জ্যোতি বসু ট্রাস্টের জমির দখল দিতে উদ্যোগী মমতা

জ্যোতি বসু। ফাইল ছবি। ভাস্কর মুখার্জি
জ্যোতি বসু। ফাইল ছবি। ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী বামপন্থী নেতা জ্যোতি বসুর নামে সিপিএমের হাতে গড়া জ্যোতি বসু ট্রাস্টের ৫ একর জমির দখল এবার ট্রাস্টের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য উদ্যোগী হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘ ২৩ বছর একটানা মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু।

গতকাল শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যর পৌরমন্ত্রী কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ওই জমি জ্যোতি বসু ট্রাস্টের নামে বুঝিয়ে দিতে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। আর আগামী ৮ জুলাই জ্যোতি বসুর জন্মদিনের আগে ট্রাস্টের হাতে জমির দখল বুঝে দিতে নির্দেশ দেন মমতা।

২০১০ সালের ১৭ জানুয়ারি জ্যোতি বসুর মৃত্যুর পর সিপিএম জ্যোতি বসুর নামে একটি ট্রাস্ট গঠন করে। এ ট্রাস্টের জন্য তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার কলকাতার উপশহর রাজারহাটের নিউ টাউনে ৫ একর জমি বরাদ্দ করে। এই জমির ওপরই সিপিএম ‘জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোশ্যাল স্টাডিজ আ্যন্ড রিসার্চ’ নামে একটি ভবন তৈরির উদ্যোগ নেয়। বাম আমলের শেষের দিকে এই জমির মালিক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হিডকোকে (দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল হাউজিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন) দুই দফায় ৪ কোটি ১৫ লাখ ৯৩ হাজার ৭৫০ রুপি প্রদানও করে সিপিএম। ওই জমির রেজিস্ট্রিও হয়।

কিন্তু ২০১১ সালে রাজ্যপাটে পালাবদল ঘটে। বামফ্রন্টকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মমতার ক্ষমতায় আসার পর আটকে যায় ওই জমির সিপিএমকে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া। ৮ বছর ধরে এই জমি হিডকোর কাছেই আছে।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক পরাজয় ঘটে মমতার। আর উত্থান ঘটে বিজেপির। এই ফলাফলের পর মমতা বুঝতে পারেন তাঁর পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে। আর শক্তিশালী হচ্ছে বিজেপির পায়ের তলার মাটি। মমতা আরও বুঝতে পারেন, বিজেপিকে রুখতে হলে বামদল এবং কংগ্রেসের প্রয়োজন এই রাজ্যের রাজনীতিতে। তাই মমতা গত বুধবার বিধানসভা অধিবেশনে যোগ দিয়ে রাজ্যপালের ভাষণের ওপর তাঁর ধন্যবাদসূচক বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বলেন, বিজেপি রুখতে কংগ্রেস ও বামদলের সঙ্গে একসঙ্গে আন্দোলন করা উচিত।

এ ঘটনার পর বামফ্রন্টও মনে করছে মমতার বোধদয় হয়েছে। এবারের লোকসভা নির্বাচন মমতাকে সেই পথই দেখিয়েছে। এরপর গতকাল শুক্রবার সিপিএমের তিন নেতা সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেব এবং অশোক ভট্টাচার্য জমি নিয়ে মমতার কাছে দরবার করতে যান। তাঁরা অভিযোগ তোলেন, দীর্ঘ ৮ বছর ধরে রাজ্য সরকার তাঁদের জমির দখল ট্রাস্টকে বুঝে দিচ্ছে না। এরপরই মমতা পশ্চিমবঙ্গের পৌরমন্ত্রী কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে সিপিএমের প্রতিনিধিদের সামনেই নির্দেশ দেন, ৮ জুলাই জ্যোতি বসুর জন্মদিনের আগে এই জমি যাতে জ্যোতি বসু ট্রাস্টের নামে দখল দেওয়া যায় তার ব্যবস্থা নিতে। এমনকি পৌরমন্ত্রীকে জ্যোতি বসু ট্রাস্টের জন্য বরাদ্দকৃত জমি যৌথভাবে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তবে হিডকো বলেছে, এই জমির ছোট্ট একটি অংশ নিয়ে মামলা চলছে। এ প্রসঙ্গে সিপিএম আগেই জানিয়েছিল, প্রয়োজনে ওই অংশটি আপাতত বাদ দিয়ে বাকি জমির দখল দিক রাজ্য সরকার তাদের।