উ. কোরিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা এগোতে পারে যেভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার তৃতীয় দফা বৈঠকের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ছবি: রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার তৃতীয় দফা বৈঠকের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। ছবি: রয়টার্স।

উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচিতে গতি আনতে পারে নানা বাণিজ্যিক প্রকল্প। লাখ লাখ ডলারের এ প্রকল্পগুলোর সহায়তায় উত্তর কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক আলোচনা এগিয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ কোরিয়ার উত্তর কোরিয়াবিষয়ক প্রধানের বরাতে আজ বৃহস্পতিবার রয়টার্সের খবরে এ কথা জানানো হয়।

দুই কোরিয়া একত্রীকরণবিষয়ক মন্ত্রী কিম ইয়ং-চুল বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতা কিম জং-উন তৃতীয় সম্মেলনের ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে বেশ আশাবাদী। তবে এ নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন সেই কর্মকর্তাদের মধ্যে অবিশ্বাস রয়েছে। তাই সংলাপ ব্যাহত হচ্ছে। এর আগে কিম জং-উন এবং ট্রাম্পের মধ্যে দুই দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে কোনো সর্বসম্মত চুক্তি ছাড়াই ভেস্তে যায় হ্যানয়ের দ্বিতীয় দফার আলোচনা। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ইতি টানতে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি কীভাবে ঢেলে সাজানো যায়, তা নিয়ে দুই পক্ষ কোনো মীমাংসায় আসতে পারেনি।

কিসং শিল্প চত্বর এবং মাউন্ট কুমগাং ট্যুরের স্থগিত থাকা দুটি প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে কিম ইয়ং-চুল জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনা করতে এই প্রকল্পগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। উত্তর কোরিয়াকে পারমাণবিক শক্তিচ্যুত করতে প্ররোচিত করার জন্য সাধারণত সমঝোতা প্যাকেজ তৈরি করা হয়। তাদের সামনে কিসং এবং কুমগাং মাউন্ট প্রকল্পকে উদাহরণ হিসেবে রাখা যেতে পারে। উত্তর কোরিয়ায় আরও বেশি কাজের ক্ষেত্র তৈরির জন্য এটি বেশি কার্যকর হবে বলে মনে করেন ইয়ং-চুল।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি। এদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় গত এক দশকের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশটির মৃতপ্রায় অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত করতে ‘শান্তিপূর্ণ অর্থনীতি’ চালু করার উদ্যোগ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইন। স্থগিত প্রকল্প দুটি চালু করার মাধ্যমে মুন জে-ইন কোরীয় উপদ্বীপের অর্থনীতি চাঙা করতে চাইছেন। সারা বিশ্বে কেবল কোরিয়াতেই একত্রীকরণ মন্ত্রণালয় চালু রয়েছে। পূর্বসূরিদের শান্তি উদ্যোগ সমালোচিত হওয়ার পর বিষয়টি দেখাশোনার জন্য গত এপ্রিল মাসে কিম ইয়ং-চুলকে নিয়োগ দেওয়া হয়।

গতকাল বুধবার দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন বলেন, উত্তর কোরিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সম্ভাব্য তৃতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। উত্তর কোরিয়ার দশক পুরোনো অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে কার্যকর আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াশিংটন।

কিম ইয়ং-চুল বলেন, ট্রাম্প এবং কিম জং-উনের মধ্যে তৃতীয় দফা বৈঠক শুধু বিশ্বাসের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যেতে পারে। শুধু শীর্ষ দুই নেতাই নয়, প্রান্তিক পর্যায় থেকে যে কর্মকর্তারা কাজ করছেন, তাঁদের আন্তরিকতাও ভীষণ জরুরি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক দ্বন্দ্ব থাকলেও চীন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। পিয়ংইয়ংয়ের জন্য এই দুই পরাশক্তির সহায়তা প্রয়োজন বলে মনে করেন একত্রীকরণবিষয়ক মন্ত্রী। তিনি বলেন, হ্যানয় বৈঠক থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উভয় পক্ষের প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র এবং উত্তর কোরিয়ার সমঝোতা দ্বিতীয়বারের মতো বিফল হতে দেওয়া যাবে না।

আজ বৃহস্পতিবার কোরিয়ার শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে একটি সম্মেলনের আয়োজন করে বার্তা সংস্থা ইয়নহ্যাপ। সেখানে রয়টার্স, এএফপি, এপি, ইয়নহ্যাপ, কিয়োডো, জিনহুয়া এবং তাসের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে এক গোলটেবিল বৈঠকে মতবিনিময় করেন কিম ইয়ং-চুল।