বিশ্ব অর্থনীতির নিম্নমুখী যাত্রার ঝুঁকি হ্রাসে জি-২০ নেতারা সম্মত

বাণিজ্যবিরোধ ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সংস্কার নিয়ে নেতাদের একমত হতে ব্যর্থতার কারণে বিশ্ব অর্থনীতির নিম্নমুখী যাত্রার ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এই ঝুঁকি হ্রাসে কাজ করতে সম্মত হয়েছেন বিশ্বের প্রধান অর্থনীতির নেতারা। তবে এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ কী হবে, তা নিয়ে মতপার্থক্য এখনো রয়ে গেছে।

পশ্চিম জাপানের ওসাকা শহরে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের শেষ দিনের অধিবেশনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সম্পদের ফারাক কমিয়ে আনার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন বিশাল সুবিধা নিয়ে এসেছে। শিল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সম্পদের ফারাক বৃদ্ধি পেতে থাকা নিয়ে উদ্বেগ রয়ে গেছে। এ সমস্যা মোকাবিলা করে প্রবৃদ্ধির ফল সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া দরকার।

শেষ দিনের অধিবেশনে জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রে প্লাস্টিক–দূষণের মতো সমস্যা নিয়ে নেতারা আলোচনা করেন।

দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনের সমাপ্তি টেনে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বলেন, বিশ্বের জটিল সব সমস্যা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আলোচনার মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেছেন নেতারা। এ বিষয়টিকে ওসাকার চেতনা হিসেবে আখ্যায়িত করেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে ঐক্যবদ্ধভাবে সমাধান খুঁজে বের করার পথ দেখিয়ে দেবে এই চেতনা।

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি টানার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রী এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন। তিনি ওসাকা শীর্ষ সম্মেলনকে সফল বলে আখ্যায়িত করেন। বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে, তা মোকাবিলায় প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো একসঙ্গে কাজ করে যেতে সম্মত হয়েছে। সম্মেলনের বাইরে নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন বৈঠকেও এই চেতনার প্রতিফলন লক্ষ করা গেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যকার শীর্ষ বৈঠকের প্রসঙ্গ টানেন।

জাপানের প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, প্রবৃদ্ধির ফলাফল বিশ্বসমাজের সব সদস্যের মধ্যে ভাগাভাগি করে দেওয়া দরকার। জি-২০ নেতারা সেই লক্ষ্যে উন্নয়নশীল বিশ্বে শিক্ষাবিস্তারে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছেন।

পরিবেশ সমস্যার বিষয়ে শিনজো আবে মূলত সমুদ্রের প্লাস্টিক দূষণের বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সাগরে প্লাস্টিক বর্জ্য জমা হওয়ার সমস্যা সমাধানে জাপানের পেশ করা ‘নীল সমুদ্র রূপকল্প’ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা সমর্থন করেছে। সমস্যার সমাধানে প্রতিটি দেশের নিজস্ব উদ্যোগকেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ আখ্যায়িত করেন।

তথ্য ও উপাত্তের অবাধ প্রবাহের গুরুত্ব তুলে ধরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন উদ্ভাবন দ্রুত সব পরিবর্তন নিয়ে আসছে বিশ্বসমাজে। এ বিষয়ে নতুন একগুচ্ছ নিয়মাবলি ঠিক করার এখনই উপযুক্ত সময়। সেদিক থেকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সংস্কারকেও তিনি অবশ্যম্ভাবী বলে উল্লেখ করেন।

সম্মেলনের শেষে প্রচারিত ঘোষণায় বিশ্ব অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, আর্থিক ব্যবস্থা, দুর্নীতি প্রতিরোধ, শ্রম ও চাকরির সুযোগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, নারীর ক্ষমতায়ন, কৃষি, পর্যটন, স্বাস্থ্য সমস্যা, পরিবেশদূষণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জোটের অবস্থান তুলে ধরা হয়। ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন দেশের অবস্থানগত ভিন্নতার বিষয়টি জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার আগেই প্রকাশ পেয়েছিল। ফলে চূড়ান্ত ঘোষণা যে অনেকটা তারল্য-ভরা দলিল হয়ে উঠবে, সে ধারণা অনেকেই করেছিলেন। বাস্তবেও সেটাই ঘটতে দেখা গেছে।