মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরানের তেল রপ্তানি বাড়ছে

ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুল নাসের হেম্মাতি। ছবি: সংগৃহীত
ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুল নাসের হেম্মাতি। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত মে মাসে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তখন মনে করা হচ্ছিল, দেশটির তেল রপ্তানিতে ভাটা পড়বে। আর এর প্রভাব পড়বে জাতীয় আয়ে। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বজায় থাকা সত্ত্বেও ইরানের তেল রপ্তানি না কমে দিন দিন বাড়ছে। ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুল নাসের হেম্মাতি এমনটাই দাবি করেছেন। তাঁর মতে, তেহরানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

ইরান নিউজ ডেইলি ও পার্স টুডের খবরে জানানো হয়, গতকাল বুধবার ছিল ইরানের মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আবদুল নাসের হেম্মাতি বলেন, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান মার্কিন প্রতিরোধের চূড়াকে ছাড়িয়ে গেছে। তেল বিক্রি বন্ধ করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধ সত্ত্বেও তেল রপ্তানির প্রবণতা দিন দিন বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইলেও ইরানের তেল বিক্রি শূন্যের কোঠায় নামেনি।’ হেম্মাতি বলেন, নিষেধাজ্ঞাকে ব্যবহার করে মার্কিনরা যা যা করা দরকার, তারা তা তা করলেও নিষেধাজ্ঞা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে।

গত সোমবার ট্রাম্প ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। ইরানের ‘আক্রমণাত্মক আচরণের’ জবাবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানান তিনি। ইরানের প্রধান নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ কয়েকজন শীর্ষ ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে ট্রাম্প দাবি করেন, এই ব্যক্তিরা ওই অঞ্চলের যুদ্ধাবস্থার জন্য দায়ী।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বিশাল সম্পদের জোগান রয়েছে, যা দিয়ে তিনি ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর শাখা ইসলামিক রেভুল্যুশন গার্ড কোরকে (আইআরজিসি) অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন।

আবদুল নাসের হেম্মাতি বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে মুদ্রাবাজারেও ইরান কোনো সমস্যায় পড়েনি।

ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও বহুবার এ ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে গত বছরের ৫ নভেম্বর ইরানের ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে জুনে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি সই করা দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র নাম প্রত্যাহার করে নেয়। এরপর থেকেই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা শুরু হয়।

২২ এপ্রিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের তেল বিক্রি একেবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, মে মাস থেকে ইরানের কাছ থেকে কোনোও ক্রেতা কোনো তেল কিনতে পারবেন না। মার্কিন সরকার হুমকি দেয়, কোনো দেশ ইরান থেকে তেল কিনলে নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে হবে। কিন্তু গতকাল ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আবদুল নাসের হেম্মাতি বলেছেন, মার্কিন প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে।

২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তিতে সই করা অন্য পাঁচটি দেশ হচ্ছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, রাশিয়া ও চীন। আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ব্যাপারে এই দেশগুলো কোনো ব্যবস্থা না নিলে চুক্তি ভঙ্গ করে ইউরেনিয়াম উৎপাদনের সীমা লঙ্ঘন করবে বলেও হুমকি দিয়েছে ইরান।

ইরান মার্কিন স্বার্থে হামলা করতে পারে—নিজ দেশের এমন গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত মাসে ইরানকে লক্ষ্য করে মধ্যপ্রাচ্যে রণসাজে সজ্জিত হয় যুক্তরাষ্ট্র। তবে গত মে মাসে সংযুক্ত আরব আমিরাতে চারটি ট্যাংকারে হামলা এবং জুন মাসে ওমান উপসাগরীয় এলাকায় জাপান ও নরওয়ের মালিকানাধীন দুটি তেলবাহী ট্যাংকারে হামলার ঘটনায় ইরানকে দায়ী করে মধ্যপ্রাচ্যে আরও এক হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। সবশেষ গত বৃহস্পতিবার মার্কিন সামরিক ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনায় পরদিন ইরানে পাল্টা হামলা চালানোর সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে তা বাতিল করেন ট্রাম্প।

তবে ড্রোন ভূপাতিত করার ঘটনা ছাড়া বাকি অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে ইরান।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, এটা প্রতীকী। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে বিলিয়ন বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিমাণের সম্পদ খোয়াতে হবে ইরানকে।

ট্রাম্প বলেন, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আয়াতুল্লাহ খামেনি, তাঁর কার্যালয়, তাঁর ঘনিষ্ঠ সহচর এবং খামেনির অর্থনৈতিক উৎস ও সহায়তার মূল জোগানের জায়গাগুলো বাধাগ্রস্ত হবে।