এ এক 'বিস্ময়কর ঘটনা': উত্তর কোরিয়া

আকস্মিক সফরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স
আকস্মিক সফরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং–উনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল রোববার আকস্মিকভাবে এক পাক ঘুরে এলেন উত্তর কোরিয়ায়। দেশটির পারমাণবিক কর্মসূচির ঘোর বিরোধী বলে ট্রাম্প দেশটির চোখের বালি। কিন্তু তাঁর সফরে দেশজুড়ে যে বাহবা পড়ে যায়, এতে কে বলবে ট্রাম্প তাদের শত্রু। ট্রাম্পের এ সফরকে তারা ‘বিস্ময়কর ঘটনা’ বলে অভিহিত করে।

আজ সোমবার ওই অভূতপূর্ব বৈঠকের ব্যাপক প্রচার করেছে কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সিসহ (কেসিএনএ) সব মিডিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বলছে, ‘ট্রামের পরামর্শে’ ওই বৈঠক ‘ঐতিহাসিক’ ছিল।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বলছে, ৬৬ বছর আগে কোরীয় যুদ্ধের অবসানের দিন, ‘আর্মিস্টিস চুক্তির’ দিন এমন অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছিল। উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতারা ওই দিন ঐতিহাসিক বৈঠক করেছিলেন। এবার দুই কোরিয়ার সীমান্তে পানমুনজমে কিম জং–উনের সঙ্গে ট্রাম্পের ‘হ্যান্ডশেকের’ মাধ্যমে আরেকটি ঐতিহাসিক দিন এল।

দুই কোরিয়ার সীমান্তে পানমুনজমের অসামরিকায়িত অঞ্চলে গতকাল রোববার ট্রাম্প-কিম সাক্ষাৎ হয়। উত্তর কোরিয়ায় প্রবেশের পর কিমের সঙ্গে হাত মেলান এবং কিছু সময় সেখানেই তাঁর সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। এরপর কিমকে সঙ্গে নিয়ে ফেরেন দক্ষিণ কোরিয়ায়। পানমুনজমে ট্রাম্প-কিম তৃতীয় বৈঠক হয়। এর আগে কোরীয় উপদ্বীপে পারমাণবিক উত্তেজনার মধ্যেই গত বছরের জুনে সিঙ্গাপুরে এবং গত ফেব্রুয়ারিতে ভিয়েতনামের হ্যানয়ে দুই নেতার বৈঠক হয়। তবে ওই দুই বৈঠক ছিল পূর্বনির্ধারিত এবং পরিকল্পিত। সে তুলনায় এবারের বৈঠকটির আয়োজন করা হয়েছে সংক্ষিপ্ত সময়ে। জি-২০ সম্মেলন শেষে দক্ষিণ কোরিয়ায় যাওয়ার সময় টুইটারে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিমের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে। কিমও সে আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন। গতকাল স্থানীয় সময় বেলা ৩টা ৪৫ মিনিটে বৈঠকে বসেন ট্রাম্প ও কিম। এর আগে দুই কোরিয়ার সীমান্তে দাঁড়িয়ে কুশলবিনিময়ের সময় কিমের কাছে ট্রাম্প জানতে চান, ‘আমি কি উত্তর কোরিয়ায় যেতে সীমান্ত অতিক্রম করতে পারি?’ উত্তরে কিম বলেন, ‘এটা করলে আমি সম্মানিত হব।’ উত্তর কোরিয়ার মাটিতে পা রেখে ট্রাম্প বলেন, বিশ্বের জন্য এটি একটি ঐতিহাসিক দিন। এ সময় ট্রাম্পকে পিয়ংইয়ং সফরের আমন্ত্রণ জানান কিম।

এরপর ট্রাম্প-কিম একসঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়ায় ফিরে ফ্রিডম হাউসে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জে-ইনের সঙ্গে বৈঠকে যোগ দেন। তিন নেতার বৈঠকের পর কিমের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে বসেন ট্রাম্প। ৪০ মিনিট স্থায়ী হয় ওই বৈঠক। বৈঠকের পর কিম ও মুনকে নিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, উত্তর কোরিয়ার মাটিতে পা রাখার আবদারে কিম কী বলবেন, সেই বিষয়ে তিনি আগে থেকে কিছু জানতেন না। সীমান্ত অতিক্রম করতে পেরে তিনি গর্বিত। বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি কিমকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় তিনি উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ নেতাকে হোয়াইট হাউস সফরের আমন্ত্রণ জানান। তবে পরে ট্রাম্প স্বীকার করেন, কিমের ওই সফর খুব শিগগির হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বৈঠক শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার ওসান বিমানঘাঁটিতে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট। সেখানে তিনি বলেন, পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে আবার আলোচনা শুরু হবে।