বিজেপিতে 'এক ব্যক্তি এক পদ' নীতির ব্যতিক্রম থাকলেন অমিত শাহ

অমিত শাহ
অমিত শাহ

আপাতত শিকেয় উঠল ভারতের শাসক দল বিজেপির ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ নীতি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও অমিত শাহ বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতির পদ ছাড়ছেন না। চলতি বছর শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনিই ওই পদে বহাল থাকছেন।

সাংগঠনিক বিষয়গুলো আলোচনার জন্য বিজেপি নেতারা গতকাল বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানেই ঠিক হয়েছে, চলতি বছরের মধ্যে দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযান শেষ করা হবে। তার পরে হবে দলের সভাপতি নির্বাচন। এই সিদ্ধান্তের অর্থ, অমিত শাহই আপাতত দলের সভাপতি থাকছেন। বছরের শেষাশেষি মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও ঝাড়খন্ড বিধানসভার ভোট। সেই ভোটের কান্ডারিও তিনি থাকছেন। দিল্লি বিধানসভার ভোটও ওই সময়ে হয়ে গেলে তার দায়িত্বও অমিত শাহ পালন করবেন। মোট কথা, অমিত শাহর জন্য দলের ‘এক ব্যক্তি এক পদ’ বলবৎ হচ্ছে না। শুধু তাই নয়, শাহর কাজের ভার কমানোর জন্য দলে ‘ওয়ার্কিং প্রেসিডেন্ট’ নিযুক্তির ভাবনাও খারিজ হয়ে গেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে যাওয়ার পর বিজেপির সভাপতি কে হবেন তা নিয়ে রাজনৈতিক জল্পনা চলছিল। বিদায়ী মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়া স্বাস্থ্যমন্ত্রী জগৎ প্রতাপ নাড্ডার নাম এই পদে শোনা যাচ্ছিল। নাড্ডা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর খুবই ঘনিষ্ঠ। আপাতত সেই জল্পনার অবসান ঘটল।

বৃহস্পতিবারের বৈঠকে অমিত শাহ নির্দেশ দিয়েছেন, চলতি বছরে আরও ২ কোটি মানুষকে দলের সদস্য করতে। সব মিলিয়ে বিজেপির মোট সদস্য সংখ্যা হবে ১৩ কোটিরও বেশি। দলীয় নেতাদের শাহ বলেন, ৩০৩ আসন তাঁদের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। আগামী ভোটে পশ্চিমবঙ্গ ও কেরালায় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পাওয়ার জন্য এখন থেকেই কাজ শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মধ্যপ্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানকে।

খাতায় কলমে রাজনাথ সিং হলেও দল ও সরকারে অমিত শাহই কার্যত দ্বিতীয় ব্যক্তি। উত্তরাধিকারের বিষয়টি নজরে রেখে নরেন্দ্র মোদি ওইভাবেই শাহকে গড়ে তুলছেন বলে দলীয় মহলের ধারণা। এই কারণে সম্প্রতি গঠিত সব কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কমিটিতে শাহকে রাখা হয়েছে। আর কোনো মন্ত্রী এতগুলো কমিটির সদস্য নন। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজেও নন।

রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড় বিধানসভা কংগ্রেসের কাছে হারানোর পর সাময়িকভাবে কিছুটা প্রশ্নের মুখে পড়েছিল অমিত শাহর নেতৃত্ব। কিন্তু লোকসভা ভোটে বিপুল জয় সেই সব প্রশ্ন ধুয়ে মুছে সাফ করে দিয়েছে। এই মুহূর্তে তাঁকে প্রশ্ন করারও কেউ নেই। নেই বলেই জানুয়ারি মাসে সভাপতি পদে তাঁর মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও কেউ নতুন সভাপতি নির্বাচনের দাবি জানাননি। এমনকি, দলীয় নীতি মেনে কেউ তাঁকে সরে যেতেও বলেননি। শাহ এই সুযোগেরই সদ্ব্যবহার করতে সচেষ্ট। তিনি চাইছেন, আগামী বছর এই পদ ছেড়ে দেওয়ার আগে রাজ্যে রাজ্যে তাঁর ঘনিষ্ঠদের সভাপতি পদে বসিয়ে যেতে। এমন একজনকে সভাপতি করতে যিনি তাঁকে এড়িয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেবেন না।