ভারতের 'ভোটগুরু' মমতাকে যে পরামর্শ দিলেন

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়টার্স ফাইল ছবি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়টার্স ফাইল ছবি

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভারতের ’ভোটগুরু’ হিসেবে পরিচিত প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছে। লক্ষ্য, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জেতা। লোকসভা নির্বাচনে ব্যাপক পরাজয়ের পর ভোটগুরুর দ্বারস্থ হয়েছেন মমতা।

গতকাল শনিবার ভোট গুরুর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সচিবালয় নবান্নে দেড় ঘণ্টা বৈঠকও করেন মমতা । সঙ্গে ছিলেন মমতার ভাইয়ের ছেলে ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক রাজ্য তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতিও। বৈঠকের পর একটি চুক্তি সম্পাদন হয় ভোটগুরুর সংস্থার ।

প্রশান্ত কিশোর গোটা ভারতে ’ভোটগুরু’ হিসেবে পরিচিত। গত ২০১৬ সালে মমতার সঙ্গে ভোটগুরুর কথা হলেও মমতা শেষ পর্যন্ত তাঁর সংস্থার সঙ্গে কোনো চুক্তিতে যাননি। এবার তৃণমূলের ব্যাপক পরাজয় এবং বিজেপির উত্থানকে রোধ করা এবং ২০২১ সালে রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে মমতা শরণাপন্ন হন ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোরের । প্রশান্ত কিশোরই ঠিক করবেন আগামী ২০২১ সালে কীভাবে জিতবে তৃণমূল। কী হবে তাদের নির্বাচনী রণকৌশল। এ-সংক্রান্ত নানা পরামর্শ দেবেন তিনি এবং তাঁর সংস্থা। ভোটগুরুর রয়েছে এ সংক্রান্ত একটি সংস্থা ইন্ডিয়ান পলিটিক্যাল অ্যাকশন কমিটি বা আইপিএকে। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা আইপিএকে কাজ শুরু করেছে।

গতকাল প্রশান্তের দেওয়া প্রধান পরামর্শ ছিল, বর্তমানে দলে থাকা চার নেতা-মন্ত্রীকে কালো তালিকাভুক্ত করে তাঁদের অবিলম্বে নিষ্ক্রিয় করে দিতে। সংবাদমাধ্যমে আজ এ-সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রকাশিত হলেও ওই চার নেতা-মন্ত্রীর নাম উল্লেখ করা হয়নি। একসময় তৃণমূলের নেতারা পঞ্চায়েত ভোটে এই রাজ্য বিরোধীশূন্য করার উদ্যোগ নেয়। এটাকে সমর্থন জানাননি ভোটগুরু। এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের কথাও তুলে পরামর্শ দিয়েছেন।

প্রশান্ত যে দাওয়াই দিয়েছেন তাতে বলা হয়েছে, রাজ্যে সংগঠন বাড়াতে তৃণমূলকে পুলিশ এবং প্রশাসনের সাহায্য নেওয়া বন্ধ করতে হবে। দলের কর্মসূচি সম্পর্কে পুলিশ ও প্রশাসনকে আগাম জানানো যাবে না। পুলিশের অন্যায় দেখলে দলীয়ভাবে প্রতিবাদ করতে হবে। আর ১৯৯৮ সাল থেকে দলীয় কর্মীদের বিরুদ্ধে চলা রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করে নিতে হবে। প্রথম পর্যায়ে এই দাওয়াই দিয়েছেন ভোটগুরু।

ভোটগুরুর এই সংস্থা ২০১২ সালে গুজরাটের নির্বাচনে দায়িত্বে থেকে তৃতীয়বারের জন্য মোদিকে ক্ষমতায় আসতে সহযোগিতা করে। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ‘হর হর মোদি, ঘর ঘর মোদি’ আর ’চায়ে পে চর্চা’ স্লোগান তুলে মোদিকে ক্ষমতায় আনার কারিগরে পরিণত হয় এই সংস্থা। ২০১৫ সালে বিহারে নীতিশ-লালু প্রসাদ জোটকে ক্ষমতায় আনতে এ সংস্থার জোর ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়। ২০১৭ সালে ১০ বছর পর কংগ্রেসকে পাঞ্জাবে ক্ষমতায় আসতে ভোটগুরু সহায়তা করেন। আর এ বছর ২০১৯-এ অন্ধ্র প্রদেশের লোকসভা ও রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে ওয়াইএসআর কংগ্রেসের নেতা জগন্মোহন রেড্ডিকে ক্ষমতায় আনার কারিগর হন। অন্ধ্র প্রদেশের ২৪টি লোকসভা আসনের ২২টিতে জেতেন রেড্ডি। আর বিধানসভার ১৭৫টি আসনের মধ্যে জেতেন ১৫১টি আসনে।