চোরদের আর দলে রাখা যাবে না: মমতা

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়টার্স ফাইল ছবি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়টার্স ফাইল ছবি

সরকারি কাজ করিয়ে দেওয়ার নামে যেসব তৃণমূল নেতা এত দিন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন, এবার তাঁদের বিরুদ্ধে সরব হলেন দরটির নেত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মঙ্গলবার এক সভায় ঘুষ নেওয়া নেতা-কর্মীদের তিনি হুঁশিয়ারি করে বলেন, ‘ঘুষের টাকা ফেরত দিয়ে দিন। চোরদের আর দলে রাখা হবে না। যাঁরা দল ছাড়তে চান, তাঁরা এখুনি চলে যান।’

মমতার এই ঘোষণার পর রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয়েছে ঘুষের টাকা ফেরত পাওয়ার আন্দোলন। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে মালদহের মহানন্দাটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের সাবেক প্রধান সুকেশ যাদবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ‘গ্রাম উন্নয়ন প্রকল্পের’ এক কোটি টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া অভিযোগ আছে নির্মল বাংলা প্রকল্পের অধীনে শৌচালয় নির্মাণ প্রকল্পে কোনো কাজ না করেই লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। গতকাল বুধবার আদালত তাঁকে জেলহাজতে পাঠিয়ে দেন।

আসলে একটু দেরিতেই বোধোদয় হলো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অনেক দিন ধরেই বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ করে আসছিল, কোনো সরকারি অনুদান দেওয়ার আগে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। দরিদ্র মানুষের জন্য গৃহ নির্মাণ প্রকল্প থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী, সমব্যথী, নির্মল বাংলা, এক শ দিনের কাজ—এমন সরকারি প্রকল্প থেকেও নিয়মিত ঘুষ আদায় করেছেন তৃণমূলের নেতারা। নানা ভাতা ও অনুদানে ভাগ বসিয়েছেন—এমন নজিরও আছে। তবে কখনোই এই অভিযোগ স্বীকার করেনি তৃণমূল। মমতাও মানতেন না বিষয়টি।

তবে লোকসভা নির্বাচনের ফলাফলে উঠে এসেছে দীর্ঘদিনের এই অনাচারে মানুষের ক্ষোভের প্রতিচ্ছবি। গ্রাম–বাংলার মানুষ ছুড়ে ফেলেছে তৃণমূলকে। ফলাফল বিশ্লেষণ করে তৃণমূল এখন বুঝেছে যে রাজ্যের মানুষ এই ঘুষ রাজনীতি মেনে নিতে পারেননি। আর তাই ভোটও দেননি তাঁরা।

তাই এবার অভিযোগ স্বীকার করতেই হলো মমতাকে। গত মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের ১২৫টি পৌরসভার প্রায় তিন হাজার দলীয় চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলরের ওই সভায় মমতা এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে দলকে পুনর্গঠিত করার ব্রত নেন। মমতা ঘোষণা দেন, যাঁরা কাজ করতে গিয়ে মানুষের কাছ থেকে ‘কাটমানি’ বা ঘুষ নিয়েছেন, তাঁরা অবিলম্বে সেই টাকা ফেরত দিয়ে দিন। না হলে দুর্নীতি দমন শাখা মাঠে নেমে তদন্ত করবে। মমতা বলেন, ‘যাঁরা দল ছাড়তে চান, তাঁরা এখুনি চলে যান। তবে চুরি করে দল ছেড়ে অন্য দলে গেলেও রেহাই পাবেন না। আরও বেশি করে ফাঁসবেন।’

এই ঘোষণার পর মধ্যরাতে গ্রেপ্তার হন সুকেশ যাদব। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় ঘুষের টাকা ফেরত পাওয়ার আন্দোলন। বীরভূমের ইলামবাজারের শ্রীচন্দ্রচূড় গ্রামে পঞ্চায়েত সদস্য উত্তম বাউড়ির বাড়িতে গিয়ে ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি তোলন গ্রামবাসী। তাঁরা বাড়ি ঘেরাও করে রাখেন। তৃণমূলের বুথ সভাপতি রাজীব আকুড়ের বাড়িও ঘেরাও করেন মানুষ। পূর্ব বর্ধমানে ও হুগলির দাদপুরে তৃণমূলের দুই নেতার বাড়িতে গিয়ে ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিতে হামলা চালান গ্রামবাসী।

আলিপুরদুয়ারে জেলা তৃণমূলের অন্দরে দাবি উঠেছে, যেসব নেতা ঘুষ নিয়েছেন, তাঁরা যেন ঘুষের টাকা অবিলম্বে ফেরত দিয়ে দেন। বাঁকুড়ার গদারডিহি পঞ্চায়েতে সরকারি গৃহ নির্মাণ প্রকল্পে যেসব তৃণমূল নেতারা ঘুষ নিয়েছেন, তাঁদের ঘুষের টাকা অবিলম্বে ফেরত দেওয়ার জন্য একটি স্মারকলিপি প্রদান করেছে স্থানীয় বিজেপির নেতারা।

তবে মমতার এই ‘কাটমানি’ বা ঘুষের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশকে ‘নাটক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, দলের নেতারা যে ‘কাটমানি’ নিচ্ছেন, তা এত দিন পর বুঝলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?

অন্যদিকে, সিপিএমের পরিষদীয় দলের নেতা বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘সাহস থাকলে এবার মুখ্যমন্ত্রী শ্বেতপত্র প্রকাশ করে জানিয়ে দিন, কত টাকা কাটমানি বা ঘুষের টাকা নিয়েছেন তাঁর দলের নেতারা?’