পশ্চিমবঙ্গে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা

পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন এক ব্যবসায়ী। কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করা ওই ব্যবসায়ীর নাম সন্দীপ আগরওয়াল। পশ্চিমবঙ্গে শাসক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ঘুষ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ নিয়ে আলোচনা যখন তুঙ্গে, তখনই এ মামলা হলো।

গতকাল মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাক এই মামলার শুনানি শেষে দুপক্ষকে চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতে হলফনামা পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন।

বাদীর আইনজীবী উদয় ঝাঁ আবেদনে জানিয়েছেন, সন্দীপ আগরওয়ালের একটি পারিবারিক ঘটনার মীমাংসা জন্য তাঁর কাছে দাবি করা হয়েছিল ৩০ লাখ রুপি। এ জন্য সন্দীপকে কলকাতার বিধাননগর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুভাষ বসুর দপ্তরে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। সেখানেই ওই অর্থ দাবি করা হয়ে। তবে সন্দীপ ওই টাকা দিতে রাজি হননি। এরপর তিনি বাগুইহাটি থানায় এ নিয়ে মামলা করতে যান। তবে ওই থানায় সন্দীপকে একটি অঙ্গীকার পত্রে স্বাক্ষর করাতে বাধ্য করা হয়। ওই অঙ্গীকারপত্রে উল্লেখ ছিল, সন্দীপকে ২০ লাখ রুপি দিতে হবে। আর এ কাজের পেছনের প্রধান শক্তি ছিলেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তাঁর ব্যক্তিগত সচিব, বিধানগরের সাবেক পুলিশ কমিশনারসহ ১৮ জন।

আইনজীবী ঝাঁ আরও বলেন, সন্দীপের স্বাক্ষর নেওয়ার সময় থানার সিসিটিভি বন্ধ রাখা হয়। তবুও তাঁর কাছে মন্ত্রী, ব্যক্তিগত সচিবসহ থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের ফোনালাপের রেকর্ড আছে। প্রয়োজনে ওই ফোনালাপের রেকর্ড তিনি আদালতে পেশ করতে রাজি আছেন।

এর আগে, ঘুষ ও চাঁদাবাজি নিয়ে তৃণমূলের নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি দলের জনপ্রতিনিধিদের এক সভায় দলের শুদ্ধি অভিযানের ঘোষণা দেন। দলীয় নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি মমতার কানে পৌঁছানোর পর তিনি এমন কথা বলেন। মমতা সভায় বলেছিলেন, যেসব নেতা-বিধায়ক-সাংসদ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের জন্য ঘুষ গ্রহণ করেছেন, তারাঁ যেন তা অবিলম্বে ফিরিয়ে দেন। না দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্তে নামবেন গোয়েন্দারা।

মমতার এই ঘোষণার পর রাজ্যব্যাপী শুরু হয়ে যায় এই ঘুষ বা কাটমানি ফেরতের দাবিতে জোরদার আন্দোলন। রাজ্যের সর্বত্রই এখন ছড়িয়ে পড়েছে এই আন্দোলন। এই আন্দোলনের জেরে বহু জনপ্রতিনিধির বাড়িতে হামলা হয়েছে। ভাঙচুর হয়েছে। বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। রাস্তায় মিছিল হয়েছে। সড়ক অবরোধ হয়েছে রাজ্যের সর্বত্র। এই আন্দোলনের জেরে শাসক দলের বহু জনপ্রতিনিধি ফিরিয়েও দিয়েছেন ঘুষের টাকা।

পশ্চিমবঙ্গের এই ঘুষ গ্রহণ বা কাটমানি নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার উত্তাল হয়ে ওঠে ভারতের লোকসভার অধিবেশন। এই অধিবেশনে পশ্চিমবঙ্গের সাংসদেরা একহাত নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে। সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় তো সংসদে দাঁড়িয়ে জোরের সঙ্গে বলেন, আজ হাসপাতালে ভর্তি থেকে রোগীর মৃত্যুর পরও নেওয়া হচ্ছে এই কাটমানি। আর এর সঙ্গে জড়িয়ে আছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন লকেটের সঙ্গে যোগ দেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য বিজেপির সভাপতি, সাংসদ দিলীপ ঘোষসহ অন্যান্য সাংসদেরা। লকেট দাবি করেছেন, পশ্চিমবঙ্গে এই ঘুষ বা কাটমানির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছেন মন্ত্রীরাও।