পশ্চিমবঙ্গের 'বাংলা' নাম খারিজ হওয়ায় ক্ষুব্ধ রাজ্যবাসী

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়টার্স ফাইল ছবি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়টার্স ফাইল ছবি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নাম ‘বাংলা’ করার প্রস্তাব মোদি সরকার খারিজ করে দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাজ্যবাসী। এই প্রস্তাব বাতিলের পর রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। রাজ্যের ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল বুধবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়ে রাজ্যবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানোর দাবি জানিয়েছেন।

মঙ্গলবার ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই ভারতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব বাতিলের কথা জানান। সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় জানতে চেয়েছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল করে বাংলা করার বিষয়টি কত দূর এগিয়েছে? জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এখনই পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল করে বাংলা করা হচ্ছে না। এ জন্য প্রয়োজন সংবিধান সংশোধন। আর সংবিধান সংশোধনের বিল এখনো পেশ হয়নি সংসদে। তাই আপাতত পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল হয়ে বাংলা হচ্ছে না।

তবে এই বাংলা নামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ দিলীপ ঘোষ বলেছেন, তাঁরা চান পশ্চিমবঙ্গের নাম পশ্চিমবঙ্গই থাকুক। ফলে এক বছর আগে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় সর্বসম্মতিক্রমে এই রাজ্যের নাম বাংলা করার প্রস্তাব পাস হলেও সেটি বাস্তবায়ন করেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

বাংলা নাম খারিজ করে দেওয়ায় রাজ্যের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কলকাতার বিদ্বজ্জনেরা। তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারকে বাংলার আবেগকে যথাযথ মূল্য দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এই দলে আছেন কথা সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, লেখক নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুরী, নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্র প্রসাদ সেনগুপ্ত, চিকিৎসক কুনাল সরকার, নাট্যকার কৌশিক সেন প্রমুখ।

পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিধানসভায় গত বছরের ২৬ জুলাই সর্বসম্মতিক্রমে পশ্চিমবঙ্গের নাম বদল করে ‘বাংলা’ রাখার প্রস্তাব পাস হয়। তারপর সেই প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেওয়া হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। কিন্তু সেই প্রস্তাব অনুমোদন করেনি কেন্দ্রীয় সরকার। বরং বলে দিয়েছে এই প্রস্তাব পাসের জন্য সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদন না দিলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যে ‘বাংলা’ নাম ব্যবহার করতে শুরু করেছে। নতুন করে ধ্বনি দেওয়া শুরু করেছে ‘জয় বাংলা’। যেহেতু এই রাজ্যের নাম বাংলা করা হয়েছে, সেহেতু রাজ্য সরকার এবং মুখ্যমন্ত্রী থেকে মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক ও তৃণমূলের নেতারা সভা-সমাবেশে ‘জয় বাংলা’ বলতে শুরু করেছেন।

গত বছরের ২৬ জুলাই বিধানসভায় নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব পেশ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রস্তাব পেশ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চেয়েছিলাম পশ্চিমবঙ্গের নাম বাংলায় হবে বাংলা, ইংরেজিতে বেঙ্গল ও হিন্দিতে বাঙাল। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার চাইছে একটি নাম। তাই আমরা বাংলাই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। হিন্দি ও ইংরেজিতেও লিখতে হবে বাংলা।’ তবে তখনই ‘বাংলা’ নাম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল রাজনৈতিক মহলে। কেউ কেউ বলেছেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ। রাজ্যের নাম বাংলা হলে সমস্যা হতে পারে।