ইরানের সহায়তা চায় যুক্তরাষ্ট্র

তেহরানের সঙ্গে যুদ্ধ নয়, বরং সমঝোতায় আসতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: রয়টার্স।
তেহরানের সঙ্গে যুদ্ধ নয়, বরং সমঝোতায় আসতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: রয়টার্স।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তেহরানের সঙ্গে কোনো যুদ্ধে জড়াতে চায় না যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের এক জ্যেষ্ঠ সামরিক কমান্ডার যুক্তরাষ্ট্রকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, পারস্য অঞ্চলে যেকোনো সংঘর্ষ অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যার ফলে এ অঞ্চলে অবস্থানরত মার্কিন সেনাদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে। তাঁর এ হুঁশিয়ারির জবাবে গতকাল রোববার যুদ্ধের বিপক্ষে নিজের অবস্থানের কথা জানান ট্রাম্প। যুদ্ধ নয়, বরং চলমান সংকট নিরসনে ইরানের সহায়তা চায় যুক্তরাষ্ট্র।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরেই সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। উপসাগরীয় এলাকায় তেলবাহী ট্যাংকারে হামলা ও ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে গত শনিবার নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে নিষেধাজ্ঞা কী ধরনের, সে ব্যাপারে তিনি কিছু জানাননি। এদিকে ইরান তেলবাহী ট্যাংকারে হামলার কথা অস্বীকার করলেও মার্কিন সামরিক ড্রোনের আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে তা ভূপাতিত করার কথা স্বীকার করেছে।

আমেরিকাভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ প্রোগ্রামে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যুদ্ধে জড়ানোর পক্ষপাতী নই।’ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গতকাল রোববার ট্রাম্পের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলেন, উপসাগরীয় অঞ্চলে চলমান উত্তেজনা নিরসনে তেহরানের সঙ্গে আলোচনায় বসতে চায় ওয়াশিংটন।

পম্পেও বলেন, কোনো ধরনের পূর্বশর্ত ছাড়াই বৈঠকে অংশ নিতে রাজি ওয়াশিংটন। ইরান খুব ভালো করেই জানে—যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করতে হবে। ইরান রাজি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই আলোচনা শুরু হতে পারে বলে আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করেছেন পম্পেও। যুক্তরাষ্ট্র সেই দিনের অপেক্ষায় আছে বলে জানান তিনি। ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক বৈঠকে অংশ নিতে যাচ্ছেন পম্পেও।

আজ সোমবার ইরানের ওপর ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ অবরোধ আরোপের কথা জানিয়েছেন পম্পেও। উপসাগরীয় অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে ইরান যে সম্পদ ব্যবহার করে, তার পরিমাণ সীমিত করতে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হচ্ছে। ইরান জানিয়েছে, পারমাণবিক চুক্তিতে কোনো ধরনের আপস তাঁরা করবেন না।

আঞ্চলিক উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলেছে গতকালের হুতি বিদ্রোহীদের হামলা। ইরানসমর্থিত হুতি মিলিশিয়ারা আবহা বিমানবন্দর লক্ষ্য করে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এ হামলায় সিরিয়ার এক নাগরিক নিহত ও ২১ জন সাধারণ নাগরিক আহত হয়েছে। ইয়েমেনে ইরানসমর্থিত হুতি বিদ্রোহী ও সরকারি বাহিনীর মধ্যে প্রায় চার বছর ধরে লড়াই চলছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট আবদ-রাব্বু মানসুর হাদি সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৪ সালের শেষ দিকে হুতিরা হাদি সরকারকে সানার ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে। ২০১৫ সালে আরব উপসাগরীয় দেশগুলোর জোট ইয়েমেনে দুই পক্ষের লড়াইয়ে অংশ নেয়।

চলমান উত্তেজনা নিরসনে ইরানের ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙা করে তুলতে কোনো চুক্তির ব্যবস্থা করা যায় কি না ভাবছেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমার ধারণা, ইরান সমঝোতায় আসতে চায়। চুক্তি করতে চায়। আমার চুক্তি পারমাণবিক। ইরানের কাছে কোনো পারমাণবিক অস্ত্র থাকতে পারবে না।’

এদিকে নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে না ইরান। তাদের দাবি, নতুন অবরোধের ঘোষণা কেবল প্রোপাগান্ডা। রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরিবকে (আইআরআইবি) দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্বাস মৌসাভি বলেন, এর আগে এত বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে যে নতুন করে আর কিছু চাপিয়ে দেওয়ার বাকি নেই।

ইরান জানিয়েছে, তারা কোনো পারমাণবিক অস্ত্র খুঁজছে না। ২০০০ সালে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ফতোয়া জারি করে কোনো ধরনের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা ব্যবহার নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন। সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে না ইরান।

ইরানের হামলায় ভূপাতিত মার্কিন গুপ্তচর ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ। ছবি: রয়টার্স।
ইরানের হামলায় ভূপাতিত মার্কিন গুপ্তচর ড্রোনের ধ্বংসাবশেষ। ছবি: রয়টার্স।

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে ছয়টি দেশের করা পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র গত বছর নিজেদের প্রত্যাহার করে ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওই ঘটনা থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পারমাণবিক চুক্তিতে সই করা অন্য পাঁচটি দেশ যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীনের হস্তক্ষেপ চায় ইরান। ইরান মার্কিন স্বার্থে হামলা করতে পারে—নিজ দেশের এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত মাসে ইরানকে লক্ষ্য করে মধ্যপ্রাচ্যে রণসাজে সজ্জিত হয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চারটি ট্যাংকারে হামলা এবং জুন মাসে ওমান উপসাগরীয় এলাকায় জাপান ও নরওয়ের মালিকানাধীন দুটি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে মধ্যপ্রাচ্যে আরও এক হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সামরিক ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় পরদিন ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করেন ট্রাম্প।

নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে শর্তহীন আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।