জি-২০ সম্মেলনে ওসাকাবাসীর ভোগান্তি

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ভেন্যু ওসাকা। ছবি: প্রথম আলো
জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের ভেন্যু ওসাকা। ছবি: প্রথম আলো

বড় বড় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন অনেক ক্ষেত্রেই স্বাগতিক দেশের জনজীবন নানাভাবে বিঘ্নিত করে। কারণ এ ধরনের সম্মেলন উপলক্ষে দেশের নাগরিকদের চলাচল সীমিত করে দেওয়া হয়। যানজটও দেখা দেয়। এবারের জাপানের আয়োজিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনও এর প্রভাব দেখা গেছে।

আজকাল অবশ্য ভোগান্তি এড়াতে জনবহুল শহরগুলো থেকে দূরে অবস্থিত অবকাশকেন্দ্রগুলোতে সমাবেশ আয়োজনের প্রবণতা দেখা যায়। গত দুই দশকে জাপানের আয়োজিত তিনটি জি-৭ ও জি-৮ সম্মেলনের সবই হয়েছিল রাজধানী টোকিও কিংবা অন্য বড় শহরগুলো থেকে অনেকটা দূরের জায়গাগুলোতে। এতে সম্মেলনে যোগ দেওয়া প্রতিনিধি ও সংবাদ সংগ্রহের জন্য সমবেত সাংবাদিকদের কিছুটা অসুবিধা হয়। তবে নাগরিক জীবন ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।

জাপানের ওসাকার জনসংখ্যা ২৭ লাখের বেশি। ওসাকা পশ্চিম জাপানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক কেন্দ্র। জাতীয় রাজনীতিতেও ওসাকা এবং কানসাই অঞ্চলের বড় প্রভাব আছে। জি-২০ সম্মেলনে তাই ওসাকার নাগরিক জীবন ভোগান্তিতে পড়েছে।

জি-২০ উপলক্ষে ওসাকায় ২৭টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানের বাইরে আরও ১০টি আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রধানেরা সমবেত হয়েছিলেন। আর সেই দলে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকায় অতিথিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ওসাকার জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারভিত্তিক কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এর বাইরে অতিথিদের সুবিধার বিষয়টিও খেয়াল রাখা দরকার হয়ে পড়েছিল।

জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে ওসাকা ও আশপাশের এলাকায় কড়া নিরাপত্তা জারি করা হয়। শহরের এক প্রান্তে ওসাকা উপসাগরে সমুদ্র ভরাট করে তৈরি হওয়া সাকিশিমা দ্বীপে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে শহরের আরও কয়েকটি জায়গায় অন্যান্য কিছু কর্মসূচিও হাতে নেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতা ও তাঁদের সফরসঙ্গীরা এসব কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। অতিথিদের জন্য নির্বিঘ্ন চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে শহরের অনেক পথেই যানবাহন চলাচল সীমিত অথবা বন্ধ রাখা হয়। ওসাকাবাসীদের প্রতি বিকল্প পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে পাতাল রেল কিংবা কমিউটার ট্রেন ব্যবহারের অনুরোধ জানানো হয়। এর বাইরে শহরের প্রায় সব জায়গায় পুলিশের উপস্থিতি ছিল। নাগরিকদের যখন-তখন পরিচয়পত্রও দেখাতে বলা হচ্ছিল।

সাকিশিমা দ্বীপের প্রায় পুরোটাই সম্মেলন চলাকালে সাধারণের জন্য নিষিদ্ধ স্থান হয়ে উঠেছিল। এমনকি কাছাকাছি জায়গায় থাকা অফিস ও দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। এর বাইরে ওসাকা শহরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশও সরকারের কাছ থেকে এসেছিল। সবকিছু মিলিয়ে ওসাকাবাসীদের বিশেষ করে সম্মেলনের ভেন্যুর কাছাকাছি জায়গার অধিবাসীদের জন্য জি-২০ হয়ে উঠেছিল এক বিড়ম্বনা।

অনেকেই বলছেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতাসীন উদার গণতান্ত্রিক দলের স্বার্থ রক্ষা করতে রাজনৈতিক চাল হিসেবে ওসাকায় এই সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও তাঁর কাছের লোকজন হয়তো মনে করেছিলেন, বড় আকারের একটি আন্তর্জাতিক সমাবেশ ওসাকায় নিয়ে আসার চমকের মধ্যে দিয়ে স্থানীয় ভোটারদের জয় করে নেওয়া যাবে। হারানো জনসমর্থন ফিরে পেতে বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলকে সাহায্য করবে।

তবে সম্মেলনের কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয় ওসাকাবাসীকে। বিদেশ থেকে আসা পর্যটকদেরও যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে। কখনো কখনো হেঁটে কোনো কোনো জায়গায় যেতে হয়েছে। সম্মেলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে আসা সংবাদকর্মীরাও কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়েন।