টারের দিকে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছিল বিজেপি আগেই।
সেই লক্ষ্য নিয়ে আজ দুপুরের দিকে বিজেপির হাজার হাজার নেতা-কর্মী-সমর্থক মিছিল করে লালবাজারের দিকে রওনা হলে পুলিশ মিছিলটি পথিমধ্যে বউবাজারে আটকে দেয়। মিছিল আটকানোর লক্ষ্যে নিয়োজিত করা হয় পুলিশের তিন হাজার সদস্য। আনা হয় জলকামান, নজরদারির জন্য রাখা হয় ড্রোনও।
মিছিল সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ থেকে বউবাজার ক্রসিং হয়ে লালবাজারে ঢুকতে গেলে পুলিশ আটকে দেয়। তখন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা উত্তেজিত হয়ে পুলিশের ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করেন। এ সময় পুলিশ চড়াও হয় বিজেপির মিছিলের ওপর। কিন্তু তাতেও থেমে যায়নি বিজেপির মিছিল। তাঁরা পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে লিপ্ত হন। পুলিশ বিজেপির কর্মীদের রুখতে প্রথমে লাঠিপেটা করে। পরে তাঁদের বিরত না রাখতে পেরে শুরু করে জলকামান দিয়ে জলবর্ষণ। এতে বিজেপির হাজারো কর্মী ভিজে গেলেও বিক্ষোভ থেকে সরে আসেননি। বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন রাস্তায়। এ পর্যায়ে পুলিশ শুরু করে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো। তখনই কাঁদানে গ্যাসের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েন বিজেপির কয়েকজন কর্মী-সমর্থক এবং নেতা।

পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টায় বিজেপির কর্মীরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
পুলিশের দেওয়া ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টায় বিজেপির কর্মীরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটে বিজেপির নেতা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়ের পায়ের কাছে। এ সময় তিনি অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারান। তখনই বিজেপির কর্মীরা রাজু বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঁজাকোলে করে হাসপাতালে নিয়ে নিয়ে যান। এ সময় বিজেপির নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা সড়কে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। এই অবস্থান ধর্মঘটে অংশ নেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া, বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা প্রমুখ। কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেছেন, মমতার সরকার আর বেশি দিন নেই। সময় ফুরিয়ে এসেছে।
এই লালবাজার অভিযানের নেতৃত্ব দেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয়। এর আগে অবশ্য দুপুরের দিকে বিজেপির পতাকা নিয়ে লালবাজারের গেটে চলে আসেন বিজেপির নারী মোর্চার সমর্থকেরা। পুলিশ তখন এখান থেকে ৩ নারী সমর্থককে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এই ঘটনার পর ঘোষণা দেন, মমতাকে পদত্যাগ না করানো পর্যন্ত তাঁদের আন্দোলন চলবে। তিনি বলেন, এই মহাধিক্কার মিছিল দেখে ভয় পেয়ে গেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই আন্দোলন এবার ছড়িয়ে পড়বে গ্রামগঞ্জে। বিজেপির নেতা সায়ন্তন বসু বলেছেন, ‘এই সরকারের সময় শেষ হয়ে এসেছে। আর থাকতে পারবেন না মমতা গদিতে।’ বিজেপির নারী মোর্চার রাজ্য সভাপতি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, ‘এখনই মমতার পদত্যাগ করা উচিত। তিনি তো বুঝে গেছেন ক্ষমতায় থাকার অধিকার তিনি হারিয়েছেন। বাংলাকে সামলাতে পারছেন না তিনি।’
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা রাহুল সিনহা বলেছেন, ‘মমতার পতনের লক্ষণ পরিষ্কার হয়ে গেছে। রাষ্ট্রপতির শাসন বা সংবিধানের ৩৫৬ ধারা বলবৎ করে ছাড়বেন মমতা নিজেই। মমতা আর সামাল দিতে পারছেন না রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির।’
এদিকে আজকের মহাধিক্কার মিছিলকে কেন্দ্র করে রাজ্য সচিবালয় নবান্নের নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নবান্নের গেট বন্ধ রাখা হয়।