কলকাতায় চিকিৎসকদের ধর্মঘট, ভোগান্তি

পিজি হাসপাতালের সামনে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ। কলকাতা, ১৪ জুন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
পিজি হাসপাতালের সামনে চিকিৎসকদের বিক্ষোভ। কলকাতা, ১৪ জুন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

সোমবার রাতে কলকাতার এনআরএস মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক প্রবীণ রোগীর মৃত্যুকে ঘিরে অশান্ত হয়ে ওঠে হাসপাতাল। এই মৃত্যুতে চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ এনে ওই রোগীর আত্মীয়রা চড়াও হন। একপর্যায়ে হাসপাতালের চিকিৎসক পরিবহ মুখোপাধ্যায় প্রচণ্ড মার খান। তাঁর মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লাগে। অবস্থা সংকটাপন্ন দেখা দিলে তাঁকে কলকাতার ন্যাশনাল নিউরো হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর মাথায় করা হয় অস্ত্রোপচার। বর্তমানে তাঁর অবস্থা আশঙ্কামুক্ত রয়েছে। এই ঘটনায় ওই দিন আরও ৫ চিকিৎসক আহত হন।

এই ঘটনার প্রতিবাদে এনআরএসএর জুনিয়র চিকিৎসকেরা কাজ বন্ধ করে দিয়ে ধর্মঘটে নামেন। এতে অচল হয়ে পড়ে হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা। জুনিয়র চিকিৎসকদের এই ধর্মঘটের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করেন কলকাতার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের জুনিয়র এবং সিনিয়র চিকিৎসকেরা। ফলে কার্যত অচল হয়ে পড়ে কলকাতার সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা।
এই ঘটনার জেরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতার এসএসকেএম বা পিজি হাসপাতালে এসে চিকিৎসকদের হুমকির সুরে কাজে যোগদানের সময় বেঁধে দেন বেলা দুটো পর্যন্ত। এ ছাড়া উত্তেজনাপূর্ণ ভাষণ দেন চিকিৎসকদের উদ্দেশে। এতে ক্ষুব্ধ হয় চিকিৎসক সমাজ। এরপরই চিকিৎসকেরা দাবি তোলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। ফলে চিকিৎসকেরা সেই মঙ্গলবার থেকে অব্যাহত রাখেন তাঁদের ধর্মঘট। তবে তাঁরা জরুরি বিভাগ চালু রাখলেও আউটডোর বন্ধ রেখেছেন।

এনআরএস হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেন চিকিৎসকেরা। কলকাতা, ১৪ জুন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
এনআরএস হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেন চিকিৎসকেরা। কলকাতা, ১৪ জুন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এদিকে এই ঘটনার জেরে দিল্লির এইমস–সহ বিভিন্ন রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরাও এসে দাঁড়ান পশ্চিমবঙ্গের চিকিৎসকদের এই আন্দোলনের পাশে। চিকিৎসকেরা দাবি তোলেন, হাসপাতালে তাঁদের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন হাসপাতালে যেসব চিকিৎসক লাঞ্ছিত হয়েছেন, আহত হয়েছেন সেই সব ঘটনার বিচার করে অভিযুক্ত লোকজনকে শাস্তি দিতে হবে।
এদিকে চিকিৎসকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া ঘোষণা দিয়েছে, এই ঘটনার প্রতিবাদে ১৭ জুন দেশব্যাপী চিকিৎসকেরা ধর্মঘট পালন করবেন।
এই ঘটনার জেরে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন হাসপাতালেও চিকিৎসকদের ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে।
চিকিৎসক নিগ্রহের প্রতিবাদে এবং তাঁদের নিরাপত্তা জোরদার করার দাবিতে আজ শুক্রবার বিকেলে কলকাতার বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এক প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হন। এই মিছিলে অপর্ণা সেনসহ কলকাতার বিভিন্ন স্তরের বুদ্ধিজীবীরাও যোগ দেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই ঘটনার জেরে অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রী মমতার পদত্যাগ দাবি করেছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা বন্ধ হওয়ায় কলকাতা হাইকোর্টে দায়ের হয়েছে একটি জনস্বার্থ মামলা।
এই ঘটনার প্রতিবাদে আজ কলকাতার পিজি হাসপাতালের ১৭৫ জন চিকিৎসক গণ–ইস্তফা দিয়েছেন। গণ–ইস্তফা দিয়েছেন কলকাতা মেডিকেল কলেজের ৬৫ জন, এনআরএস মেডিকেল কলেজের ১০৮ জন, আরজিকর মেডিকেল কলেজের ১২৬ জন, সাগর দত্ত মেডিকেল কলেজের ১৮ জন, ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ৩৫ জন, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের ১৪ জন চিকিৎসক।
চিকিৎসকদের এই ধর্মঘটের জেরে কার্যত অচল হয়ে পড়ে কলকাতার সব সরকারি হাসপাতাল। রোগীরা এসে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। আবার রোগীরা হাসপাতালে চিকিৎসা না পাওয়ায় ইতিমধ্যে বেশ কজন রোগীর মৃত্যু হওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।