জোট ছাড়লেন মায়াবতী, আবার একলা চলা

মায়াবতী ও অখিলেশ যাদবের ফাইল ছবি
মায়াবতী ও অখিলেশ যাদবের ফাইল ছবি

সমাজবাদী পার্টির (এসপি) সঙ্গে গাঁটছড়া ছিন্ন করে উত্তর প্রদেশে ফের একলা চলার কথা জানিয়ে দিলেন বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) নেত্রী মায়াবতী। আজ সোমবার লক্ষ্ণৌয়ে দলের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তের কথা স্পষ্ট করে জানানোর পাশাপাশি তিনি এত দিনের জোটসঙ্গী অখিলেশ যাদবকে মুসলমান-বিরোধী বলেও জানিয়ে দেন। এই ঘোষণার মধ্য দিয়েই শেষ হলো এই দুই দলের সাকল্যে পাঁচ মাসের জোট।।

লোকসভা ভোটে বিজেপিকে রুখতে মায়াবতী ও অখিলেশ জোট বাঁধার অঙ্গীকার করেছিলেন। ১২ জানুয়ারি যৌথভাবে সংবাদ সম্মেলন করে তাঁরা ওই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েও দিয়েছিলেন। পরে সেই জোটে যোগ দেন রাষ্ট্রীয় লোকদলের অজিত সিংও। আজকের ঘোষণার পর এখন এটা স্পষ্ট, আগামী দিনে রাজ্যের উপনির্বাচনগুলো আবার বহুমুখী হতে চলেছে। উত্তর প্রদেশ থেকে এবার মোট ১১ জন বিধায়ক সাংসদ পদে নির্বাচিত হয়েছেন। মায়াবতী জানিয়ে দিয়েছেন, এবার থেকে রাজ্যে তাঁর দল একাই লড়বে।

শুধু জোটত্যাগই নয়, অখিলেশ এবং তাঁর বাবা মুলায়ম সিং যাদবকেও মায়াবতী একহাত নিয়েছেন। অখিলেশ শুধু ‘মুসলমান বিরোধী’ই নন, ‘দুর্বিনীত’ এবং অ-যাদব দলিত-বিরোধী বলেও মায়াবতী মনে করেন। বৈঠকে তিনি বলেন, যাদব ভোট বিএসপির দিকে যায়নি। অখিলেশ নিজের স্ত্রী ডিম্পলকেও জেতাতে পারেননি। অখিলেশের দলের যাঁরা জিতেছেন তাঁরা মুসলমানদের ভোট পেয়েছিলেন বলেই জিততে পেরেছেন। অথচ টিকিট বিলির সময় অখিলেশ তাঁকে বার্তা পাঠিয়েছিলেন, মুসলমানদের যেন বেশি টিকিট না দেওয়া হয়।

কেন তিনি জোট ছাড়লেন তা বিস্তারে জানিয়ে মায়াবতী পর পর দুটি টুইট করেন। তাতে এই সব অভিযোগ এনে তিনি লিখেছেন, ভোটের পর সমাজবাদী পার্টির ব্যবহার তাঁকে বুঝিয়েছে, এইভাবে বিজেপিকে হারানো যাবে না। তাই পার্টি ও দলিত আন্দোলনের স্বার্থে আগামী দিনের ছোট বড় সব নির্বাচনে বিএসপি একা লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
লোকসভা ভোটে এসপি-বিএসপি-আরএলডির জোট উত্তর প্রদেশে মাত্র ১৫টি আসনে জিতেছে। বিএসপি জেতে ১০টা, বাকি ৫টা এসপি। মায়াবতীর অভিযোগ, ভোট বিপর্যয়ের পর অখিলেশ তাঁকে একবারের জন্যও ফোন করেননি। অথচ বয়সে বড় হওয়া সত্ত্বেও তিনি দলের শীর্ষ নেতা সতীশ মিশ্রকে দিয়ে অখিলেশকে ফোন করিয়েছিলেন। অখিলেশের এই ফোন না করা মায়াবতীর চোখে দুর্বিনীত।
মায়াবতী বাদ দেননি প্রবীণ মুলায়ম সিং যাদবকেও। তাঁর অভিযোগ, তাজ করিডর মামলায় মুলায়মই তাঁকে ফাঁসিয়েছিলেন। তাজ করিডর মামলা দীর্ঘ পনেরো বছরের পুরোনো। ২০০৩-২০০৪ সালে মায়াবতী মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন আগ্রায় তাজমহলের চারদিক পরিচ্ছন্ন করে পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে এক প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন। মোট ১৭৫ কোটি রুপির সেই প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তা নিয়ে তদন্তও হয়। মায়াবতী এই মামলার দরুন বারবার বিজেপিকে দায়ী করলেও এই প্রথম মুলায়মের নাম টেনে আনলেন।

মায়াবতীর বিরুদ্ধে বহু তদন্ত এখনো চলছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ আয়ের সঙ্গে সম্পদের সংগতি না থাকা। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, জোট ছেড়ে বেরিয়ে আসার মধ্য দিয়ে মায়াবতী শাসক বিজেপিকে একটা রাজনৈতিক বার্তা দিতে চাইছেন। জোট ভাঙলে বহুমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজেপির লাভ।

মায়াবতীর দিক থেকে এত রাজনৈতিক আক্রমণ সত্ত্বেও অখিলেশ যাদব এখনো একটা কথাও বলেননি। কোনো মন্তব্যও করেননি।