নদীতে নিখোঁজ জাদুকর ম্যানড্রেকের লাশ উদ্ধার

কলকাতার জাদুকর ম্যানড্রেকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত
কলকাতার জাদুকর ম্যানড্রেকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ছবি: সংগৃহীত

নদীতে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় জাদু দেখাতে গিয়ে নিখোঁজ ‘জাদুকর’ ম্যানড্রেকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২৮ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে হাওড়ার রামকৃষ্ণপুর ঘাটের কাছে ভেসে ওঠে জাদুকরের লাশ। পরে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। এ সময় তাঁর দুই পা বাঁধা অবস্থায় ছিল।

কলকাতার জাদুকর ম্যানড্রেকের আসল নাম চঞ্চল লাহিড়ী। কলকাতার উপকণ্ঠের সোনারপুর-রাজপুর পৌরসভার চণ্ডীতলাতে তাঁর বাড়ি। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি বিচিত্র ধরনের জাদু দেখিয়ে আসছিলেন।

রোববার ম্যানড্রেক নতুন জাদু দেখাতে গিয়েছিলেন কলকাতার হাওড়ার গঙ্গা নদীতে। কলকাতার হাওড়া ব্রিজের নিচে তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল নদীতে। জাদুটি ছিল, তাঁকে শিকল দিয়ে বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হবে। এর কিছুক্ষণ পরেই তিনি নদীর তলদেশে শিকল খুলে বেরিয়ে আসবেন। তারপর তাঁকে তুলে আনা হবে।

এই লক্ষ্য নিয়ে কলকাতার ঐতিহাসিক হাওড়া ব্রিজের কাছে মিলেনিয়াম পার্কের কাছ থেকে একটি লঞ্চে করে শিকল-বাঁধা অবস্থায় নিয়ে আসা হয় জাদুকর ম্যানড্রেককে। তারপর জাদুকরকে বহনকারী লঞ্চটিকে আনা হয় হাওড়া ব্রিজের নিচে। সেখানে একটি ক্রেন এনে জাদুকরকে লঞ্চ থেকে তুলে এনে ছেড়ে দেওয়া হয় গঙ্গা নদীবক্ষে। জাদুকরের সঙ্গে ছিলেন তাঁর দলের ১৫ কর্মী এবং কলকাতা পৌর করপোরেশনের কাউন্সিলর দেবাশীষ কুমার। গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ জাদুকর ম্যানড্রেককে ছেড়ে দেওয়া হয় নদীবক্ষে। কিন্তু সময় অতিবাহিত হলেও জাদুকর আর নদীর ওপর উঠে না এলে চিন্তায় পড়ে যান এই জাদু দেখতে আসা হাজারো দর্শক এবং কাউন্সিলর স্বয়ং। তখন অনেকেই বলতে থাকেন, নদীর অন্য কোনো জায়গা থেকে ঠিকই উঠে আসবেন জাদুকর।

এর আগে ১৯৯৮ সালে বাক্সবন্দী অবস্থায় ম্যানড্রেককে গঙ্গাবক্ষে ফেলে দেওয়ার পর তিনি ফিরে আসায় তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে কলকাতাজুড়ে।

জাদুকর ম্যানড্রেক এর আগে হাত-পা বেঁধে সাঁতার কেটে, চোখ বেঁধে গাড়ি-বাস চালিয়ে কলকাতাবাসীকে চমকে দিয়েছিলেন।

লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ভেঙে পড়েছে জাদুকরের পরিবার। বাবা–মা, স্ত্রী ও ছেলে দুর্জয় লাহিড়ীকে নিয়ে তাঁর সংসার। তাঁর স্ত্রী ঋতা এবং ছেলে দুর্জয় সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন।

জাদুকরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন কলকাতার আরেক জাদুকর পিসি সরকার জুনিয়র। তিনি বলেছেন, জাদু দেখাতে ম্যানড্রেকের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। ওর দুপায়ে ভারী মোজা এবং তার ওপর পট্টি জড়ানো ছিল। ওই ভারী জিনিস পায়ে পরে সাঁতার কাটা যায় না। তাই বাঁধন খুলতে পারলেও সাঁতরাতে পারেননি।

পিসি সরকার বলেন, ম্যাজিক হলো বিজ্ঞান। তাই জাদু দেখাতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে হয়। সেখানে খামতি থাকলে বিপদ ডেকে আনতে পারে। মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করাই সাফল্য বয়ে আনতে পারে।