পশ্চিমবঙ্গের নাম 'বাংলা' না হওয়ায় ক্ষুব্ধ তৃণমূল

মেটা: প্রায় এক বছর হতে চলল। পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’ হলো না। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় গত বছরের ২৬ জুলাই সর্বসম্মতিক্রমে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল করে ‘বাংলা’ রাখার প্রস্তাব পাস হয়। তারপর সেই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। আজ অবধি সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে, বাংলা নামের সেই ঐতিহাসিক প্রস্তাব এখন দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের হিমঘরে পড়ে আছে। অনুমোদন মিলছে না।

প্রায় এক বছর হতে চলল। পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’ হলো না। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় গত বছরের ২৬ জুলাই সর্বসম্মতিক্রমে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল করে ‘বাংলা’ রাখার প্রস্তাব পাস হয়। তারপর সেই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে। আজ অবধি সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। ফলে, বাংলা নামের সেই ঐতিহাসিক প্রস্তাব এখন দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারের হিমঘরে পড়ে আছে। অনুমোদন মিলছে না।

এতে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে তৃণমূলের মধ্যে। আর সেই ক্ষোভের ছবি ফুটে উঠেছে রাজ্যসভার তৃণমূল সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়ের কণ্ঠে। গত বুধবার তিনি রাজ্যসভায় অধিবেশনে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘অবিলম্বে কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গের নাম “বাংলা” করার পক্ষে অনুমোদন দিন।’

অনুমোদন না মিললেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গের বদলে ‘বাংলা’ নাম ব্যবহার। নতুন করে ধ্বনি দেওয়াও শুরু করেছে ‘জয় বাংলা’। রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভা–সমাবেশে জয় বাংলা ধ্বনি দিতে শুরু করেছেন।

পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন নিয়ে রাজ্য মন্ত্রিসভায় ২০১৬ সালের ২ আগস্ট দুটি নামের প্রস্তাব গৃহীত হয়। বাংলা ও বঙ্গ। তবে অধিকাংশের মত ছিল ‘বাংলা’ নামের পক্ষে। সেই নামকেই অনুমোদন করেন মমতা। তারপর তা পেশ করেন বিধানসভার বিশেষ অধিবেশনে। যদিও তখনই ‘বাংলা’ নাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল রাজনৈতিক মহলে। কেউ কেউ বলেছেন, আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। রাজ্যের নাম বাংলা হলে সমস্যা হতে পারে। তাই এই প্রসঙ্গে মমতা আগেই জানিয়ে দেন, ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল ঠিকই আছে। পাশে বাংলাদেশ তো একটা দেশ। আর রাজ্যের নাম বাংলা হলে অসুবিধা কোথায়? পাকিস্তানেও পাঞ্জাব আছে, আমাদের দেশেও পাঞ্জাব আছে।’

২০১৭ সালের ২৯ আগস্ট রাজ্য বিধানসভায় পশ্চিমবঙ্গের নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব পাস হলেও সেখানে বলা হয়েছিল, ইংরেজিতে এই নাম হবে ‘বেঙ্গল’ আর হিন্দিতে হবে ‘বাঙ্গাল’। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় নাম পরিবর্তনের এই প্রস্তাব বিপুল ভোটের ব্যবধানে পাস হয়ে যায়। প্রস্তাবের পক্ষে পড়ে ১৮৯ ভোট আর বিপক্ষে পড়ে ৩১ ভোট। কিন্তু গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার এক চিঠিতে জানায়, যে নামই হোক না কেন তা একটিই হতে হবে। বিভিন্ন ভাষাতেও একই নাম রাখতে হবে। ফলে, রাজ্য সরকার তিন ভাষাতেই ‘বাংলা’ করার সিদ্ধান্ত নেয়।

এরপর গত বছরের ২৬ জুলাই পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার অধিবেশনে এই নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পেশ করা হয়। প্রস্তাব পাসের পর সেদিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘আজ আমাদের কাছে এক ঐতিহাসিক দিন। বাংলা নামের প্রতি আমাদের আবেগ জড়িত। তাই এই রাজ্যের নাম বাংলা হওয়ায় আমরা গর্বিত। আশা করি, রাজ্যবাসীও খুশি। তাই রাজ্যবাসীকে জানাই অভিনন্দন। বাংলা নামে আমরা আজও স্বচ্ছন্দ বোধ করি। তাই আজ এই রাজ্যবাসীর জন্য এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হলো’। মমতা বলেছিলেন, ‘যুগের প্রয়োজনে কখনো সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়। আমরা সেই পথে এগিয়ে আমাদের রাজ্যের নাম বাংলা করেছি। কবিগুরুর নানা লেখায় ফুটে উঠেছে এই বাংলা নামের কথা’।

এরপর এই নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত পাঠানো হয় দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য। রাজ্য সরকার আশা করেছিল, কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত এই নাম পরিবর্তনের অনুমোদন দেবে। তবে গত এক বছরেও সেই অনুমোদন দেয়নি।

এর আগেও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের নাম পরিবর্তন হয়েছে। সংযুক্ত প্রদেশের নাম পরিবর্তন হয়ে হয়েছে উত্তর প্রদেশ, হায়দরাবাদের পরিবর্তে হয়েছে অন্ধ্র প্রদেশ, মধ্য ভারতের নাম হয়েছে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরাঞ্চলের পরিবর্তে হয়েছে উত্তরাখন্ড, উড়িষ্যার পরিবর্তে হয়েছে ওডিশা, ত্রিবাঙ্কুর-কোচিনের পরিবর্তে কেরালা, মাদ্রাজের পরিবর্তে তামিলনাড়ু এবং মহীশূরের পরিবর্তে হয়েছে কর্ণাটক রাজ্য।