বৈশ্বিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা বিভক্ত হবে?

‘নিজস্ব ইন্টারনেট’ ব্যবস্থা গড়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে রাশিয়া ও ইরান। এ কাজে দেশ দুটি সফল হলে ভবিষ্যতে বৈশ্বিক ইন্টারনেট বিভক্ত হয়ে পড়বে। ছবি: রয়টর্স।
‘নিজস্ব ইন্টারনেট’ ব্যবস্থা গড়ার পদক্ষেপ নিচ্ছে রাশিয়া ও ইরান। এ কাজে দেশ দুটি সফল হলে ভবিষ্যতে বৈশ্বিক ইন্টারনেট বিভক্ত হয়ে পড়বে। ছবি: রয়টর্স।

ইন্টারনেটের বর্তমান অখণ্ড রূপ ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কিছু দেশ কয়েক বছর ধরে নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। সাইবার জগতে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে, এমন আশঙ্কা করে দেশগুলো ইন্টারনেটে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার কথা বলছে।

‘নিজস্ব ইন্টারনেট’ তৈরিতে দৃশ্যমান পদক্ষেপ নিচ্ছে রাশিয়া। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গত মাসেই এমন ব্যবস্থা তৈরির জন্য নতুন আইন পাস করিয়েছেন। প্রযুক্তিবিষয়ক সাময়িকী ‘অয়ারড’ বলছে, রাশিয়ার পথে এগোচ্ছে ইরানও। গত মাসে ইরান ঘোষণা দিয়েছে, ‘জাতীয় তথ্য নেটওয়ার্ক’ প্রকল্পের কাজ ৮০ শতাংশ শেষ করেছে দেশটি। প্রকল্পটি ইরানের ‘নিজস্ব ইন্টারনেট’ ব্যবস্থা গড়ার অংশ।

ইন্টারনেটে সার্বভৌম ক্ষমতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা বিশ্বে নতুন নয়। এখন পর্যন্ত চীন এ পথে অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বৈশ্বিক ইন্টারনেট ব্যবস্থা থেকে চীনের নিজেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা এখন পরিচিত ‘দ্য গ্রেট ফায়ারওয়াল অব চায়না’ নামে। এটা এক বিশাল সেন্সরশিপ ব্যবস্থা। স্বাধীন মত প্রকাশে চীনের জনগণের ওপর এই সেন্সরশিপ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও প্রকল্পটির অর্থনৈতিক প্রভাব বেশ গভীর। এর আওতায় চীন ইন্টারনেটভিত্তিক শত কোটি ডলার মূল্যের কোম্পানি গড়তে পেরেছে।

সফটওয়্যারনির্ভর এই সেন্সরশিপ ব্যবস্থা দিয়ে চীন আসলে জনগণের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। জনগণ কোন তথ্য, আধেয় বা কোন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবে, সেটা এর মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ব্যবস্থা ইন্টারনেটের উপরিতলের নিয়ন্ত্রণ। কারণ বিকল্প পদ্ধতি (ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা টর প্রজেক্ট) ব্যবহার করে চীনের এই সেন্সরশিপ সহজে পাশ কাটানো যায়।

তবে নিজস্ব ইন্টারনেট তৈরিতে রাশিয়া ভিন্ন কিছু ভাবছে। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ‘নিউ আমেরিকা ফাউন্ডেশনের’ সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক রবার্ট মোগেস বলেন, ইন্টারনেট নিয়ে রাশিয়ার আকাঙ্ক্ষা ভিন্ন। আরও গভীরভাবে ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায় রাশিয়া।

ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় রাশিয়া একের পর এক নতুন নীতিমালা করছে। এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে গত মার্চে দেশটিতে বিক্ষোভ হয়েছে। ছবি: এএফপি
ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় রাশিয়া একের পর এক নতুন নীতিমালা করছে। এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে গত মার্চে দেশটিতে বিক্ষোভ হয়েছে। ছবি: এএফপি

রাশিয়ার নিজস্ব ইন্টারনেট
পৃথিবীর কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলো ২০১০ সালের পরে বড় ধরনের ধাক্কা খায়। এ সময় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে সূচিত ‘আরব বসন্তের’ মতো আন্দোলনের ঢেউ দেশে দেশ ছড়িয়ে পড়ে। টলে যায় দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা একনায়কদের মসনদ। ক্ষমতা হারান হোসনি মোবারক, বেন আলি ও গাদ্দাফির মতো শাসক। অন্যদিকে, ২০১১ থেকে ২০১২ সালে রাশিয়ায় ‘উইন্টার অব প্রোটেস্ট’ শীর্ষক এক আন্দোলনেও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম তথা ইন্টারনেটের ভূমিকা ছিল।

এসব আন্দোলনের পরে ইন্টারনেটে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাশিয়া ও চীন খোলামেলা কথা বলতে শুরু করে। এই সময় রাশিয়ার নাগরিকদের ওপর ‘বিকৃত প্রভাব’ বিস্তার করা থেকে পশ্চিমাদের বিরত থাকার আহ্বান জানায় মস্কো।

আন্দোলনের পরে ইন্টারনেটে চীনের মতো ডিজিটাল সীমান্ত গড়ার কথা ভাবতে শুরু করে রাশিয়া। তবে চীনের দেখানো পদ্ধতিতে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করাটা রাশিয়ার পক্ষে সম্ভব ছিল না।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ‘দ্য কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশনের’ সাইবার বিশেষজ্ঞ অ্যাডাম সিগাল বলেন, চীনের নিয়ন্ত্রণপদ্ধতি সাধারণত ইন্টারনেটের আধেয় (শব্দ, লেখা, ভিডিও, অডিও) নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এই পদ্ধতি রাশিয়াতে কাজ করত না।

যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী পল বাফেডের তৈরি মানচিত্রের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগের পাইপলাইন বসানো হয়। বাফেড বলেন, রাশিয়ার মতো দেশ বাকি বিশ্বের সঙ্গে জটিল সংযোগ ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে ইন্টারনেটে যুক্ত। দেশটি নিজেও জানে না কতটি এবং কতভাবে তারা বৈশ্বিক ইন্টারনেটে যুক্ত। ফলে দেশের সংযোগের ওপর নজরদারি করে ইন্টারনেটে নিয়ন্ত্রণ করাটা রাশিয়ার জন্য সহজ নয়। তবে শুরুতে এ বিষয়ে নজর দেওয়ায় চীন এ ভাবেও নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। বাধ্য হয়েই রাশিয়া ভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে।

ইন্টারনেটের একটি মৌলিক বিষয় হলো ডিএনএস। এটা বলে দেয় কীভাবে ইন্টারনেটের আইপি অ্যাড্রেসকে পাঠযোগ্য করতে হয়। যেমন, প্রথম আলোর আইপি অ্যাড্রেস 35.200.199.101। ডিএনএস এটাকে অনুবাদ করে পাঠযোগ্য www.prothomalo.com করে তোলে।

রাশিয়া এই ডিএনএস ব্যবস্থার (বর্তমান সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে) একটি নিজস্ব কপি তৈরি করেছে। এতে করে কেউ রাশিয়া থেকে গুগলের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে গেলে তিনি স্বয়ংক্রিয় ভাবে চলে যাবেন দেশটির নিজস্ব সার্চইঞ্জিন ইয়ানডেস্কে। একইভাবে ফেসবুকে ঢুকতে গেলে চলে যাবেন রাশিয়ার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ভিকেতে। গত এপ্রিলে এই বিষয়ে সফল পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া।

মোগেস বলেন, এই প্রকল্প সফল হলে রাশিয়ার আর সেন্সরশিপের প্রয়োজন হবে না। এমনকি রাশিয়ার ইন্টারনেট ট্রাফিক কখনোই বাইরে যাবে না। নাগরিকেরা দেশটির বাইরের কোনো তথ্যভান্ডারেও প্রবেশের সুযোগ পাবেন না।

রাশিয়ার প্রকল্পে সরকারের এতটাই গভীর নিয়ন্ত্রণ যে, কোনো ‘ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক’ অথবা ‘টর প্রজেক্টের’ মাধ্যমেও বিকল্প নেটওয়ার্ক তৈরি করে বৈশ্বিক ইন্টারনেটে প্রবেশ করা যাবে না। চীনে এখনো যেটা সম্ভব।

সাবমেরিন কেবলের মতো একাধিক সংযোগ দিয়ে বৈশ্বিক ইন্টারনেটে যুক্ত বিভিন্ন দেশ। ছবি: এএফপি
সাবমেরিন কেবলের মতো একাধিক সংযোগ দিয়ে বৈশ্বিক ইন্টারনেটে যুক্ত বিভিন্ন দেশ। ছবি: এএফপি

বৈশ্বিক মুক্ত ইন্টারনেটে সমস্যা কোথায়?
বৈশ্বিক ইন্টারনেট ও এর প্রযুক্তিগত গঠন প্রক্রিয়ার (যেমন-ডোমেইন সিস্টেম, কেবল) নিয়ন্ত্রণ পশ্চিমাদের হাতে। এ নিয়ন্ত্রণে অনেক রাষ্ট্রই খুশি নয়।

অখুশি রাষ্ট্র যাদের কর্তৃত্ববাদীও বলা হয়, সেই দেশগুলো ইন্টারনেটের তথ্য প্রকাশ ব্যবস্থার ওপর অসন্তুষ্ট। বৈশ্বিক ইন্টারনেটে অবাধে তথ্য প্রকাশ করা যায়। তা যেকোনো তথ্যই হোক না কেন। ফলে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্রগুলোকে অনেক সময় বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়।

অন্যদিকে, মুক্ত ইন্টারনেটে এমন কিছু সমস্যা আছে, যা সব দেশের জন্যই সমান গুরুতর। বর্তমান সাইবার দুনিয়ায় একটি দেশের জনগণ সে দেশের সামরিক স্থাপনা কিংবা বিদ্যুৎ বা জরুরি পানি ব্যবস্থাপনার মতোই ঝুঁকিপূর্ণ।

মোগেস বলেন, বিশাল ও উন্মুক্ত তথ্য জগতে প্রবেশের সুযোগ মানুষকে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর প্রভাব রাখতে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এর প্রভাব ভয়াবহ হতে পারে। অন্যদের তুলনায় বেশ আগেই এটা রাশিয়া ও চীন বুঝতে পেরেছে।

এ জন্য রাশিয়া ও চীনের দর্শন হলো, অন্য যেকোনো স্পর্শকাতর বিষয়ের মতো দেশের জনগণও গুরুত্বপূর্ণ। সামরিক স্থাপনা যেভাবে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে রক্ষার করতে হয়, একইভাবে জনগণকেও রক্ষা করা উচিত। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লিঙ্কন পিগম্যানের মতে, ইন্টারনেট জগতে ‘ভুয়া সংবাদ’ বাস্তব পৃথিবীর ‘ভাইরাসের’ মতোই ক্ষতিকর।

অন্যদিকে, বৈশ্বিক ইন্টারনেটের নিয়ন্ত্রণের বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। যুক্তরাষ্ট্র চাইলে এর মাধ্যমে চরবৃত্তিও চালাতে পারে। বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের এমন কর্মকাণ্ড ফাঁস করে আলোড়ন তুলেছিল এডওয়ার্ড স্নোডেন। এ ছাড়া, সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সাইবার হামলাও উদ্বেগের কারণ। তবে নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরিতে বড় ধরনের ঝুঁকি আছে।

বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ
নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরিতে রাশিয়া বা ইরানের মতো দেশের প্রধান ঝুঁকিটি হলো অর্থনৈতিক। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন এখন বৈশ্বিক ইন্টারনেটর ওপর নির্ভরশীল। ফলে বৈশ্বিক ইন্টারনেট থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করার সঙ্গে সঙ্গে রাশিয়া অর্থনৈতিকভাবেও একঘরে হয়ে যেতে পারে।

তবে এই অবস্থা থেকে মুক্তির পথ দেখাতে পরে চীনের প্রকল্প ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’। ‘একুশ শতকের সিল্করুট’ হিসেবে বিবেচিত এই প্রকল্পের মাধ্যমে চীন বাকি বিশ্বের সঙ্গে স্থলপথ, সমুদ্রবন্দর ও টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক স্থাপন করতে চায়।

বিবিসি বলছে, ৮০টিরও বেশি দেশের টেলিকমিউনিকেশন প্রকল্পে যুক্ত হয়েছে চীন। কেবল বসানো থেকে শুরু করে মূল নেটওয়ার্ক তৈরিতেও চীন দেশগুলোকে সহায়তা করছে। এর মধ্য দিয়ে চীন বিকল্প বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ভূরাজনীতি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান স্ট্রার্টফরের বিশেষজ্ঞ সিম ট্যাকের মতে, এই নেটওয়ার্ক প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মধ্য দিয়ে চীন ও রাশিয়া নিজেদের মতো একটা অর্থনৈতিক বলয় তৈরি করতে পারবে। পশ্চিমাভিত্তিক ইন্টারনেট ও অর্থনৈতিক বলয় থেকে বের হয়ে টিকে থাকার এটাই বিকল্প পথ হতে পারে।

ট্যাকের মতে, একটি বিকল্প অর্থনৈতিক বলায় তৈরিতে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে যোগ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট আগ্রহী দেশ আছে।

চীনের গ্রেটওয়ালের (মহাপ্রাচীর) অনুকরণে দেশটির ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল অব চায়না’। ছবি: রয়টার্স
চীনের গ্রেটওয়ালের (মহাপ্রাচীর) অনুকরণে দেশটির ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে বলা হচ্ছে ‘গ্রেট ফায়ারওয়াল অব চায়না’। ছবি: রয়টার্স

রাজনৈতিক প্রভাব
নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরিতে রাশিয়া, ইরান ও চীনের মতো দেশের প্রচেষ্টার রাজনৈতিক প্রভাব গভীর হবে বলে মত দিয়েছেন বিশ্লেষকেরা। এ বিষয়ে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’ একটি সম্পাদকীয় লিখেছে। সংবাদমাধ্যমটি আশঙ্কা করছে, খুব দ্রুতই বিশ্ব হয়তো কয়েক ভাগে বিভক্ত ইন্টারনেট ব্যবস্থা দেখতে চলেছে। তাদের আশঙ্কা, মুক্ত ইন্টারনেটের পরিবর্তে এই ধরনের ব্যবস্থা মানবাধিকার লঙ্ঘনে ব্যবহার হতে পারে। ইন্টারনেটে সার্বভৌমত্ব অর্জন রাষ্ট্রগুলোকে একই সঙ্গে নাগরিকদের ওপর অতিমাত্রায় নজরদারি করার ক্ষমতা দেবে। এতে সংকুচিত হয়ে পড়বে নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা।

মুক্ত ইন্টারনেট ক্যাম্পিং প্রতিষ্ঠান ওপেন রাইট গ্রুপের মারিয়া ফ্যারেল বলেন, রাশিয়া ও চীনের এই পদক্ষেপে অন্যান্য দেশেও উদ্বুদ্ধ হবে। বিশেষত, জিম্বাবুয়ে, জিবুতি ও উগান্ডার মতো দেশগুলো এই প্রকল্পের অংশ হতে চাইবে।

নিউ আমেরিকা ফাউন্ডেশনের একটি গবেষণায় ৫০টি রাষ্ট্রের কথা উঠে এসেছে যারা ইন্টারনেট নিয়ে বিকল্প কিছু করার কথা ভাবছে। এই রাষ্ট্রগুলোকে নাম দেওয়া হয়েছে ‘ডিজিটাল ডিসাইডার’। এর মধ্য রয়েছে, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইসরায়েলের মতো দেশ। আগামীর ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিয়ে এই দেশগুলোর সামনে এখন দুটো পথ আছে। একটি, বিদ্যমান বৈশ্বিক মুক্ত ইন্টারনেট। অন্যটি, সার্বভৌম ও নিয়ন্ত্রিত ইন্টারনেট। মোগেস বলছেন, যদি রাশিয়া ও ইরান নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় সফল হয়, তাহলে এই ‘ডিজিটাল ডিসাইডার’ রাষ্ট্রগুলো নিজস্ব ইন্টারনেট ব্যবস্থা গড়তে উদ্যোগী হতে পারে।

অয়ার্ড বলছে, যদি রাশিয়া ও ইরান তাদের চেষ্টায় সফল হয়, তাহলে ভবিষ্যতে এমন এক ইন্টারনেট ব্যবস্থা তৈরি হবে যেটার সঙ্গে বর্তমানের কোনো কিছুরই তুলনা চলে না। এই প্রচেষ্টটার পেছনে বিশাল প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ আছে, আছে অনেক অর্থনৈতিক বিষয়, তবে নিজস্ব ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠার পথ একেবারে অসম্ভব নয়।