সমমজুরির দাবিতে সুইস নারীদের মিছিল

‘বেশি সময়, বেশি অর্থ, বেশি সম্মান’ আদায়ের দাবিতে পথে নেমেছেন সুইজারল্যান্ডের নারীরা। ছবি: এএফপি
‘বেশি সময়, বেশি অর্থ, বেশি সম্মান’ আদায়ের দাবিতে পথে নেমেছেন সুইজারল্যান্ডের নারীরা। ছবি: এএফপি

বিশ্বের অন্যতম প্রগতিশীল দেশ হিসেবে পরিচিত সুইজারল্যান্ডে নারীদের জন্য নেই মজুরির সমতা। আজ শুক্রবার তাই কাজ বন্ধ করে সুইজারল্যান্ডের রাস্তায় বিক্ষোভ করছেন নারীরা। সমমজুরির দাবিতে প্রথমবার দেশজুড়ে ধর্মঘট পালিত হওয়ার প্রায় তিন দশক পর আজ আবার নারীদের আন্দোলন শুরু হয়েছে।

আজ শুক্রবার দিনব্যাপী নানা ধরনের আয়োজনের মাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্র্যাম নামক একধরনের গাড়িতে করে মিছিল, কনসার্ট থেকে শুরু করে দুপুরের খাবারের সময় বাড়ানো ও বড় পরিসরে বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছে। সন্ধ্যায় বার্নের সরকারি কার্যালয়ের সামনেসহ বিভিন্ন শহরে বিশাল বিক্ষোভের পরিকল্পনা করেছেন নারীরা।

ইউনিয়ন ও অধিকার সংরক্ষণ দলগুলো বেগুনি সমুদ্র দেখার অপেক্ষায় রয়েছে। সমমজুরির দাবিতে বিক্ষোভের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করতে বেছে নেওয়া হয়েছে বেগুনি রংকেই। তবে যে দেশে কাজ বন্ধ করা একেবারেই বিরল ঘটনা, সেখানে এ ধরনের আন্দোলন কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

সুইস সংবিধানে লিঙ্গ–নির্বিশেষে সবার জন্য সমান মজুরির অধিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৯৮১ সালে। এর ১০ বছর পর, অর্থাৎ ১৯৯১ সালের ১৪ জুন প্রায় ৫ লাখ নারী কর্মক্ষেত্র বা ঘর থেকে বেরিয়ে অসমতার বিরুদ্ধে আন্দোলনে অংশ নেন। এ ঘটনার তিন দশক পরে শুক্রবারের কর্মসূচি পরিকল্পনাকারীরা জানিয়েছেন, ব্যাপারগুলোতে খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি, সমতার ক্ষেত্রে অবস্থান এখনো নড়বড়ে। নারীদের ‘বেশি সময়, বেশি অর্থ, বেশি সম্মান’ আদায় করে নেওয়ার ওপর জোর দিতে বলেছেন তাঁরা।

সুইস নারীদের আয়ের পরিমাণ এখনো পুরুষদের চেয়ে গড়ে ২০ শতাংশ কম। জাতীয় পরিসংখ্যান অফিসের হিসাব অনুযায়ী, সমযোগ্যতাসম্পন্ন নারী-পুরুষের ক্ষেত্রে বেতনের পার্থক্য গড়ে ৮ শতাংশ। হ্যাশট্যাগ মি টু আন্দোলন সারা বিশ্বকে নাড়িয়ে দেওয়ার পর নতুন প্রজন্মের নারীরা দীর্ঘস্থায়ী বৈষম্য, হয়রানি ও মজুরি পার্থক্যের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছেন।

আয়োজকেরা চাকরি ছেড়ে, গৃহস্থালির কাজসহ সমাজে নারীরা যেসব মুখ্য ভূমিকা পালন করেন, তার সবকিছু বাদ দিয়ে আজ সারা দিন আন্দোলনে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। যাঁরা সারা দিনের জন্য ছুটির ব্যবস্থা করতে পারবেন না, তাঁদের অন্তত বেলা সাড়ে ৩টার দিকে যোগ দিতে বলা হয়েছে। সক্রিয় কর্মী মেরি মেট্রেইলার বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য নারীবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে সারা দেশ অচল করে ফেলা। শুধু নারীদের আন্দোলন হবে এটি।’

কর্মক্ষেত্রে নারীদের ওপর সহিংসতা একেবারেই মেনে নেবেন না আন্দোলনকারীরা। যথাযথ সম্মান, মজুরিসহ জাতীয় পর্যায়ে ন্যূনতম বেতন চালু করার দাবি জানাবেন তাঁরা। কিছু কিছু শহরে শিশুদের নার্সারি বন্ধ রাখা হবে। স্কুলগুলো কিছু সময়ের জন্য খোলা রাখা হবে। তবে নারী কর্মীরা যেন কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হবে।

এ আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন অনেক রাজনীতিবিদ। আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে ১৫ মিনিটের জন্য পার্লামেন্ট অধিবেশন স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।