ইরানকে দমাতে মধ্যপ্রাচ্যে হাজার সেনা পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ওমান উপসাগরে তেলবাহী ট্যাংকে হামলার পেছনে ইরানের জড়িত থাকার দাবি করে এই ছবিগুলো প্রকাশ করেছে পেন্টাগন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
ওমান উপসাগরে তেলবাহী ট্যাংকে হামলার পেছনে ইরানের জড়িত থাকার দাবি করে এই ছবিগুলো প্রকাশ করেছে পেন্টাগন। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ইরানের সঙ্গে টানটান উত্তেজনার মধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত এক হাজার সেনাসদস্য পাঠাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল সোমবার রাতে দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্যাট্রিক শানাহান নতুন করে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেছেন, ইরানের ‘বৈরী আচরণের’ প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে।

ওমান উপসাগরে তেলবাহী দুটি ট্যাংকারে বিস্ফোরণের ঘটনার জন্য দায়ী ইরান—যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই অভিযোগ উত্থাপন করেছে। এই দাবির পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ছবিও প্রকাশ করেছে।

গতকাল ইরান ঘোষণা করেছে, ২০১৫ সালের চুক্তি অনুসারে তারা পারমাণবিক কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা দমিয়ে রাখবে না। আন্তর্জাতিক পরাশক্তিগুলোর সঙ্গে চুক্তি অনুসারে ২৭ জুনের মধ্যে তাঁরা নিজেদের ইউরেনিয়াম মজুত রাখার সীমাও লঙ্ঘন করবে।

২০১৫ সালে ছয়টি পরাশক্তির সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি অনুসারে ইরান পারমাণবিক উন্নয়ন কর্মসূচি কমিয়ে আনে। দেশটি ইউরেনিয়াম সীমিত রাখার ব্যাপারেও সম্মত হয়। ইউরেনিয়াম পারমাণবিক চুল্লি ও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এসব পদক্ষেপের বিনিময়ে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় ওই সব দেশ। তবে গত বছর ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাম প্রত্যাহার করে নেন এবং ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদেশগুলোকে ইরান থেকে তেল কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের চাপ দেয়। এতে অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়ে ইরান। কারণ, ইরানের অর্থনীতি তেলের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে দেশটি চুক্তি ভঙ্গ করে ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়ানোর হুমকি দিয়েছে।

গতকাল ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি বলেছেন, আগামী ১০ দিনের মধ্যে চুক্তি ভঙ্গ করে ইউরেনিয়াম মজুতের সীমা লঙ্ঘন করতে যাচ্ছেন তাঁরা।

তবে ইরান এটাও বলেছে, ইউরোপীয় দেশগুলোর এখনো সময় আছে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে ইরানকে রক্ষা করার। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানি ইরানকে চুক্তি ভঙ্গ না করতে সতর্ক করেছে।

সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেওয়ার কথা জানিয়ে এক বিবৃতিতে প্যাট্রিক শানাহান বলেন, ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সংঘাতে যেতে চায় না। তবে মার্কিন স্বার্থ রক্ষায় এই অঞ্চলে নিয়োজিত সামরিক বাহিনীর নিরাপত্তা ও কল্যাণের জন্য এই ব্যবস্থা নেওয়া হলো। তিনি আরও জানান, সামরিক বাহিনী পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক নজরে রাখবে। তবে ঠিক কোথায় এই অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হবে, সে সম্পর্কে তিনি কোনো তথ্য দেননি।

গত মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের এই ঘোষণা এসেছে । তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, দেড় হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করা হবে।

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত রোববার বলেছেন, ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না যুক্তরাষ্ট্র। এরপরও পূর্ণ পরিসরে সবকিছু বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। আজ মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যের দায়িত্বে থাকা মার্কিন সামরিক কমান্ডারের সঙ্গে ফ্লোরিডায় তাঁর বৈঠক করার কথা রয়েছে।

সেনা মোতায়েনের ঘোষণার কিছু আগে মার্কিন সামরিক দপ্তর পেন্টাগন কিছু ছবি প্রকাশ করে। তাতে দেখানো হয়, জাপান মালিকানাধীন তেল ট্যাংকার থেকে অবিস্ফোরিত বোমা সরিয়ে নিচ্ছেন ইরানের সামরিক বাহিনী ইরানিয়ান রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পসের (আইআরজিসি) সদস্যরা। এর আগে একই বিষয়ে ভিডিও প্রকাশ করে পেন্টাগন।

গত বৃহস্পতিবার নরওয়ের মালিকানাধীন ফ্রন্ট আলটেয়ার নামের একটি ট্যাংকারেও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। যুক্তরাষ্ট্র এই হামলাগুলোসহ গত মে মাসে হরমুজ প্রণালির বাইরের চারটি হামলার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করেছে। তবে ইরান এসব অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন’ দাবি করেছে।