বিধানসভায় মমতার মন্তব্যে খেপেছেন বিরোধীরা

বিধানসভা অধিবেশনে বাম দল-কংগ্রেসের অধিবেশন বর্জন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বিধানসভা অধিবেশনে বাম দল-কংগ্রেসের অধিবেশন বর্জন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দেওয়া মমতার বক্তব্যকে বিকৃত করার অভিযোগ এনে কলকাতার তিনটি সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ দিল তৃণমূল। গতকাল বৃহস্পতিবার দলটি দাবি করে, মুখ্যমন্ত্রী কোনো কংগ্রেস-তৃণমূলের সঙ্গে জোটের কথা বলেননি। সাম্প্রতিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে একসঙ্গে প্রতিবাদ করার কথা বলেছেন।

ঘটনার শুরু গত বুধবার। রাজ্য বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন ভাষণে মমতা বিরোধীদলীয় নেতা কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান এবং সিপিএমের পরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে আসা দরকার। সিপিএম আমার সঙ্গে ঝগড়া করতে পারে। কংগ্রেস আমার সঙ্গে ঝগড়া করতে পারে। কিন্তু দেশটা ওরা ভেঙে তছনছ করে দেবে, তা আমি বিশ্বাস করি না। এ রাজ্যে বিজেপি ছাড়া সব দল সৎ। কয়েকটা আসন দখল করে ভাববেন না যে কেউ পালাবে। বিজেপিকে উৎখাত করবই।’

মমতা বলেন, ‘বিজেপি সব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করছে। ধর্মীয় উন্মাদনা বাড়াচ্ছে। বিভেদ সৃষ্টি করছে। বিজেপিকে ভোট দিলে কী হয়, তার উদাহরণ ভাটপাড়া। একটা ভাটপাড়া দেখে নিন। বিজেপিকে ভোট দিলে কী হয় বুঝে নিন।’

রাজ্য বিধানসভার অধিবেশনে মমতার এই মন্তব্যে হতবাক হয়ে যান বিরোধীরা। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রশ্ন ওঠে, মমতার কি তবে বোধোদয় হলো? মমতা কি বুঝতে পারছেন, তিনিই খাল কেটে কুমির এনেছেন? ধর্মান্ধ দল বিজেপির উত্থানের অন্যতম কারিগর তিনি? তাঁর পায়ের তলের মাটি কি সরে যাচ্ছে? বিধানসভাতেই মুখ খোলেন বিরোধীরা।

বিজেপি নেতা মুকুল রায় মমতার এই মন্তব্যের পর বলেন, এবার তাহলে মমতাই স্বীকার করলেন বিজেপিকে রোখা তাঁর একার পক্ষে সম্ভব নয়। বিজেপিই পশ্চিমবঙ্গের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। তাই তিনি কংগ্রেস, সিপিএমকে নিয়ে এক জোট হতে চাইছেন। এটাও প্রমাণ হয়ে গেল, তৃণমূল এখন ক্ষয়িষ্ণু শক্তি।

রাজ্য বিধানসভার বাম পরিষদীয় দলের নেতা সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘তৃণমূল ডুবন্ত নৌকা। আমরা সবাই মমতার পাশে দাঁড়াব, এমন দিবাস্বপ্ন দেখবেন না। বাম ফ্রন্টের কোনো বিকল্প নেই। আর এই বিজেপির শ্রীবৃদ্ধির নেপথ্যে রয়েছেন এই মমতাই। তিনিই বিজেপির বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী।’

বিরোধীদলীয় নেতা ও কংগ্রেস বিধায়ক আবদুল মান্নান বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবে রাজি হওয়ার কোনো কারণ নেই। তৃণমূলের সঙ্গে জোটেরও কোনো সম্ভাবনা নেই। এ রাজ্যে বিজেপির বৃদ্ধির জন্য তৃণমূল দায়ী। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত এর জন্য ক্ষমা চাওয়া।

পরে বিধানসভায় তৃণমূলের নেতা বিধায়ক তাপস রায় এ নিয়ে মমতার প্রকৃত বক্তব্য পেশ করতে গেলে বিতর্ক বাধে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস-বাম দলের বিধায়কদের। একপর্যায়ে এর প্রতিবাদে অধিবেশন বর্জন করে বাম-কংগ্রেস দল।

মমতার ওই বক্তব্য কলকাতার সব সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ পায়। এরপরই গতকাল বৃহস্পতিবার তৃণমূলের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতার ওই বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রকাশ করেছে কলকাতার সংবাদপত্রগুলো। তৃণমূলের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী সাম্প্রতিক রাজনীতির পরিপ্রেক্ষিতে একসঙ্গে প্রতিবাদ করার কথা বলেছেন।

এরপর কলকাতার তিনটি বাংলা দৈনিককে স্বাধিকার ভঙ্গের নোটিশ দেয় তৃণমূল কংগ্রেস ।

তৃণমূলের পরিষদীয় দলের এক নেতা বলেন, যেসব সংবাদপত্র খবরটি প্রথম পাতায় ছেপেছে, তাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হচ্ছে। যেসব সংবাদপত্র খবরটি ভেতরের পাতায় ছেপেছে, বুঝতে হবে তারা খবরটিকে গুরুত্ব দেয়নি। তাই তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে না।